Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কানাডার পার্লামেন্টে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বিল পাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সম্মান জানিয়ে কানাডার হাউস অব কমন্সে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিল (এস-২১৪) পাস হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ৫.৩০ মিনিটে বিলটি পাস হয়। এ সময় বিলটির উত্থাপনকারী কেন হার্ডি এমপি, বিলটির আরেকজন প্রবক্তা সিনেটর মবিনা এস জাফর, বিরোধী সিপিসি নেতা এবং কানাডাস্থ্ বাংলাদেশ হাই কমিশনার হাউস অফ কমন্সে উপস্থিত ছিলেন।

কানাডাতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই বিল পাশের মাধ্যমে কানাডা এখন থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করবে। এটা বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের জন্য এবং সারা বিশ্বের মাতৃভাষা প্রেমিকদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

বাংলাদেশ ছাড়া কানাডাই বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এবং পরে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি গৃহীত হওয়ার জন্য মরহুম রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান এবং মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলামের অবদান বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।

হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই শুভক্ষণে ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ইউনেস্কোর এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘের স্বীকৃত আদায়ে মরহুর রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশ্ব সমাজের মাতৃভাষাপ্রেমীদের উদ্যোগ এবং মহান অবদানকে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে ।

এই বিলটি কানাডার পার্লামেন্টে নেওয়ার ক্ষেত্রে মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির সভাপতি আমিনুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সে জন্য তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বাঙালির ওপর। মাতৃভাষা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় ফুঁসে ওঠে বাঙালি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে আনে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। এর দুই বছর পর ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকার করে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হতে লেগেছিল আরো দুই বছর।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান বিলটি ওপর আলোচনা ও পাসের সময় কানাডিয়ান পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্য কেন হার্ডি, যিনি বিলটি উত্থাপন করেন, তিনি হাইকমিশনারের উপস্থিতির প্রশংসা করেন। বিলটির অন্য এক জন অগ্রগণ্য সমর্থক, সিনেটর মোবিনা এস জাফর বিলটি পাসের সময় হাইকমিশানের সঙ্গে হাউজে উপস্থিত ছিলেন।

বিলটি পাশের পর কানাডার সংসদ সদস্যগণ, সিনেটরগণ এবং জন অ্যালড্যাগ এমপি হাইকমিশনারকে অভিনন্দন জানান। বিলটি পাশের সময় বিরোধী দলীয় নেতাও সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

বিলটি পাস হওয়া ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের প্রতি কানাডার অঙ্গীকারের প্রমাণ। বিলটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে ভাষা হলো মানুষের পরিচিতি ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অপরিহার্য উপাদান। ভাষার বৈচিত্র্যকে সম্মান করা, রক্ষা করা, প্রবর্ধন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিএনপির জয় ঠেকাতে কিছু দল নতুন নতুন শর্ত দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটের চেষ্টা করছে : তারেক রহমান

কানাডার পার্লামেন্টে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বিল পাস

প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সম্মান জানিয়ে কানাডার হাউস অব কমন্সে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিল (এস-২১৪) পাস হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ৫.৩০ মিনিটে বিলটি পাস হয়। এ সময় বিলটির উত্থাপনকারী কেন হার্ডি এমপি, বিলটির আরেকজন প্রবক্তা সিনেটর মবিনা এস জাফর, বিরোধী সিপিসি নেতা এবং কানাডাস্থ্ বাংলাদেশ হাই কমিশনার হাউস অফ কমন্সে উপস্থিত ছিলেন।

কানাডাতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই বিল পাশের মাধ্যমে কানাডা এখন থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করবে। এটা বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের জন্য এবং সারা বিশ্বের মাতৃভাষা প্রেমিকদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

বাংলাদেশ ছাড়া কানাডাই বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এবং পরে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি গৃহীত হওয়ার জন্য মরহুম রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান এবং মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলামের অবদান বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।

হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই শুভক্ষণে ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ইউনেস্কোর এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘের স্বীকৃত আদায়ে মরহুর রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশ্ব সমাজের মাতৃভাষাপ্রেমীদের উদ্যোগ এবং মহান অবদানকে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে ।

এই বিলটি কানাডার পার্লামেন্টে নেওয়ার ক্ষেত্রে মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির সভাপতি আমিনুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সে জন্য তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বাঙালির ওপর। মাতৃভাষা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় ফুঁসে ওঠে বাঙালি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে আনে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। এর দুই বছর পর ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকার করে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হতে লেগেছিল আরো দুই বছর।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান বিলটি ওপর আলোচনা ও পাসের সময় কানাডিয়ান পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্য কেন হার্ডি, যিনি বিলটি উত্থাপন করেন, তিনি হাইকমিশনারের উপস্থিতির প্রশংসা করেন। বিলটির অন্য এক জন অগ্রগণ্য সমর্থক, সিনেটর মোবিনা এস জাফর বিলটি পাসের সময় হাইকমিশানের সঙ্গে হাউজে উপস্থিত ছিলেন।

বিলটি পাশের পর কানাডার সংসদ সদস্যগণ, সিনেটরগণ এবং জন অ্যালড্যাগ এমপি হাইকমিশনারকে অভিনন্দন জানান। বিলটি পাশের সময় বিরোধী দলীয় নেতাও সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

বিলটি পাস হওয়া ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের প্রতি কানাডার অঙ্গীকারের প্রমাণ। বিলটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে ভাষা হলো মানুষের পরিচিতি ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অপরিহার্য উপাদান। ভাষার বৈচিত্র্যকে সম্মান করা, রক্ষা করা, প্রবর্ধন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।