Dhaka শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক-দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে শ্যালক-দুলাভাইয়ের প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কোনো পত্রিকায় দুর্নীতির সংবাদ প্রচার হলেই ওই পত্রিকা হাউজে ফোন করে রিপোর্টারের নাম ও ফোন নম্বরটি নিতো তারা। এরপর যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নিউজ হয়েছে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সেই ব্যক্তিকে ফোন করে বিষয়টি দুদক তদন্ত করছে বলে জানানো হতো। তারা চাইলে বিষয়টি রফাদফা করতে পারবেন এমন আশ্বাস দিয়ে ওই ব্যক্তিকে দেখা করতে বলতো। বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠালে তদন্ত রিপোর্ট হালকা করে দেওয়ারও আশ্বাস দিতো। আবার কখনো টিভির রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে কারও অসুস্থতার কথা বলে চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে টাকা নিতো। এভাবে রিয়াজ ও ফিরোজ খান নামে দুজন বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ এলে সংস্থাটি একটি মামলা করে। সেই মামলায় গতরাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাদের থেকে প্রতারণার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।

রোববার (২৪ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন, চক্রের মূলহোতা ফিরোজ খান (৫২), তার শ্যালক মো. হাসান মুন্না (২৮) ও মুন্নার শ্যালক মো. রিয়াজ (১৮)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র, ভিজিটিং কার্ড, বিভিন্ন মডেলের ১১টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন অপারেটের ২৯টি সিম কার্ড ও দুদক কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারদের সবার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলায়। সম্প্রতি দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার ঘটনায় দুদক বাদী হয়ে ডিএমপির রমনা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলায় কয়েকটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়। এরই সূত্র ধরে মামলার তদন্তে নেমে গতকাল (রোববার) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগ।

ডিবি আরও জানায়, চক্রের সদস্যরা কখনো সাংবাদিক আবার কখনো দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। আর এই পরিচয়ের জন্য তারা বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড এবং দুদক কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন।

সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, চক্রটি প্রথমে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও ওয়ার্ড কমিশনারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নিউজ হলে তারা সেই নিউজের ডিটেলস জেনে নিতেন। পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সাংবাদিক পরিচয়ে সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে নানাভাবে আলোচনা করতেন। এরপর দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তাদের ব্যবহার করা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম্বারগুলো বেনামে রেজিস্ট্রেশন করা।

তিনি বলেন, তারা এনটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার, কখনো এসএটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টারসহ একাধিক টিভি ও পত্রিকার সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণা করতেন বলেন স্বীকার করেছেন। রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় দুদকের উল্লিখিত ছয়টি সিম নম্বর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।

অভিযানে প্রতারকদের কাছ থেকে একাধিক সিম জব্দ করা হয়, যা তারা দুদক পরিচয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন। এ চক্রটির বিরুদ্ধে একই অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সাংবাদিক-দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে শ্যালক-দুলাভাইয়ের প্রতারণা

প্রকাশের সময় : ০৯:২৩:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :

কোনো পত্রিকায় দুর্নীতির সংবাদ প্রচার হলেই ওই পত্রিকা হাউজে ফোন করে রিপোর্টারের নাম ও ফোন নম্বরটি নিতো তারা। এরপর যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নিউজ হয়েছে দুদকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সেই ব্যক্তিকে ফোন করে বিষয়টি দুদক তদন্ত করছে বলে জানানো হতো। তারা চাইলে বিষয়টি রফাদফা করতে পারবেন এমন আশ্বাস দিয়ে ওই ব্যক্তিকে দেখা করতে বলতো। বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠালে তদন্ত রিপোর্ট হালকা করে দেওয়ারও আশ্বাস দিতো। আবার কখনো টিভির রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে কারও অসুস্থতার কথা বলে চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে টাকা নিতো। এভাবে রিয়াজ ও ফিরোজ খান নামে দুজন বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ এলে সংস্থাটি একটি মামলা করে। সেই মামলায় গতরাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাদের থেকে প্রতারণার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।

রোববার (২৪ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন, চক্রের মূলহোতা ফিরোজ খান (৫২), তার শ্যালক মো. হাসান মুন্না (২৮) ও মুন্নার শ্যালক মো. রিয়াজ (১৮)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র, ভিজিটিং কার্ড, বিভিন্ন মডেলের ১১টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন অপারেটের ২৯টি সিম কার্ড ও দুদক কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারদের সবার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলায়। সম্প্রতি দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার ঘটনায় দুদক বাদী হয়ে ডিএমপির রমনা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলায় কয়েকটি মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়। এরই সূত্র ধরে মামলার তদন্তে নেমে গতকাল (রোববার) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগ।

ডিবি আরও জানায়, চক্রের সদস্যরা কখনো সাংবাদিক আবার কখনো দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। আর এই পরিচয়ের জন্য তারা বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ড এবং দুদক কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র ব্যবহার করতেন।

সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, চক্রটি প্রথমে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও ওয়ার্ড কমিশনারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নিউজ হলে তারা সেই নিউজের ডিটেলস জেনে নিতেন। পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সাংবাদিক পরিচয়ে সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে নানাভাবে আলোচনা করতেন। এরপর দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তাদের ব্যবহার করা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নাম্বারগুলো বেনামে রেজিস্ট্রেশন করা।

তিনি বলেন, তারা এনটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার, কখনো এসএটিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টারসহ একাধিক টিভি ও পত্রিকার সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণা করতেন বলেন স্বীকার করেছেন। রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় দুদকের উল্লিখিত ছয়টি সিম নম্বর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।

অভিযানে প্রতারকদের কাছ থেকে একাধিক সিম জব্দ করা হয়, যা তারা দুদক পরিচয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন। এ চক্রটির বিরুদ্ধে একই অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।