নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিদায়ের ধ্বনি চারদিকে বাজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (১২ মে) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা-১২ আসন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।
তিনি বলেন, যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছেন, সেই শহীদ রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১১ মে) মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলাটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে? কারণ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের এখন ডুবু ডুবু অবস্থা। শেখ হাসিনার বিদায়ের ধ্বনি চারদিকে বাজছে। উনি এখন ক্ষমতায় থাকার জন্য যেন তেন চেষ্টা করবেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সেদিন কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে সাইফুল আলম নীরবের সাথে দেখা হলো। শুধুমাত্র এই কথাই বললো, ‘রিজভী ভাই আমাকে ২৪ ঘণ্টা লকাপে রাখা হয়’। কেন সাইফুল আলমকে ২৪ ঘণ্টা লকাপে রাখা হয়? জেলখানাই তো একটা লকাপ। আবার জেলের মধ্যেই নিষ্ঠুর জেল। সে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে পারবে না, শ্বাস নিতে পারবে না, কারাগারের মধ্যে মুক্তভাবে কারো সাথে কথা বলতে পারবে না। কী অপরাধ করেছে সে? সে তো ক্যাসিনো চালায়নি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেনি।
আইজি প্রিজনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি সেনাবাহিনীর লোক, প্রধানমন্ত্রীর এসএসএফের দায়িত্বে ছিলেন। আপনি কারাগারে অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। কারাগারে অনেকের কাছে বাইরে থেকে অনেক কিছু যায়। যারা ডাকাত, প্রকৃত সন্ত্রাসী, তারা অনেক সুযোগ পায়। আর আমাদের বাসা বাড়ি থেকে যদি খাবার যায়, আপনি (আইজি প্রিজন) সেটাও ঢুকতে দেন না।
রিজভী বলেন, আপনি আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার। আপনি আর কী চান? আপনি সরকারকে খুশি করতে চান; দেখুন আমি (আইজি প্রিজন) বিএনপির নেতাদের কী ধরণের নির্যাতন করি। তাহলে আপনার বোধ হয় প্রমোশন হবে। আপনি প্রমোশনের আশায় কারাগারে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে বিএনপির মহাসচিবসহ জাতীয় নেতাদের কথাবার্তা দেখেন ও শোনেন। এই নিপীড়ন তিনি (আইজি প্রিজন) চালাচ্ছেন। সাইফুল আলম নীরব সেই নিপিড়নের অংশ। কারণ আপনার ভালো পোস্টিং দরকার, পদন্নতি দরকার।
অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেই এলাকায় নির্বাচন করে, সাইফুল আলম নীরবও সেই এলাকায় নির্বাচন করে। তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুল আলম নীরবের ভালো চাইবে না। আমার মনে হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে খুশি করতেই সাইফুল আলম নীরবের ওপর এই জুলুম, নির্যাতন, ২৪ ঘণ্টার লকাপ।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, স্বচ্ছ নির্বাচন হবে, বিদেশে যে যাই বলুক। বিদেশের সাথে আপনাদের শত্রুতা কেন। বারবার বিভিন্ন দেশ বলছে, স্বচ্ছ নির্বাচন দিতে হবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার কথার মধ্যে ইঙ্গিত বহন করে, যে আপনাদের উদ্দেশ্য অশুভ।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দিনের আলোতে প্রকাশ্যে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া বিশ্বাস করেন না। এটা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আর ঐতিহ্যের মধ্যেই তো বাকশাল। বাকশাল মানেই তো সব দল বন্ধ। ওই ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়েই তো আপনারা (আওয়ামী লীগ) গত ১৪ বছর জনগণকে কারাগারের মধ্যে ঢুকিয়েছেন। গোটা দেশকে কারাবন্দী করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গত পরশুদিন বলেছিলেন, কালো টাকা দিলে নিয়েন, কিন্তু স্বাধীনভাবে ভোট দিয়েন। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই কথা বলতে পারে? আপনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) শেখ হাসিনার আদর্শে, আওয়ামী চেতনা, লুটপাট ও দুর্নীতির চেতনায় অনুপ্রাণিত। তাই কালো টাকা আপনি নিতে বলছেন। এই অনৈতিক কথার জন্য তার পতত্যাগ করা উচিত।
তিনি বলেন, সরকার প্রধানের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এত অবজ্ঞা কারণ, তার পরিবারের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে কোনো অবদান নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত ও কালিমালিপ্ত করাই বর্তমান সরকার প্রধানের কাজ। এটাই তিনি করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।