আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
‘বিচারব্যবস্থা সংস্কারের’ বিতর্কিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কথা বলায় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তেকে বরখাস্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভে নেমেছে দেশটির লাখ লাখ মানুষ। হয়েছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ডেকে পাঠান এবং তাকে বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে গ্যালান্তের প্রতি তার আর আস্থা নেই।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার (২৬ মার্চ) নেতানিয়াহুর নেওয়ার ‘বিচারব্যবস্থা সংস্কার’ সংশোধনের জন্য ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির প্রথম জ্যেষ্ঠ সদস্য, যিনি এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকারের নেওয়া বিতর্কিত প্রস্তাবগুলো বাতিলের আহ্বান জানিয়েছিলেন ইয়োভ গ্যালান্ত। বিচারব্যবস্থা সংস্কারের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে ইসরায়েলে। দিনে দিনে অসন্তোষ আরও বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।
এর মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরাখাস্ত করে চলমান অস্থিরতাকে আরও উসকে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। রবিবার সন্ধ্যায় রাজপথে জনতার ঢল নামে। আন্দোলনকারীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীরা জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বাড়ির কাছাকাছি পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। এসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায় তাদের।
ইসরায়েলি ক্ষুব্ধ জনগণ তেল আবিবের প্রধান সড়ক অবরোধ করে, রাস্তায় নীল-সাদা পতাকা ওড়ায়। কিছুক্ষণের মধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ। বিয়ারশেবা, হাইফা, জেরুজালেমসহ অনেক জায়গায় বিক্ষোভ হয়। পার্লামেন্টের দিকেও অগ্রসর হতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের।
ইসরায়েলজুড়ে এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতা খুঁজে বের করতে ইসরায়েলি নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ ও গ্রান্টজ জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু এইভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে খেলতে পারেন না। নিউ ইয়র্কে ইসরায়েলের কনসাল জেনারেল পদত্যাগ করেছেন। ইসরায়েলের রিসার্চ ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ থাকবে।
শ্রমিক ফেডারেশনগুলোর শীর্ষ সংস্থা নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছে। জেরুসালেমের থিংক ট্যাংক ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের গবেষক গাই লুরি এএফপিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল এখন রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে।
এই মাসের গোড়ায় ইসরায়েলের এলিট এয়ার ফোর্স স্কোয়াড্রনের সদস্যরা প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দিতে অস্বীকার করেন। পরে কমান্ডারদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা যোগ দেন।
বরখাস্ত হওয়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সেনা নেতনিয়াহুর পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। বরখাস্ত হওয়ার পর গ্যালান্ট টুইট করে বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমার জীবনের মিশন ছিল, আছে ও থাকবে।
সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে অস্থিরতার কথা উল্লেখ করে গ্যালান্ট বিতর্কিত আইনটি পাসের প্রক্রিয়া আগামী মাসে স্বাধীনতা দিবসের ছুটির পর পর্যন্ত স্থগিত রাখার আহ্বান জানান। এরপরই এক দিনেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে সরিয়ে দেয়ার এ সিদ্ধান্ত এলো।
এদিকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ ও বেনি গান্তেজ। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, রাজনীতির খেলায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কখনোই তুরুপের তাস হতে পারে না। নেতানিয়াহু আজ রাতে চূড়ান্ত সীমারেখাও অতিক্রম করেছেন।
বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যস্ত’ করার কার্যক্রমে হাত না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইয়ার লাপিদ ও বেনি গান্তেজ।
অন্যদিকে, বিচারব্যবস্থা সংস্কারে নেতানিয়াহু সরকারের উদ্যোগের প্রতিবাদে দেশটিতে গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই পদক্ষেপে সামরিক বাহিনী ও ব্যবসায়ী নেতৃত্বও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলো।
নেতানিয়াহুর ডানপন্থী লিকুদ পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য গ্যালান্ট। দলের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম শনিবার বিচারব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে নেওয়া আইনি উদ্যোগ স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন।