নিজস্ব প্রতিবেদক :
১০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগের আল্টিমেটামসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করীম বলেন, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করে ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবন্ধিত এবং প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয় গঠিত জাতীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপি সকল নেতা-কর্মীকে মুক্তি ও রাষ্ট্রপতিকে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। দাবি না মানলে সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ও অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপি সহ সকল বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সমর্থন ঘোষণা করছি।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, সরকারের কাছে একটা মেসেজ (বার্তা) দিতে চাই, সেই ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন ২০২৪ সালে এই দেশে হবে না। আজকে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে সবার এক দফা এক দাবি, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। আর এই দাবি ন্যায্য দাবি।
রেজাউল করীম বলেন, ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমি চিন্তিত ছিলাম, গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে যে অবস্থা হয়েছিল, তারপরও যে আপনারা এসেছেন, আমি এতে একই সঙ্গে আনন্দিত ও বিস্মিত।
চরমোনাই পীর বলেন, আপনাদের এই সমাবেশে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটা মেসেজ চলে গেছে যে, ইসলামী আন্দোলন বিপদ দেখে পিছে দৌড় দেওয়ার দল নয়। বিভিন্ন ভয়-ভীতির মধ্যেও মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ইসলামী আন্দোলন মাঠে থাকবে। এই মেসেজ সব স্থানে চলে গেছে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ৩ নভেম্বর সরকারের মেয়াদ শেষ। তাই আমরা এই দিনে মহাসমাবেশ করেছি। আমাদের এক দাবি, জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। সরকারবিরোধী দলকে দমন করার জন্য আমাদের বাসকে আটকে দেওয়া হয়, জনসভায় শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু যখন পানির স্রোত বইতে থাকবে, তখন কেউ কিন্তু এই স্রোতকে থামিয়ে রাখতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বাংলাদেশের এই মহাসমাবেশ আজ মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমি চিন্তিত ছিলাম চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর যে দমন-পীড়ন এবং রাস্তাঘাটে বাধা দেওয়া হচ্ছে তাতে আমাদের এই মহাসমাবেশে আপনারা আসতে পারেন কি না। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি, আমার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। আমার মন বলছে, ইসলামী আন্দোলন যে দাবি নিয়ে মাঠে এসেছে সেই দাবির সঙ্গে আল্লাহর রহমত রয়েছে, এই মহাসমাবেশ সেটিই প্রমাণ করে।
রেজাউল করিম বলেন, আজ বাংলাদেশে একটা মেসেজ চলে গেছে, ন্যায্য দাবি আদায়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পেছনে দৌড় দেওয়ার মতো দল নয়। জালিমের অত্যাচার সহ্য করে পিছু হটা দল ইসলামী আন্দোলন নয়। যদি জালিমের জুলুম এই বাংলাদেশের ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঘাম কিংবা রক্ত ঝরাতে পিছু হটবে না। আমরা হাজার ভয়ভীতি আর বাধার মধ্যেও দাবি আদায়ে প্রস্তুত।
দলটির আমির বলেন, আজ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার সংসদে চেপে বসে আছে। বাংলাদেশের মতো একটি সুন্দর দেশকে অসুন্দর দেশে পরিণত করার চক্রান্ত করছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধ্বংস করার নীলনকশা করেছে। আমি আওয়ামী সরকারকে বলে দিতে চাই, আপনারা যা মন চায় তা করবেন আর দেশের মানুষ তা বসে বসে দেখবে এবং নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে তা হবে না। সেই ১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচন বাংলার জমিনে আর মানুষ হতে দেবে না। আমি আওয়ামী লীগ সরকারকে জানাতে চাই, আজ বাংলাদেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ দেশের মানুষ আজ এক দফা দাবিতে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জনগণের এ যৌক্তিক দাবির বিরোধিতা যারা করবে তারাই এ দেশের শত্রু।
দলটির শীর্ষ এ নেতা বলেন, পাকিস্তান সরকার যখন নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করেছিল তখন এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ মানুষকে নিয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। আজ তিন নভেম্বর, আজই সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সে কারণে আমরা আজকের তারিখ মহাসমাবেশ করার জন্য নির্ধারণ করেছি। সেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আজ আমরা পরিষ্কার ঘোষণা করছি, যদি অংশগ্রহণমূলক ও জাতীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না দেন, তাহলে সামনে অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের তরফ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো
১. ১০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে সব নিবন্ধিত ও প্রতিনিধিত্বশীল আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
২. বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপিসহ সব ওলামায়ে কেরামকে মুক্তি দিতে হবে এবং রাষ্ট্রপতিকে সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. সরকার এসব দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনরত সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
৪. জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষে বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহের সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থন ঘোষণা করছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমেদ, উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুল আউয়াল, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, যুগ্ম-মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, উপদেষ্টা মুফতি এসহাক মো. আবুল খায়ের এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম।