নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের ছুটি শেষ হলেও এখনো আগের রূপে ফেরেনি রাজধানীর বাজারগুলো। ঈদের আগে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও চিনির দাম এখনো কমেনি। বরং ঈদের পরের কয়েক দিনে নতুন করে বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। পাশাপাশি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে নানা পদের সবজির দামও।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
তবে আগুন জ্বলছে সবজির বাজারে। মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা আম ৭০-৮০ টাকা, মারফা ৯০ টাকা, ক্যাপসিক্যাম ২৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, গাজর ৮০-৯০ টাকা, কাকরোল ১০০-১১০ টাকা, কচুরমুখী ১৫০-১৬০ টাকা, সজনে ডাটা (আঁটি) ৫০-৬০ টাকা, মিষ্টি আলু ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, উস্তা ৬০-৭০ টাকা, করোলা ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, পটল ৬০-৭০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, আলু ৩২ টাকা, লতি ৮০ টাকা, চাল কুমড়া (পিস) ৫০-৬০ টাকা, সসা ৭০-৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ফুলকপি (পিস) ৫০ টাকা, বাঁধাকপি (পিস) ৫০ টাকা, লাউ (পিস) ৬০, কাঁচা কলা (হালি) ৬০ টাকা, কলম্বো লেবু (হালি) ১০০ টাকা, কাগজি লেবু (হালি) ৪০ টাকা, এলাচি লেবু (হালি) ১০০ টাকা।
আলু ও পেঁয়াজ ৫-১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ ও পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা কাজেম বলেন, বাজারে সরবরাহ যেমন কম, ক্রেতাও কম। দাম কমে না। বরং অনেক সবজির দাম বেড়েছে। অধিকাংশ সবজিই আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে শসা ও লেবুর চাহিদা একটু বেশি। অন্যান্য সবজির বাজার আগের মতোই রয়েছে।
কাঁচা কাঁঠালের চাহিদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিক্রি খারাপ না। অনেকে জানেন না, তাই আগ্রহ নেই। যারা চিনেন তাদের কাছে কদর রয়েছে।
এদিন বাজারের অধিকাংশ দোকানে গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। তবে কিছু কিছু দোকানে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায় এবং কক লেয়ার (লাল) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। পাকিস্তানি লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকায়।
মুরগি কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আকাশ জানান, ঈদের আগে যে দামে মুরগি কিনেছি, সে দামে এখনো কিনতে হচ্ছে। বাসায় মেহমান এসেছে। তাই মুরগি কিনতে বাধ্য হচ্ছি। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির যে দাম তা মনে হচ্ছে গরুর মাংসের দামে কিনতে হচ্ছে। কয়েকটি দোকান দেখলাম কেউ ২৫০ টাকার নিচে দিচ্ছে না।
মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আক্কাস মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, ঈদের সময় চাহিদা অনেক বেশি থাকায়। মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ী ঈদের সময় থেকে মুরগির দাম বাড়িয়েছে। আগে যে মুরগি কিনেছি ২০৭ টাকা কেজি, সেই মুরগি এখন কিনতে হচ্ছে ২৪৭ টাকা কেজিতে। এ কারণে ২৫০ টাকার বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।
নূরু নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে মুরগির সরবরাহ কম। তাই দাম বেশি। প্রয়োজন ১০ ভ্যান। সেখানে এক ভ্যান মুরগি এলে তো দাম বেশি পড়বেই।
বিক্রেতাদের এই অজুহাতে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। মুরগির দাম বাড়ার পেছনে বিক্রেতাদের কারসাজিকে দুষছেন তারা।
মনির হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সরকারের যথাযথ মনিটরিং নেই বলেই ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নেয়। রমজানের আগে মুরগির দাম বেশি ছিল। দাম বাড়ার কারণ জানতে ভোক্তা অধিদপ্তর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধরার পর একদিনে মুরগির দাম ১০০ টাকা কমে যায়। তার মানে যথাযথ তদারকি থাকলে জিনিসপত্রের দামও কম থাকতো। এখন সেই তদারকি নেই, তাই দাম আার বেড়েছে।
মুরগির মতো বেড়েছে ডিমের দামও। বাজারভেদে ফার্মের বাদামি রঙের ডিমের ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং সাদা রঙের ডিম ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই দুই পদের ডিমে ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে হাঁস ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।
তবে ঈদের পর ক্রেতাদের মাঝে মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বড় আকারের রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। কিছুটা ছোট আকৃতির রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ঈদের আগে বড় রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যায়নি। ছোটগুলোও বিক্রি হয়েছিলো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা কমে প্রতি কেজি চাষের শিং আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৪৫০ টাকা, পাবদা ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, রুই ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কাঁচকি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে বোয়াল ও আইড় মাছের দাম। বর্তমানে ভারতীয় বড় বোয়াল বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, দেশি বোয়াল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৫০০ থেকে ৮০০, দেশি বড় আইড় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ঈদের পর ঢাকায় এসে আজ প্রথম বাজার করতে এসেছি। ঈদের সময় সবার বাসায় মাংসের আয়োজন থাকে তাই এখন সবার মাছ খাওয়ার প্রতি একটা চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সে লক্ষ্যেই মাছ কিনতে এসেছি কিন্তু এসে দেখলাম সব ধরনের মাছের দাম আজ বেশি। অন্যদিকে মুরগি, গরু, খাসির মাংসের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই। যে কারণেই মনে হয় সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর মহাখালীর বাজারের মাছ বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের পরপর মাছের দাম একটু বেশিই যায়। কারণ এসময় সবাই মাংস ছেড়ে মাছ খাওয়ায় আগ্রহী হয় ফলে চাহিদা বেশি থাকে। অন্যদিকে ঈদের সিজন যাচ্ছে তাই এখন মাছের সরবরাহও গ্রাম এলাকা থেকে কম হচ্ছে। এছাড়া মাছের ফিডের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে মাছ কিনতে হচ্ছে তাই সেই দামের প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ছে।
অন্যদিকে মুদি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১৮৭ টাকা, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭৪ টাকা, নাজিরশাইল ৮০-৮৫ টাকা, আটাশ ৬০ টাকা, পাইজাম ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ১৬০ টাকা, চায়না রসুন ১৪০ টাকা, মিয়নমারের আদা ২০০ টাকা।
অন্যদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাজার করতে ঘাম ছুটছে ক্রেতাদের। তমিজ উদ্দিন মৃধা নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তাতে বাজার করতে এলে হিমশিম খেতে হয়। এক কেজির জায়গায় হাফ কেজি কিনতে হয়। এভাবে চলতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের থাকলে না খেয়েও থাকতে হতে পারে।
বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আবুল কাসেম। তিনি জানান, ভাই কী আর বলব! অল্প বেতনে চাকরি। ভেবেছিলাম রমজান শেষে সব কিছুর দাম কমবে। কিন্তু দাম কমেনি। বরং অনেক কিছুর দাম বেড়েছে।
বাজার করতে এসে কথা হয় ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত আজহার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জানান, রমজানে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছিল, রমজান শেষ হলে কমবে। বরং ঈদে মুরগির যে দাম বেড়েছে, তা কখনো এভাবে এত দাম বাড়েনি। এখনো দাম কমেনি। আদৌ দাম কমার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় আছে।