Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে আটক করে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। বুধবার (২৬ জুলাই) মোহাম্মদ বাজোমকে রাজধানী নিয়ামেইর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আটক করা হয়। সেখানে মোহাম্মদ বাজোম কী অবস্থায় আছেন, তা জানা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

নাইজারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে কর্নেল মেজর আমাদোউ আবদ্রামানে বলেন, দেশে আপনি যে শাসনের সঙ্গে এত দিন ধরে পরিচিত, তার রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনার জেরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ক্ষমতার পালাবদলের টালমাটাল পরিস্থিতিতে নাইজারের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে কারফিউ। দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের পর্দায় যখন কর্নেল-মেজর আমাদোউ আবদ্রামানে এই বিবৃতি পড়ছিলেন, তখন ৯ সেনা কর্মকর্তা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা ‘দেশের সুরক্ষায় গঠিত জাতীয় কাউন্সিল’-এর সদস্য বলে জানানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ঘোষণার সময় তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এবং অপশাসন বেড়ে যাওয়ায় নাইজারের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ক্ষমতা দখলের পর কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন কর্নেল আমাদু।

বুধবার সকালে নাইজারের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন যে, প্রেসিডেন্ট গার্ড বাহিনীর সদস্যরা দৃশ্যত অভ্যুত্থানচেষ্টা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি নাইজারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজুমের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, আমি আজ সকালে প্রেসিডেন্ট বাজুমের সঙ্গে কথা বলেছি এবং স্পষ্ট করে দিয়েছি যে নাইজারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।

নাইজারের আনুষ্ঠানিক নাম নাইজার প্রজাতন্ত্র। এটি পশ্চিম আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত একটি রাষ্ট্র। দেশটির নাম রাখা হয়েছে নাইজার নদীর নামানুসারে। এর দক্ষিণে নাইজেরিয়া ও বেনিন, পশ্চিমে বুর্কিনা ফাসো ও মালি, উত্তরে আলজেরিয়া ও লিবিয়া এবং পূর্বে চাদ। নাইজারের রাজধানীর নাম নিয়ামে।

১৮৮৩ থেকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত দেশটি ফ্রান্সের দখলে ছিল। ১৯০১ সালে নাইজার একটি সামরিক এলাকায় পরিণত হয় এবং ১৯০৪ সালে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম আফ্রিকার একটি অংশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নাইজার ১৯৫৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬০ সালের আগস্টে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৭৪ সালের ১৫ এপ্রিল নাইজারের প্রথম প্রেসিডেন্ট হামানি দিওরি এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। অভ্যুত্থানের নেতা লে. মিনি কাউচি সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি সংসদ ভেঙে দেন এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। পরে ১৯৯৩ সালে নাইজারে প্রথম অবাধ নির্বাচন হয়।

নাইজারের আয়তন প্রায় ১২ লাখ ৬৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ২২তম বৃহত্তম দেশ। ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী নাইজার মুসলিম রাষ্ট্র। জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% মুসলিম ও ১% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। সূত্র : বিবিসি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

টানা বৃষ্টিতে বীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের বেহাল দশা

নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট আটক

প্রকাশের সময় : ১২:০৯:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে আটক করে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। বুধবার (২৬ জুলাই) মোহাম্মদ বাজোমকে রাজধানী নিয়ামেইর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আটক করা হয়। সেখানে মোহাম্মদ বাজোম কী অবস্থায় আছেন, তা জানা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

নাইজারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে কর্নেল মেজর আমাদোউ আবদ্রামানে বলেন, দেশে আপনি যে শাসনের সঙ্গে এত দিন ধরে পরিচিত, তার রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনার জেরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ক্ষমতার পালাবদলের টালমাটাল পরিস্থিতিতে নাইজারের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে জারি করা হয়েছে কারফিউ। দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের পর্দায় যখন কর্নেল-মেজর আমাদোউ আবদ্রামানে এই বিবৃতি পড়ছিলেন, তখন ৯ সেনা কর্মকর্তা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা ‘দেশের সুরক্ষায় গঠিত জাতীয় কাউন্সিল’-এর সদস্য বলে জানানো হয়েছে। যেকোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ঘোষণার সময় তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এবং অপশাসন বেড়ে যাওয়ায় নাইজারের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ক্ষমতা দখলের পর কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন কর্নেল আমাদু।

বুধবার সকালে নাইজারের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন যে, প্রেসিডেন্ট গার্ড বাহিনীর সদস্যরা দৃশ্যত অভ্যুত্থানচেষ্টা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি নাইজারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজুমের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, আমি আজ সকালে প্রেসিডেন্ট বাজুমের সঙ্গে কথা বলেছি এবং স্পষ্ট করে দিয়েছি যে নাইজারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।

নাইজারের আনুষ্ঠানিক নাম নাইজার প্রজাতন্ত্র। এটি পশ্চিম আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত একটি রাষ্ট্র। দেশটির নাম রাখা হয়েছে নাইজার নদীর নামানুসারে। এর দক্ষিণে নাইজেরিয়া ও বেনিন, পশ্চিমে বুর্কিনা ফাসো ও মালি, উত্তরে আলজেরিয়া ও লিবিয়া এবং পূর্বে চাদ। নাইজারের রাজধানীর নাম নিয়ামে।

১৮৮৩ থেকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত দেশটি ফ্রান্সের দখলে ছিল। ১৯০১ সালে নাইজার একটি সামরিক এলাকায় পরিণত হয় এবং ১৯০৪ সালে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম আফ্রিকার একটি অংশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নাইজার ১৯৫৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬০ সালের আগস্টে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।

১৯৭৪ সালের ১৫ এপ্রিল নাইজারের প্রথম প্রেসিডেন্ট হামানি দিওরি এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন। অভ্যুত্থানের নেতা লে. মিনি কাউচি সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি সংসদ ভেঙে দেন এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। পরে ১৯৯৩ সালে নাইজারে প্রথম অবাধ নির্বাচন হয়।

নাইজারের আয়তন প্রায় ১২ লাখ ৬৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের ২২তম বৃহত্তম দেশ। ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী নাইজার মুসলিম রাষ্ট্র। জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% মুসলিম ও ১% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। সূত্র : বিবিসি।