নিজস্ব প্রতিবেদক :
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা তদন্তের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে এবং সেখানেই এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
রোববার (১৮ জুন) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হল রুমে সদ্য পদায়নকৃত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য আয়োজিত ‘১৫১তম রিফ্রেশার কোর্স’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সমাজের প্রত্যেকটা অপরাধই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিছু কিছু অপরাধ যেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। আমার মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এবং আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি এই বলে যে, তদন্ত শেষ হওয়ার পরে এই মামলা অবশ্যই দ্রুতবিচার আদালতে, দ্রুততম সময়ে অবশ্যই ন্যায়বিচার এবং সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে যেখানে যাওয়া উচিত সেখানেই নেওয়া হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমি এ মৃত্যুর জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সমাজের প্রত্যেক অপরাধকে গুরুত্বপূর্ণ (বিচার হওয়া উচিত)। কিন্তু কিছু কিছু অপরাধ আছে যেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। আমার মনে হয় এই যে হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
মন্ত্রী বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি এই বলে, তদন্ত শেষ হওয়ার পরে এই মামলা অবশ্যই দ্রুত বিচার আদালতে অবশ্যই দ্রুত সময়ে ন্যায় বিচার এবং সুষ্ঠু বিচারের জন্য যেখানে নিয়ে যাওয়া উচিত সেখানেই নেওয়া হবে। এই হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। অপরাধীদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আনিসুল হক বলেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও টেকসই অর্থনীতির দেশ গঠনের মৌলিক ভিত্তি হলো শান্তি, স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন, যেগুলোর প্রতিটির সঙ্গে ‘ন্যায়বিচার’ শব্দটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ন্যায়বিচার পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার।
ন্যায়বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে ন্যায়বিচার চারটি নাগরিক গুণাবলির একটি; অন্যগুলো হলো প্রজ্ঞা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সাহস। প্রত্যেক বিচারকের এসব গুণাবলি থাকা দরকার। কারণ তাদের কলম দিয়ে নিত্যদিন ন্যায়বিচারের হাজারও বাণী ঝড়ে।
দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, এর আগে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারকদের প্রথম পদায়ন করার পর ম্যাজিস্ট্রেসি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। এবারই প্রথম বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সদ্য পদায়নকৃত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্টোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য এ ধরণের প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করেছে, যা চলমান থাকবে। ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়ানোর ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।
এসময় আইনমন্ত্রী এই প্রশিক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং কোর্সটি আয়োজন করার জন্য ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানান।
২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৭২৫ জন বিচারককে ভারতের ভূপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমিতে সশরীরে প্রশিক্ষণ প্রদান করার তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেও একটি আন্তর্জাতিক মানের জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ একাডেমিতে বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, ডাক্তারসহ বিচারসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একাডেমি স্থাপনের জন্য প্রকল্প এলাকায় ৩৭ দশমিক ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। চিহ্নিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের বাজেটে ১৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি বিচারক নিয়োগে জোর দেওয়ার বিষয়ে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ১৩২৯ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০৩ জন এবং ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০০ জন বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান প্রমুখ।