নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে যা ছিল স্বপ্নাতীত। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল)। মাদারীপুরের মাটি দিয়ে প্রথমবার ট্রেন চলার খবরে খুশির বন্যা বইছে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে। সবচেয়ে খুশি জেলার শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের মানুষ। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে, যা ছিল স্বপ্নাতীত। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল)।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হলে আরও একটি স্মারক যোগ হবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। গত বছর ২৫ জুন বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সড়কপথে দুয়ার খুলে যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের। কিন্তু অপ্রাপ্তি ছিল একটিই, উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতুতে চলেনি ট্রেন। সাড়ে নয় মাস পরে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে আগামী ৪ এপ্রিল। এদিন প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা সেতুতে চলবে ট্রেন। আর এ খুশিতে আত্মহারা পদ্মাপাড়সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।
একই সঙ্গে স্বল্প খরচে মানুষের যাতায়াত সুবিধা, পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে গতি আসবে, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে। চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে স্বল্প খরচে কৃষিপণ্য রাজধানীতে নিতে পারবেন ভাটি অঞ্চলের কৃষকরা। এরই মধ্য দিয়ে দেশবাসী আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে।
প্রথমবার মাদারীপুরের মাটিতে ট্রেন দেখতে পাওয়ার আনন্দে যেন তাদের আর তর সইছে না। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন সেবা চালু হলে চলাচলের সুবিধাসহ এ এলাকার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যও গতিশীলতা আসবে। স্বল্প খরচে রাজধানীতে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে ব্যবসায়ীরা। রেলসেবা চালু হওয়াতে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি ভায়াডাকের উপর পাথরবিহীন প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার রেল সেতু স্থাপন হয়েছে মূল সেতুতে। মূল রেল সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত হতে ভাঙা পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে ৩২ কিলোমিটার। সফলভাবে ভাঙ্গা হতে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেল লাইনে রেল ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে আরো আগেই। এখন আগামী ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত রেল চলাচল ট্রয়াল দেয়া হবে। এর মধ্যে ভায়াডাক উড়াল রেললাইন ৪ কিলোমিটার আর মাটির ওপর দিয়ে ২৮ কিলোমিটার। ভায়াডাকের ৪ কিলোমিটার রেললাইন প্রস্তুত করা হয়েছে পাথরবিহীন। আর ২৮ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে পাথর দিয়ে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত হতে ভাংগা পর্যন্ত ৩টি স্টেশন রয়েছে, ভাঙ্গায় জংশন, শিবচরে ২টি স্টেশন। স্টেশনগুলোর ওপর দিয়ে ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া ভাঙা জংশনটি আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। রেল সংযোগ প্রকল্প ঢাকা থেকে মাওয়া শিবচর ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ১ম পর্যায় এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ২য় পর্যায়।
ভাঙ্গা স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভাঙা স্টেশন থেকে একটি গ্যাংকার ট্রেন এবং সাত বগিবিশিষ্ট যাত্রীবাহী একটি স্পেশাল ট্রেন মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে রেলমন্ত্রী মহোদয় আসবেন, তিনি এখানে ব্রিফ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ট্রেন ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। আগে গ্যাংকার ট্রেন ছাড়া হবে, তার পরে স্পেশাল ট্রেন যাত্রা করবে। যাত্রীবাহী হলেও এই স্পেশাল টেনে কোনো যাত্রী থাকবে না।
শুধু মন্ত্রী মহোদয়, রেল লিংক প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং বিশেষ অতিথিরা থাকবেন। মাওয়া পৌঁছানোর পর সেখান থেকে মন্ত্রী মহোদয়সহ অতিথিবৃন্দ সড়কপথে ঢাকায় ফিরে যাবেন।
ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে ভাঙ্গা স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, কতটা গতিতে চালানো যাবে এবং চালক কতটা গতিতে ট্রেন চালাতে পারবেন; তার ওপর নির্ভর করছে ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাতে কতটা সময় লাগবে। তবে আমাদের ধারণা— দুই ঘণ্টার মতো লাগতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ট্রেন দুটি মাওয়া স্টেশনে পৌঁছানোর পর গ্যাংকার ট্রেন ওখানেই থেকে যাবে; আর স্পেশাল ট্রেনটি মাওয়া থেকে পুনরায় ভাঙ্গা স্টেশনে আসবে।