আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরের বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেল শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারের (এনপিপি) নেতা অনুরা কুমারা দিশানায়েকে। তিনি মার্ক্সবাদী হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন দিসানায়েকেকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, রোববার দ্বিতীয় দফার ভোট গণনা শেষে মার্কসবাদী নেতা অনুরা কুমারা দিশানায়েককে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন। দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহেকে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে হারিয়েছেন অনুরা।
শ্রীলংকার ইতিহাসে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম ধাপে কোনও প্রার্থীই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। তাই নিয়ম অনুযায়ী বিজয়ী নির্ধারণের জন্য দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনা করা হয়। তবে প্রথম দফার ভোট গণনায় এগিয়ে ছিলেন এই ৫৫ বছর বয়সী বামপন্থি রাজনীতিবিদ দিশানায়েকে। দ্বিতীয় দফার ভোট গণনা শেষে ভোটে এগিয়ে থাকা দিশানায়েকেকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো রাজনৈতিক বংশের অধিকারী না হয়েও জনগণের ভোটে তিনিই এগিয়ে গেলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এবং বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাকে হারিয়ে দেশানায়েকেই হলেন শ্রীলঙ্কার দশম প্রেসিডেন্ট।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে অনুঢ়া কুমারা দিশানায়েকের। প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ে তার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি হবে অনাড়ম্বর।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। ওদিকে, মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
অনূঢ়া কুমারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে পরিবারের টানা দেড় দশকের বেশি সময়ের একক আধিপত্যের অবসান ঘটল। ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কা শাসন করেছে দুটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বা তাদের জোট বা তাদেরই কোনো অংশ। এর মধ্যে একটি রাজাপক্ষে পরিবারের নেতৃত্বাধীন দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)। দলটি থেকে একাধিকবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগের আগে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের পরে ব্যাপক বিক্ষোভের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো দেশটিতে। শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, দেশটির বৈধ ১ কোটি ৭০ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনে রেকর্ড ৮৩ দশমিক ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছিল। তারপরও গত শনিবার রাতে ‘জননিরাপত্তার’ স্বার্থে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আজ নির্বাচিত নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ নেওয়ার কথা।