আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সিঙ্গাপুরের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী থারমান শানমুগারত্নম দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত অর্থনীতিবিদ থারমান সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক দল পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সাবেক নেতা।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী তান কিন লিয়ান(৭৫) এবং এনজি কোক সং (৭৫) পরাজিত করে এই জয় অর্জন করেছেন তিনি।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এক দশকেরও বেশি সময় পর সিঙ্গাপুরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সর্বোচ্চ ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত থারমান শানমুগারত্নম। থারমান সিঙ্গাপুরের নবম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
ভোটের লড়াইয়ে শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন থারমান। তিনি মিষ্টভাষী, বুদ্ধিমান ও সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য কয়েক মাস আগে তিনি ক্ষমতাসীন পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তখন তাঁর এ সিদ্ধান্তে অনেকেই হতবাক হয়েছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গতকাল রাতে ভোট গণনা শেষে ৬৬ বছর বয়সী থারপানকে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা তান মেং দুই। তিনি বলেন, ‘আমি থারমান শানমুগারাতনামকে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী ঘোষণা করছি।’
২০১৭ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব। তিনি সিঙ্গাপুরের অষ্টম ও প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এখন তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন থারমান শানমুগারত্নম।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে প্রেসিডেন্ট পদ অনেকটা আলঙ্করিক। প্রেসিডেন্ট শুধু দেশটির আর্থিক রিজার্ভ দেখভাল করেন, সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন এবং দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত অনুমোদন করেন। সাংবিধানিকভাবে, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হচ্ছে নির্দলীয় একটি পদ।
এএফপি জানিয়েছে, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরও দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করেন। তাঁরা হলেন সিঙ্গাপুরের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল জিআইসির সাবেক বিনিয়োগ কর্মকর্তা এনজি কোক সং এবং বিমাপ্রতিষ্ঠান এটিইউসি ইনকামের সাবেক প্রধান নির্বাহী তান কিন লিয়ান।
সিঙ্গাপুরে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার প্রচলিত। প্রেসিডেন্টের পদ সেখানে অনেকটাই আলঙ্করিক। তবে অন্যান্য মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রেসিডেন্টের তুলনায় সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব খানিকটা বেশি। সিঙ্গাপুরের সংবিধান অনুসারে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অতিরিক্ত যে দায়িত্ব প্রেসিডেন্টকে পালন করতে সেগুলো হলো— নগররাষ্ট্রটির আর্থিক রিজার্ভ দেখভাল করা। এছাড়া সুনির্দিষ্ট কিছু তিনি বিষয়ে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা রাখেন এবং যে কোনো দুর্নীতিবিরোধী তদন্তের অনুমোদন দেওয়ারও এক্তিয়ার রাখেন।
সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ৬ বছর। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট আসার কথা থাকলেও গত এক যুগেরও বেশি সময় এই নির্বাচন হয়েনি দেশটিতে। ক্ষমতাসীন দল পিপল’স অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সুপারিশের ভিত্তিতেই এতদিন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হতো। গত প্রায় ৬০ বছর ধরে এই নগররাষ্ট্রে ক্ষমতায় আছে পিএপির সরকার।
ফলে সাংবিধানিকভাবে এই পদে নির্দলীয় ব্যক্তির আসার কথা থাকলেও গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যারা প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তারা কোনো না কোনো ভাবে পিএপি’র সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারতীয় বংশোদ্ভূত থারমান শানমুগারত্মম পিএপির একজন সাবেক নেতা এবং বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, পিএপির সব ভোটই পড়েছে তার ঝুলিতে।
৬৬ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী থারমান শানমুগারত্মম নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজকের ভোট ছিল সিঙ্গাপুরের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। এটি এমন ভোট, যা আমাদেরকে একত্রে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ও একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে এগিয়ে নেবে।