নিজস্ব প্রতিবেদক :
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো দলকে নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার (১০ জুলাই) রাতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে বলা হয়, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে আগ্রহ দেখাচ্ছে সেটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া, চীন ও ইরান। গত সপ্তাহে রাশিয়া ও চীন এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কে এর সমালোচনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মন্তব্য কী?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অন্যদের কেন আপত্তি থাকবে সেটি তিনি বুঝতে পারছেন না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে তার প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যক্ত করেছেন। ৫০ বছরের বেশি সময় যাবত বাংলাদেশের বন্ধু এবং অংশীদার হিসেবে আমরা উভয়েই এই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্তি করি।
মুখপাত্র বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক দলের বিপরীতে অন্য রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না; আমরা একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। তিনি বলেন, আমি আগে অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম, অন্যান্য দেশ যখন আমাদের সাথে আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া উত্থাপন করে তখন আমরা এটিকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করি না। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার একটি সুযোগ হিসেবে সেই আলোচনাগুলোকে স্বাগত জানাই, এবং আমরা জানি না কেন অন্য কোন দেশ আপত্তি করবে।
আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু এই অঞ্চল ও বাংলাদেশ সফর করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি এবং বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে তারা কি ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ এবং বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করবেন- এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া ১১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে সফর করবেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রম সমস্যা, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইসহ মানবিক উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করতে তিনি জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন।
মিলার বলেন, এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে মতপ্রকাশের ও সংগঠনের স্বাধীনতা, সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম সমস্যা, মানবপাচার, বাণিজ্য এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল। বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন এই দলটি চারদিন ঢাকায় অবস্থান করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় আসবেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। এই সফরে তার সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশে আসছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, উজরার সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অগ্রগতি, নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি ও রোহিঙ্গা সংকটের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে।
অপরদিকে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম সমস্যা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং মানবপাচারে গুরত্ব দেবে ওয়াশিংটন।