আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সেন্ট্রাল মস্কোর একটি ভবনে আঘাত হেনেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ড্রোন। এতে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় শহরটিতে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনার পর মস্কোর সব বেসামরিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার মস্কোতে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যে বিস্ফোরণ বেশ শক্তিশালী ছিল। রুশ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে বহুতল ভবনের কাছে কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। জরুরি সেবার কর্মীরা একটি অনাবাসিক ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ পরিদর্শন করছেন, যেখানে ড্রোন আঘাত করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে। ইউক্রেন অবশ্য বিষয়টি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে জানিয়েছেন, শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ভোরে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি ড্রোনকে গুলি করে ভূ-পাতিত করেছে। পরে এর ধ্বংসাবশেষ শহরের এক্সপো সেন্টারে গিয়ে পড়ে এবং শহরের এক্সপো সেন্টার কমপ্লেক্সের ভবনগুলিতে ধ্বংসাবশেষ পড়েছিল।
এক্সপো সেন্টারটি বড় ধরনের প্রদর্শনী এবং সম্মেলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ক্রেমলিন থেকে পাঁচ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত।
রাশিয়ান মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, শহরের আকাশচুম্বী ভবনগুলোর পাশে ঘন ধোঁয়া উড়ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে ‘মস্কো এবং মস্কো অঞ্চলে অবস্থিত বস্তুগুলোর ওপর একটি মনুষ্যবিহীন আকাশযান ব্যবহার করে’ হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ড্রোনটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সংস্পর্শে আসার পরে পথ পরিবর্তন করে ও মস্কোর ক্রাসনোপ্রেসনেনস্কায়া বাঁধ এলাকায় একটি অনাবাসিক ভবনে গিয়ে পড়ে।
মস্কোর মেয়র বলেছেন, জরুরি সার্ভিসগুলো ঘটনাস্থলে রয়েছে। এঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
রাশিয়ার বিমান পরিবহন সংস্থা জানিয়েছে, মস্কোর আশপাশের চারটি প্রধান বিমানবন্দরে বিমান চলাচল সংক্ষিপ্তভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। যদিও পরে তারা আবার চালু হয়েছে। সাতটি ফ্লাইটকে বিকল্প বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে।
গত কয়েক মাসে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো ও সংলগ্ন এলাকার উপর একাধিক ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স প্রণালী বেশিরভাগ হামলা বানচাল করতে পারলেও মানুষের মনে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে মস্কোর বাণিজ্যিক এলাকার ওপর দুটি হামলা ঘটেছে। ইউক্রেন সরাসরি এমন হামলার দায় স্বীকার না করলেও সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি গত ২০ জুলাই সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, যুদ্ধ রাশিয়ায় প্রবেশ করছে। সে দেশের প্রতীকী কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটিগুলি লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে।
গত প্রায় ১৭ মাস ধরে রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বিপুল অর্থ ও সামরিক সহায়তা পেলেও ঠিক সময়ে যথেষ্ট শক্তিশালী অস্ত্র ও সরঞ্জামের অভাব নিয়ে জেলেনস্কির সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করছে। যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা এড়াতে ন্যাটো দেশগুলো একাধিক পদক্ষেপ খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যেমন অ্যামেরিকা ও সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চাইলেও চলতি বছর সেই বিমান হাতে পাবার আশা ত্যাগ করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মোকাবিলা করতে এই বিমান যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে বলে ইউক্রেন দাবি করছে।
বিমান হাতে না পেলেও ইউক্রেনের পাইলট ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীরা অদূর ভবিষ্যতে সেই যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ পেতে পারে বলে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কের নেতৃত্বে ১১টি ন্যাটো দেশের জোট ইউক্রেনীয় পাইলটদের পশ্চিমা যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ দেবার উদ্যোগ নিচ্ছে। গত মে মাসে জাপানে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে এই উদ্যোগ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সত্ত্বেও ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে বর্তমানে মার্কিন প্রশাসন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।