নিজস্ব প্রতিবেদক :
সারাদেশে রোববার (৩০ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ সময় শিক্ষার্থীদের স্কুলের নির্ধারিত পোশাক বা ইউনিফর্ম পরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। আর কোনো স্কুলের নির্ধারিত স্কুল ইউনিফর্ম না থাকলে মার্জিত পোশাক পরে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছে।
ইউনিফর্ম পরে এসএসসি পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের আসতে বলে ইতোমধ্যে লিখিত নির্দেশনা জারি করেছে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
এ বিষয়ে পরীক্ষার্থী, প্রধান শিক্ষক, কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করেছে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এবার ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী বেশি পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন।
গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৫০ হাজার ২৯৫ জন। গতবার এসএসসি ও সমমানে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০ লাখ ২১ হাজার। চলতি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ছাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৮ হাজার ৬০৯ জন। এবছর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২০৭টি, কেন্দ্র বেড়েছে ২০টি। এবার মোট কেন্দ্র ৩ হাজার ৮১০টি এবং মোট প্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ৭৯৮টি।
নয়টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭০ জন। আর ছাত্রী ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫ জন। মোট ১৭ হাজার ৭৮৬টি স্কুল থেকে এসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তারা ২ হাজার ২৪৪টি কেন্দ্র থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেবেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৩ জন। আর ছাত্রী ১ লাখ ৫১ হাজার ১২৮ জন। এবার ৯ হাজার ৮৫টি মাদরাসা থেকে পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। মোট ৭১৬টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৭ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৭ হাজার ৩৩৪ জন আর ছাত্রী ৩০ হাজার ৪৩৩ জন। মোট ২ হাজার ৯২৭টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার্থীরা এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তারা মোট ৮৫০টি কেন্দ্রে এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
নয়টি সাধারণ বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৩ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯১ জন আর ছাত্রী ২ লাখ ২২ হাজার ৭৫২ জন। ৩ হাজার ২৬৯টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী ঢাকা বোর্ডের অধীনে থাকা ৪৩১টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
রাজশাহী বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ২ লাখ ৫ হাজার ৮০২ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৬ হাজার ২২৩ জন আর ছাত্রী ৯৯ হাজার ৫৭৯ জন। ২ হাজার ৬৭৮ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী রাজশাহী বোর্ডের অধীনে থাকা ২৬৫ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
কুমিল্লা বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ১০৬ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৭৭ হাজার ৪৫৬ জন আর ছাত্রী ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪১ জন। ১ হাজার ৭৭৬ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে থাকা ২৭২ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
যশোর বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯৫ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৭৮ হাজার ৪৯৩ জন আর ছাত্রী ৭৯ হাজার ৩০২ জন। ২ হাজার ৫৪৮ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী যশোর বোর্ডের অধীনে থাকা ২৯৩ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৯১ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬৮ হাজার ২২১ জন আর ছাত্রী ৮৬ হাজার ৪৭০ জন। ১ হাজার ১০৭ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী এ বোর্ডের অধীনে থাকা ২১৬ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
বরিশাল বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৯১ হাজার ৮০০ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৪৩ হাজার ৭২৭ জন আর ছাত্রী ৪৮ হাজার ৭৩ জন। ১ হাজার ৪৭৫ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী এ বোর্ডের অধীনে থাকা ৯১ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
সিলেট বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ৯ হাজার ৮২০ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৪৫ হাজার ৩০৬ জন আর ছাত্রী ৬৪ হাজার ৫১৪ জন। ৯৩১ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী বোর্ডের অধীনে থাকা ১৪৯ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
দিনাজপুর বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ২ লাখ ১ হাজার ৮০২ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৮ জন আর ছাত্রী ৯৯ হাজার ৭৬১ জন। ২ হাজার ৭০৩ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী বোর্ডের অধীনে থাকা ২৭৭ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
ময়মনসিংহ বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৯ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬১ হাজার ৯৪৬ জন আর ছাত্রী ৬১ হাজার ৩১৩ জন। ১ হাজার ২৯৯ টি স্কুলের এসব শিক্ষার্থী বোর্ডের অধীনে থাকা ১৫০ টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
এদিকে, আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশে করতে পারবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এদিকে পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে শিক্ষা ও পরীক্ষার সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত আরও তিনটি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার (২৯ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডগুলো অফিসিয়াল ছুটি হলেও একটি টিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি) সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। বিটিআরসি তত্ত্ববাধানে একটি টিম ফেসবুক তদারকি করছে। এর সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে ঢাকা আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, শনিবার (২৯ এপ্রিল) ফেসবুক ও মোবাইল লেনদেন নজরদারি শুরু করেছে বিটিআরসি। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারাও বিটিআরসিতে থাকবে। এছাড়াও ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ অন্যান্য সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করা হবে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে।
তিনি জানান, প্রশ্নঁফাস হওয়ার চেয়ে গুজব ঠেকানোই বড় কঠিন। কারণ প্রশ্নঁফাস করা কঠিন কিন্তু গুজন ছড়ানো সহজ। ২৫ এপ্রিল পরীক্ষা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়রম্যান বলেন, সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে। যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অংকের টাকা লেনদেন হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে।