Dhaka রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতুতে সাড়ে তিন বছরে টোল আদায় ২৯৩৬ কোটি টাকা

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পর গত সাড়ে তিন বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে দুই কোটির বেশি যানবাহন পারাপার করেছে। আর এসব যানবাহন থেকে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমসহ মোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে আশার আলো জাগালেও ৩০ হাজার কোটির বেশি ব্যয়ের এই প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের চাপ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে শীতে শান্ত-স্থির আবার কখনো রুদ্র-স্রোতস্বিনী হয়ে ওঠা পদ্মার বুক মাড়িয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে চলতে থাকা যানবাহনগুলো থেকে দিনদিন বাড়ছে টোল আয়। সেতু দিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চলাচল করছে নির্বিঘ্নে।

পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয় জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকে শুরু হয় যানবাহন চলাচলসহ টোল আদায় কার্যক্রম। এর মধ্যে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম।

এদিকে সেতু চালুর পরদিন থেকে চলতি বছরের অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত গত সাড়ে তিন বছরে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমসহ সেতুর উভয় প্রান্ত মিলে সর্বমোট টোল আদায় দুই হাজার ৯৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আর এতে করে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত মিলিয়ে দুই প্রান্ত দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে দুই কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫টি। একইসাথে চলতি বছরের এদিন পর্যন্ত সর্বশেষ গত ৬ মাসে সেতুর উভয়প্রান্ত মিলে ইটিসিএসসহ মোট ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৯৮টি যানবাহন পারাপার হয়। এসব যানবাহন থেকে মোট টোল আদায় হয়েছে ৪২৫ কোটি ৭৩ লাখ ২৩ হাজার ৯০০ টাকা।

পদ্মা সেতুর সাড়ে তিন বছর পদার্পণে টোল এবং ট্রাফিক পরিসংখ্যানের এসব তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয় জানান, সেতু চালুর পর থেকে চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম বা ইটিসিএস যানবাহনসহ সর্বমোট পারপার করা হয়েছে দুই কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫টি যানবাহন। এদিন পর্যন্ত সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৫০ টাকা। অন্যদিকে ইটিসিএস যানবাহন ব্যতীত সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৩৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫০ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের টোল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালুর প্রথম বছরে ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৩ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পার হয় এবং টোল আদায় হয় মোট ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ টাকা।

দ্বিতীয় বছরে ২০২৩ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৪ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬৮ লাখ এক হাজার ৩৭৪টি এবং মোট টোল আদায় হয়েছে ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকার।

সেতু চালুর তৃতীয় বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৫ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত গত এক বছরে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টি। এ সময় রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৫৮ কোটি ৮৭ লাখ দুই হাজার ৫৫০ টাকা।

এতে করে ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকে চলতি বছরের (২০২৫) ২৪ জুন পর্যন্ত গত তিন বছরে মাওয়া ও জাজিরা উভয়প্রান্তের টোল প্লাজায় সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা। এদিন পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ক্রেডিট যানবাহনসহ সর্বমোট পারপার করা হয়েছিল এক কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন। সেতুর তৃতীয় বছরের শেষ দিকে গেলো জুনে ঈদুল আজহার সময় বেশ কিছু দিন আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছিল টোল আদায়ের পরিমাণ।

অন্যদিকে সেতু চালুর পর থেকে গেল ঈদুল আজহায় সেতুর টোল আদায়ে ১ম ও ৫ম রেকর্ড গড়েছে পরপর দুইদিন। গত ৫ জুন ও ৬ জুন পরপর দুইদিন ছিল সেতুর টোল আদায়ে যথাক্রমে সর্বোচ্চ ১ম ও ৫ম রেকর্ড গড়ে। এর মধ্যে গেল ঈদের আগ মুহূর্তে ৫ জুন ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারাপারের গাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৪৮৭টি। যা পদ্মা সেতুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপার। এতে ওইদিন টোল আদায় হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। যা পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। এর পরদিনই ৬ জুন ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারাপারের গাড়ির সংখ্যা হয়েছে ৪০ হাজার ১১৮টি। ওইদিন টোল রাজস্বে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা। যা পদ্মা সেতুর ইতিহাসে টোল আদায়ে সর্বোচ্চ পঞ্চম রেকর্ড বলে জানা গেছে।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২ সালের ২৫ জুন সেতু চালু হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড হয়েছিল। ওই দিন মোট ৪৫ হাজার ২০৪টি যানবাহন থেকে ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা টোল আদায় হয়। একই বছরের ১৪ জুন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ভেঙে যায়। ওইদিন ৪৪ হাজার ৩৩টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা।

অন্যদিকে ২০২৩ সালের ২৭ জুন সেতু দিয়ে ৪৩ হাজার ১৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এদিন টোল আদায় হয় ৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা। যা ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ টোল।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে চালু হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের অন্যতম বৃহৎ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি। প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করে সর্বশেষ চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে চারটি কিস্তি করে সর্বমোট ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসল পরিশোধ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে সেতুটির ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে এবং এই ঋণ পরিশোধের জন্য ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময় পাবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পদ্মা সেতুতে সাড়ে তিন বছরে টোল আদায় ২৯৩৬ কোটি টাকা

প্রকাশের সময় : ১২:১৬:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :

২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পর গত সাড়ে তিন বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে দুই কোটির বেশি যানবাহন পারাপার করেছে। আর এসব যানবাহন থেকে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমসহ মোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে আশার আলো জাগালেও ৩০ হাজার কোটির বেশি ব্যয়ের এই প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের চাপ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে শীতে শান্ত-স্থির আবার কখনো রুদ্র-স্রোতস্বিনী হয়ে ওঠা পদ্মার বুক মাড়িয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে চলতে থাকা যানবাহনগুলো থেকে দিনদিন বাড়ছে টোল আয়। সেতু দিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চলাচল করছে নির্বিঘ্নে।

পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয় জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকে শুরু হয় যানবাহন চলাচলসহ টোল আদায় কার্যক্রম। এর মধ্যে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম।

এদিকে সেতু চালুর পরদিন থেকে চলতি বছরের অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত গত সাড়ে তিন বছরে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমসহ সেতুর উভয় প্রান্ত মিলে সর্বমোট টোল আদায় দুই হাজার ৯৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আর এতে করে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত মিলিয়ে দুই প্রান্ত দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে দুই কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫টি। একইসাথে চলতি বছরের এদিন পর্যন্ত সর্বশেষ গত ৬ মাসে সেতুর উভয়প্রান্ত মিলে ইটিসিএসসহ মোট ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৯৮টি যানবাহন পারাপার হয়। এসব যানবাহন থেকে মোট টোল আদায় হয়েছে ৪২৫ কোটি ৭৩ লাখ ২৩ হাজার ৯০০ টাকা।

পদ্মা সেতুর সাড়ে তিন বছর পদার্পণে টোল এবং ট্রাফিক পরিসংখ্যানের এসব তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয় জানান, সেতু চালুর পর থেকে চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম বা ইটিসিএস যানবাহনসহ সর্বমোট পারপার করা হয়েছে দুই কোটি ২৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫টি যানবাহন। এদিন পর্যন্ত সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৫০ টাকা। অন্যদিকে ইটিসিএস যানবাহন ব্যতীত সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৩৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫০ টাকা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের টোল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালুর প্রথম বছরে ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৩ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত মোট ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পার হয় এবং টোল আদায় হয় মোট ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ টাকা।

দ্বিতীয় বছরে ২০২৩ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৪ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬৮ লাখ এক হাজার ৩৭৪টি এবং মোট টোল আদায় হয়েছে ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকার।

সেতু চালুর তৃতীয় বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৫ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত গত এক বছরে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টি। এ সময় রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৫৮ কোটি ৮৭ লাখ দুই হাজার ৫৫০ টাকা।

এতে করে ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকে চলতি বছরের (২০২৫) ২৪ জুন পর্যন্ত গত তিন বছরে মাওয়া ও জাজিরা উভয়প্রান্তের টোল প্লাজায় সর্বমোট টোল আদায় হয়েছে দুই হাজার ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা। এদিন পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ক্রেডিট যানবাহনসহ সর্বমোট পারপার করা হয়েছিল এক কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন। সেতুর তৃতীয় বছরের শেষ দিকে গেলো জুনে ঈদুল আজহার সময় বেশ কিছু দিন আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছিল টোল আদায়ের পরিমাণ।

অন্যদিকে সেতু চালুর পর থেকে গেল ঈদুল আজহায় সেতুর টোল আদায়ে ১ম ও ৫ম রেকর্ড গড়েছে পরপর দুইদিন। গত ৫ জুন ও ৬ জুন পরপর দুইদিন ছিল সেতুর টোল আদায়ে যথাক্রমে সর্বোচ্চ ১ম ও ৫ম রেকর্ড গড়ে। এর মধ্যে গেল ঈদের আগ মুহূর্তে ৫ জুন ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারাপারের গাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৪৮৭টি। যা পদ্মা সেতুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপার। এতে ওইদিন টোল আদায় হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। যা পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। এর পরদিনই ৬ জুন ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারাপারের গাড়ির সংখ্যা হয়েছে ৪০ হাজার ১১৮টি। ওইদিন টোল রাজস্বে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা। যা পদ্মা সেতুর ইতিহাসে টোল আদায়ে সর্বোচ্চ পঞ্চম রেকর্ড বলে জানা গেছে।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২ সালের ২৫ জুন সেতু চালু হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড হয়েছিল। ওই দিন মোট ৪৫ হাজার ২০৪টি যানবাহন থেকে ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা টোল আদায় হয়। একই বছরের ১৪ জুন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ভেঙে যায়। ওইদিন ৪৪ হাজার ৩৩টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয় ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা।

অন্যদিকে ২০২৩ সালের ২৭ জুন সেতু দিয়ে ৪৩ হাজার ১৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এদিন টোল আদায় হয় ৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা। যা ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ টোল।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে চালু হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দেশের অন্যতম বৃহৎ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি। প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করে সর্বশেষ চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে প্রায় এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে চারটি কিস্তি করে সর্বমোট ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসল পরিশোধ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে সেতুটির ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে এবং এই ঋণ পরিশোধের জন্য ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময় পাবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।