Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে দেশের রিজার্ভ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাবদ ১২১ কোটি ডলার পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব মতে, দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২০.৬৬ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত সপ্তাহে ২৩১ মিলিয়ন বা ২৩.১ কোটি ডলার খরচের পর এ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৬.৪২ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৬৪২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।

আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠিত তহবিলের অর্থ ৫.৭৬ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০.৬৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০.৬৬ বিলিয়ন। এখান থেকে আকুর বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ কমে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) রাতে জানান, আকুর দেনা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে এখনো দেনা সমন্বয় করার ভাউচার পাওয়া যায়নি। যে কারণে রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ জানা যাচ্ছে না। তবে আকুর দেনা বাবদ যে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তা বাদ যাবে। একই সঙ্গে রিজার্ভে আরও কিছু ডলার যোগ হয়েছে, সেগুলোসহ আজ রিজার্ভের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।

সূত্র জানায়, আকুর সদস্য ৮টি দেশ দুই মাসের বাকিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করে। প্রতি দুই মাস পর এর মাধ্যমে দেনা-পাওনা সমন্বয় করা হয়। বাংলাদেশ আকুর সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে আমদানি বেশি করে, রপ্তানি করে কম। যে কারণে প্রতি কিস্তিতেই বাংলাদেশকে মোটা অঙ্কের দেনা একসঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। এতে রিজার্ভ কমে যায়।

মঙ্গলবার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের আমদানির দেনা বাবদ ১১৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ দেনা পরিশোধ করার আগে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৫১ কোটি ডলার। দেনা পরিশোধ করার পর রিজার্ভ ২ হাজার ৫৩৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৭৫ কেটি ডলার থেকে কমে ১ হাজার ৯৫৮ কোটি ডলারে নেমেছে।

তবে আজ রিজার্ভের চূড়ান্ত হিসাব করা হলে এর পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। কারণ, এর মধ্যে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের আরও কিছু ডলার রিজার্ভে যোগ হবে। এতে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। তবে নিট হিসাবে খুব একটা বাড়বে না। কারণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমদানির দায় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

গত অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এসব ডলার দিয়ে ব্যাংকগুলো আমদানির দায় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে। তবে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে ব্যাংকগুলো এলসির দায় ও বৈদেশিক ঋণ শোধে হিমশিম খাচ্ছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে ডলারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য। এখন ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের বিপরীতে বাড়তি টাকা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এতে কিছু ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

আকুর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা দুই মাসের বাকিতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৩৪ কোটি ডলারে। ওই সময়ে রিজর্ভ কমেছে ২ হাজার ২৭২ কোটি ডলার। এদিকে আইএমএফ-এর বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়েও রিজার্ভ বেশ কম। যে কারণে আইএমএফ তার বেঁধে দেওয়া সীমা কমানোর প্রস্তাব করেছে। আইএমএফ-এর নির্বাহী বোর্ড অনুমোদন করলে তা চূড়ান্ত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১.৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ২৫.০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ তে ৩০.৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৩২.৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩২.৭১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩৬.৩ বিলিয়ন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৪৬.৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১.৮২ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩১ বিলিয়ন ডলার।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

জাকসু নির্বাচনের দায়িত্ব ছাড়লেন বিএনপিপন্থি ৩ শিক্ষক

১৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে দেশের রিজার্ভ

প্রকাশের সময় : ১১:২৭:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাবদ ১২১ কোটি ডলার পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব মতে, দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২০.৬৬ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত সপ্তাহে ২৩১ মিলিয়ন বা ২৩.১ কোটি ডলার খরচের পর এ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৬.৪২ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৬৪২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।

আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠিত তহবিলের অর্থ ৫.৭৬ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০.৬৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০.৬৬ বিলিয়ন। এখান থেকে আকুর বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ কমে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) রাতে জানান, আকুর দেনা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে এখনো দেনা সমন্বয় করার ভাউচার পাওয়া যায়নি। যে কারণে রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ জানা যাচ্ছে না। তবে আকুর দেনা বাবদ যে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তা বাদ যাবে। একই সঙ্গে রিজার্ভে আরও কিছু ডলার যোগ হয়েছে, সেগুলোসহ আজ রিজার্ভের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।

সূত্র জানায়, আকুর সদস্য ৮টি দেশ দুই মাসের বাকিতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করে। প্রতি দুই মাস পর এর মাধ্যমে দেনা-পাওনা সমন্বয় করা হয়। বাংলাদেশ আকুর সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে আমদানি বেশি করে, রপ্তানি করে কম। যে কারণে প্রতি কিস্তিতেই বাংলাদেশকে মোটা অঙ্কের দেনা একসঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। এতে রিজার্ভ কমে যায়।

মঙ্গলবার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের আমদানির দেনা বাবদ ১১৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ দেনা পরিশোধ করার আগে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৫১ কোটি ডলার। দেনা পরিশোধ করার পর রিজার্ভ ২ হাজার ৫৩৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৭৫ কেটি ডলার থেকে কমে ১ হাজার ৯৫৮ কোটি ডলারে নেমেছে।

তবে আজ রিজার্ভের চূড়ান্ত হিসাব করা হলে এর পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। কারণ, এর মধ্যে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের আরও কিছু ডলার রিজার্ভে যোগ হবে। এতে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে। তবে নিট হিসাবে খুব একটা বাড়বে না। কারণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমদানির দায় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

গত অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এসব ডলার দিয়ে ব্যাংকগুলো আমদানির দায় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে। তবে এখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে ব্যাংকগুলো এলসির দায় ও বৈদেশিক ঋণ শোধে হিমশিম খাচ্ছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে ডলারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজস্ব উৎস থেকে ডলার সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য। এখন ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের বিপরীতে বাড়তি টাকা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এতে কিছু ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

আকুর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা দুই মাসের বাকিতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৩৪ কোটি ডলারে। ওই সময়ে রিজর্ভ কমেছে ২ হাজার ২৭২ কোটি ডলার। এদিকে আইএমএফ-এর বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়েও রিজার্ভ বেশ কম। যে কারণে আইএমএফ তার বেঁধে দেওয়া সীমা কমানোর প্রস্তাব করেছে। আইএমএফ-এর নির্বাহী বোর্ড অনুমোদন করলে তা চূড়ান্ত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২১.৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ২৫.০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫-১৬ তে ৩০.৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৩২.৯৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৩২.৭১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩৬.৩ বিলিয়ন। ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ৪৬.৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪১.৮২ বিলিয়ন ডলার এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩১ বিলিয়ন ডলার।