আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে এবং চলমান এই সংঘাত সুদানজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেনাবাহিনী এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামে আধাসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা তৃতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০০ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ৪১ জন বেসামরিক নাগরিক।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (১৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ টানা তৃতীয় দিনের মতো ধরে চলছে। উভয় বাহিনীই রাজধানী খার্তুমের প্রধান প্রধান স্থাপনা দখলের দাবি করেছে। আহতের আনুমানিক সংখ্যা ১১০০ বলেও জানিয়েছে তারা।
আরএসএফ দাবি করেছে, তারা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, আর্মি প্রধানের বাসভবন, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন এবং খার্তুমে বিমানবন্দন দখলে নিয়েছেন। তবে দেশটির সেনাবাহিনী এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে এর আগে রোববার (১৬ এপ্রিল) আহতদের উদ্ধারের জন্য উভয়পক্ষ সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতিরে সম্মত হয়। তবে এর পরেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।
চিকিৎসকরা সতর্ক করেছে, খার্তুমের হাসপাতালের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। রোববার সকালেও প্রত্যক্ষদর্শীরা খার্তুম, ওমডুমম্যান এবং বাহরিতে আর্টিলারির গুলিবর্ষণের বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এ ছাড়া সুদানের বন্দর শহরেও গুলির শব্দ শোনা গেছে। পূর্বে এ শহরটিতে সংঘর্ষের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সুদানে ২০২১ সালের অক্টোবরে এক সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এর পর থেকে দেশটি মূলত জেনারেলরাই চালাচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে ক্ষমতার কেন্দ্রে এখন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তিনিই কার্যত এখন দেশটির নেতা।
তার প্রতি অনুগত সামরিক ইউনিটগুলোর সঙ্গে লড়াই চলছে আরএসএফের। এ বাহিনীর নেতৃত্বে আছেন সুদানের উপ-নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো। তিনি হেমেডটি নামেও পরিচিত।
হেমেডটি বলেন, তার বাহিনী সব সেনা ঘাঁটি দখল না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। এর পাল্টা সুদানের সশস্ত্র বাহিনীগুলোও আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ-কে ধ্বংস না করা পর্যন্ত কোন ধরণের আপোস-আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিল’-এর নামে দেশ পরিচালনা করছিলেন।
এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।
বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
সেনাবাহিনী বলছে, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে, এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সূত্র : খবর বিবিসি।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

























