নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাদককারবারি, মানবপাচারকারীসহ যত অপরাধী সবগুলোকে শেখ হাসিনা প্রশ্রয় দিয়েছিলেন, ফলে সমাজে ধর্ষণ-খুন বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। সারা দেশে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে মহিলা দল।
রুহুল কবির রিজভী, দুর্নীতি-লুটপাটের টাকা এখনো সমাজে রয়েছে, এর কারণ হিসেবে বলা যায় একজন সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী বলেছেন, টাকা দিয়ে তার স্বামীকে জেল থেকে বের করে আনবেন। টাকার কী গরম? টাকা দিয়ে আদালত কিনে নেবেন, পুলিশ কিনে নিবেন, এমনকি সবকিছুই করবেন। এটা কিন্তু শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের রেশ। শুধু কি সাজ্জাদ একজনই? অনেক লুটপাটকারি টাকা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। এরাই দেশকে অস্থিতিশীল করবে, বিকৃত করবে। আর দেশ থেকে যারা ভারতে গিয়ে পালিয়ে আছে তারা এগুলো করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা অবলীলায় ভারতীয় যে সংস্কৃতি সেটি চালু রেখেছিল। আমাদের দেশে ভারতীয় সব চ্যানেল অবলীলায় দেখায়, কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমাদের চ্যানেল ওখানে দেখা যায় না, অনুমতি দেয়নি। আর ভারতীয় আগ্রাসন সংস্কৃতি দেখে দেখে আমাদের সমাজের ওপর প্রভাব পড়েছে, নারীর ওপর নিপীড়নের যে বিষয়টি ওখান থেকেই উঠে এসেছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের যে চূড়ান্ত আন্দোলনৃ এটা তো ১৫ বছরের যে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন করেছেন তার চূড়ান্ত বর্হিপ্রকাশ। এ ১৫ বছরের মধ্যে ইলিয়াস নেই, চৌধুরী আলম নেই, সুমন নেই, ৃ অদৃশ্য করা হয়েছেৃ এদেরকে কেন করা হয়েছে? কারণ এরা সোচ্চার ছিলেন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি ঘটানোর জন্য। এ কারণে ওরা জীবন দিয়েছেন, সেই জীবনের একটা চূড়ান্ত বর্হিপ্রকাশ দেখলাম শিশু-তরুণ-কিশোররা জুলাই-আগস্টে তারা জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে।
তিনি বলেন, আমি উপদেষ্টা সাহেবদেরকে বলব- আপনারা এ ১৫ বছর ১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করছেন কেন? এটা তো সব রক্তস্রোত একই সমুদ্রের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে। মোহনার এ মিলিত স্রোতেই শেখ হাসিনা আজকে পালিয়ে গেছেন।
রিজভী বলেন, আপনাদেরকে (উপদেষ্টারা) বলব- আপনারা যে কদিন আছেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করুন। এখন তো মিনিকেট চালের কেজি ৮৫ টাকাৃ এদিকে আপনারা নজর দিন, পাইজাম আর স্বর্ণা চালৃ একেবারে মোটা চাল- সেটার দাম ৫৬/৫৭ টাকা। বিআর-২৮ সেটার দাম ৬২/৬৫ টাকা- এগুলোর দিকে নজর দিন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আপনি প্রধান উপদেষ্টা, মানুষের বিশ্বাস আপনার ওপর। আমরা চাই, আপনার হাত দিয়ে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে। আপনি যে কয়দিন ক্ষমতায় থাকবেন, আপনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, এ ধরনের গভীর বিশ্বাস জনগণের। কিন্তু যদি গড়িমসি হয় তাহলো তো ভিন্নমাত্রা নেবে।’
রিজভী বলেন, আপনার এক উপদেষ্টা ছাত্রদের বলছেন, তোমরা যেভাবে চালাচ্ছো আমাদের, এভাবে পাঁচ বছর চললে দেশ আরও সুন্দর হবে।’ তার মানে নির্বাচনের দরকার নেই? গণতন্ত্রের আরও যে নিশ্চয়তাগুলো আছে- আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, এটা তো গণতন্ত্রের উপাদান। গণতন্ত্রের এসব উপাদান কি শেষ হয়ে যাবে? আমি সেই উপদেষ্টাকে বলতে চাই, এটার জন্যই তো লড়াই। কি সবক দিচ্ছেন? তাদের তো ফ্যাসিবাদ অথবা ডিক্টেটরশিপের দিকে আপনারা প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এটা তো ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আজ জনপদের পর জনপদে যে অসন্তোষ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেটা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ফসল। এই দুঃশাসনের বিকৃত ফসলের মূলোৎপাটন করে আমাদের সমাজকে পবিত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল একটি অগ্রগণ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে- এই প্রত্যাশা আমি করছি।
মাগুরার শিশুটিকে ধর্ষণসহ (পরে মৃত্যু হয়েছে) সব অপরাধের বিচার দাবি করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘সরকারকে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের অধিকার আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের অপরাধের বিচার হতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, নুসরাত পারুল থেকে শুরু করে গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে একের পর এক নারীরা ধর্ষিতা হয়েছে- যারা ধর্ষণকারী তাদের কোনো বিচার হয়নি, এমনকি হত্যাকারী যারা তাদের কোনো বিচার হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কারণ যারা গুম-খুন-হত্যা করেছিলো তারাই কিন্তু সেই সময়ে রক্ষক হিসেবে অন্যদের দিয়ে কাজগুলো করাত। আজকে আমরা এমন একজনের কাছে দায়িত্ব তুলে দিয়েছি যাকে আমরা মনে করি শান্তির প্রতীক। আমরা ড. ইউনূস তার কাছে আশা করছি আমাদের দেশ নিরাপদে থাকবে, আমাদের মা-বোনরা নিরাপদে থাকবে, সবাই মুক্ত স্বাধীন কথা বলতে পারবে।’
গত ৪ বছরে ৭ হাজার শিশুসহ ৪৩ হাজার নারী ধর্ষণে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এগুলোর কোনো বিচার হয়নি। আমরা দেখেছি মাগুরার শিশু আছিয়া হত্যার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে যেন মনে হয় মহোৎসব লেগেছে এক সপ্তাহের মধ্যে ১১ জন মহিলা-শিশু ধর্ষিতা হয়েছে। এই ধর্ষিতা হওয়ার কারণটা কী?’
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, জেবা খানসহ মহিলা দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।