নিজস্ব প্রতিবেদক :
কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হওয়ার জন্য নয় বা কারও বি টিম হওয়ার জন্য কাজ করে না দল। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করছে জাতীয় পার্টি এমন মন্তব্য করেছেন দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
শনিবার (০৬ মে) রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক পার্টির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, দেশে যারা গণতন্ত্র নিয়ে বড় কথা বলেন; তারা নির্বাচনে জনগণের ভোটের অনীহার অবস্থা সৃষ্টি করেছে। সেই সঙ্গে কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হওয়ার জন্য নয়। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ- বিএনপির ইতিহাস একই। ক্ষমতায় থাকলে সংবিধানের কথা বলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে শাসন করে তারা।
সেই সঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন জাতীয় পার্টি কারও বি টিম হওয়ার জন্য কাজ করে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাবে।
আগামী নির্বাচনে দলের অবস্থান তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা জনগণের পক্ষে থাকব। জনগণ যা চায় আমরা তাই করব। আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। মানুষের ভাতের অধিকার দরকার হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ খেতে পারছে না। মানুষ আধাপেট খেয়ে জীবন যাপন করছে, সামনে হয়ত আরও খারাপ দিন আসছে। যেসব দেশকে আমার খারাপ দেশ বলি, আমাদের অবস্থা এখন তাদের চেয়েও খারাপ। তাই ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতেই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভালো কাজ করলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে আমরা তাদের সাথেই কাজ করব। দেশ ও জাতির সাথে কাজ করব-এটাই আমাদের রাজনীতি। সামনের দিনগুলো হয়ত শুভদিন নয়। দেশ ও জাতির জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে।
পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিয়েছে বলে উল্লেখ করে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমরা পাঁচ সিটিতেই জিততে চাই। আমাদের প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু ভোটারদের অনেক প্রশ্ন- তারা বলছে আমরা ভোট দিতে পারব তো? ভোট দিলে সেই ভোট গণনা হবে তো? নাকি আওয়ামী লীগ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করবে? এটাই বাস্তবতা। এটা বুঝতে এখন খুব জ্ঞানী হতে হয় না।
গ্রামের কৃষক থেকে রিকশাওয়ালা পর্যন্ত এই প্রশ্ন করছে বলে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, যারা গণতন্ত্রের নামে বড় বড় কথা বলে, যারা মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলে, তারাই ভোটের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে? রাজনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, সাধারণ মানুষ মনে করে আমরা ভোট দেই বা না দেই, সরকার সমর্থকরাই জিতে যাবে। মানুষের মনে ভয়, ভোট দিতে গেলে মার খেতে হবে কিনা, বাড়িতে হামলা হবে কিনা।
দেশের মানুষকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করছে বলে উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী বলেন, এমন বাস্তবতা থেকে আমরা দেশকে উদ্ধার করতে চাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা জনগণের পক্ষে থাকব। জনগণ যা চায় আমরা তাই করব সংসদ নির্বাচনে। আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। মানুষের ভাতের অধিকার দরকার হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ খেতে পারছে না। আধাপেট খেয়ে জীবন যাপন করছে, সামনে হয়তো আরো খারাপ দিন আসছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের দাবি তোলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চায়। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনে প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতে নিজেদের লোক নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু যারা বিরোধী শিবিরে থাকেন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ নিয়ে মানুষের ভোটাধিকারের দাবি তোলেন। ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতায় গেলেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেহারা এক। ১৯৯৬ সালে আমরা মানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করেছিলাম, আওয়ামী লীগও তখন ভোট বর্জন করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। বিএনপির মতোই আওয়ামী লীগও নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে ছক এঁকেছে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা এমপির সভাপতিত্বে ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সুমন আশরাফ, আবু সাঈদ স্বপন, আমিনুল হক সাইদুল, এমএ আসাদুজ্জামান মবিন, আবুল হাসনাত আজাদ, নাসির উদ্দিন হাওলাদার (নাসিম), আনিসুর রহমান বাবু, মো. রনি।
উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. আব্দুস সালামসহ প্রমুখ।