Dhaka শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাত বছরে প্রথমবারের মতো খুললো সৌদির ইরানি দূতাবাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সৌদি আরবে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস পুনরায় খুলেছে। বুধবার (১২ এপ্রিল) সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দূতাবাসটির গেট পুনরায় খোলা হয়। এ বিষয়ে রয়টার্সে একজন প্রতিনিধি বলেছেন, সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার একটি চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে চলমান সংঘাতের নিরসন হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হবে।

রয়টার্সের ওই সাংবাদিক বলেছেন, রিয়াদে ইরানি দূতাবাসের কম্পাউন্ডের ভারী গেট খোলা ছিল। একটি প্রতিনিধিদল ওই দূতাবাসের প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছে। সেখানে একটি সাদা ট্রাককে গেটে আসতে দেখা গেছে। একটি ইরানি কূটনীতিক প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওই দূতাবাস পুনরায় খোলা হয়।

এ বিষয়ে ইরানি গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্প্রতি যে চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য ইরানি প্রতিনিধিদল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছেছে। প্রতিনিধিদলটি সৌদি আরবে ইরানের কূটনীতিক মিশন খোলার বিষয়ে আলোচনা করবে। বুধবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি এমন তথ্য দেন।

নাসের বলেন, বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ইরানের একটি কূটনীতিক প্রতিনিধিদল রিয়াদে পৌঁছেছে। ওই প্রতিনিধিদলকে সৌদি কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের স্বাগত জানান।

তিনি বলেন, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ ও বন্দরনগরী জেদ্দায় ইরানের দু’টি ওয়ার্কিং গ্রুপ দূতাবাস ও কনসুলেট অফিস খোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসিতেও স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়োগ করবে ইরান।

ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও জানান, হজের চূড়ান্ত পর্বের কাজ শুরুর আগেই ইরান সৌদি আরবে তার দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিস খোলার সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে।

এদিকে সৌদি আরবের যে কূটনীতিক প্রতিনিধিদল গত শনিবার ইরান এসে পৌঁছেছে তারা বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) তেহরান থেকে পবিত্র মাশহাদ শহরে যাবে।

গত সপ্তাহে ইরান এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিদল তেহরান ও রিয়াদ সফর করছে। এর আগে সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গত মাসে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়।

সৌদি আরব শিয়া মতাবলম্বী এক ধর্মগুরুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর পর ২০১৬ সালে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের সঙ্গে সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে তেহরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানিরা।

পরে ওই বছর ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। একই সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় রিয়াদ। পাশাপাশি তেহরান থেকেও নিজেদের দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে নিয় রিয়াদ। এরপর থেকে ইরানের মিশনটি বন্ধ ছিল।

২০১৫ সালে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনের যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার এক বছর আগে থেকেই ইরানের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি-সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজধানী সানার দখল নেওয়ার পর দেশটিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সৌদি ও আমিরাত।

সেই সময় ইরান হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ করে রিয়াদ। ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের সীমান্তের শহরগুলোতে সশস্ত্র ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি আরামকোর তেল স্থাপনায় হামলা চালায় হুথিরা। হামলায় স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় আরামকোর তেল উৎপাদন অর্ধেক কমে যায়।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক ও প্রধান তেল উৎপাদক দুই দেশের দীর্ঘদিনের বৈরিতা ওই অঞ্চলের আশপাশের সংঘাতে ইন্ধন জোগাতে সহায়তা করেছিল। গত মাসে চীনের মধ্যস্থতায় এই কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় উভয় দেশের মাঝে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তির আওতায় কূটনৈতিক মিশন পুনরায় চালু করতে রাজি হয় উভয় দেশ। সূত্র : রয়টার্স, প্রেস টিভি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

সাত বছরে প্রথমবারের মতো খুললো সৌদির ইরানি দূতাবাস

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৮:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সৌদি আরবে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস পুনরায় খুলেছে। বুধবার (১২ এপ্রিল) সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দূতাবাসটির গেট পুনরায় খোলা হয়। এ বিষয়ে রয়টার্সে একজন প্রতিনিধি বলেছেন, সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার একটি চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে চলমান সংঘাতের নিরসন হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হবে।

রয়টার্সের ওই সাংবাদিক বলেছেন, রিয়াদে ইরানি দূতাবাসের কম্পাউন্ডের ভারী গেট খোলা ছিল। একটি প্রতিনিধিদল ওই দূতাবাসের প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছে। সেখানে একটি সাদা ট্রাককে গেটে আসতে দেখা গেছে। একটি ইরানি কূটনীতিক প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওই দূতাবাস পুনরায় খোলা হয়।

এ বিষয়ে ইরানি গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্প্রতি যে চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আলোচনার জন্য ইরানি প্রতিনিধিদল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছেছে। প্রতিনিধিদলটি সৌদি আরবে ইরানের কূটনীতিক মিশন খোলার বিষয়ে আলোচনা করবে। বুধবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি এমন তথ্য দেন।

নাসের বলেন, বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ইরানের একটি কূটনীতিক প্রতিনিধিদল রিয়াদে পৌঁছেছে। ওই প্রতিনিধিদলকে সৌদি কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের স্বাগত জানান।

তিনি বলেন, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ ও বন্দরনগরী জেদ্দায় ইরানের দু’টি ওয়ার্কিং গ্রুপ দূতাবাস ও কনসুলেট অফিস খোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসিতেও স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়োগ করবে ইরান।

ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও জানান, হজের চূড়ান্ত পর্বের কাজ শুরুর আগেই ইরান সৌদি আরবে তার দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিস খোলার সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে।

এদিকে সৌদি আরবের যে কূটনীতিক প্রতিনিধিদল গত শনিবার ইরান এসে পৌঁছেছে তারা বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) তেহরান থেকে পবিত্র মাশহাদ শহরে যাবে।

গত সপ্তাহে ইরান এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিদল তেহরান ও রিয়াদ সফর করছে। এর আগে সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গত মাসে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়।

সৌদি আরব শিয়া মতাবলম্বী এক ধর্মগুরুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর পর ২০১৬ সালে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের সঙ্গে সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে তেহরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানিরা।

পরে ওই বছর ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। একই সঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় রিয়াদ। পাশাপাশি তেহরান থেকেও নিজেদের দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে নিয় রিয়াদ। এরপর থেকে ইরানের মিশনটি বন্ধ ছিল।

২০১৫ সালে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনের যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার এক বছর আগে থেকেই ইরানের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি-সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজধানী সানার দখল নেওয়ার পর দেশটিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সৌদি ও আমিরাত।

সেই সময় ইরান হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ করে রিয়াদ। ইয়েমেনের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের সীমান্তের শহরগুলোতে সশস্ত্র ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

২০১৯ সালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি আরামকোর তেল স্থাপনায় হামলা চালায় হুথিরা। হামলায় স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় আরামকোর তেল উৎপাদন অর্ধেক কমে যায়।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক ও প্রধান তেল উৎপাদক দুই দেশের দীর্ঘদিনের বৈরিতা ওই অঞ্চলের আশপাশের সংঘাতে ইন্ধন জোগাতে সহায়তা করেছিল। গত মাসে চীনের মধ্যস্থতায় এই কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় উভয় দেশের মাঝে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তির আওতায় কূটনৈতিক মিশন পুনরায় চালু করতে রাজি হয় উভয় দেশ। সূত্র : রয়টার্স, প্রেস টিভি।