Dhaka শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শূন্যের কোটায় নেমেছে অন্ধত্ব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এক সময়ে ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রাতকানা (অন্ধত্ব) রোগের প্রকোপ থাকলেও এখন তা শূন্যের কোঠায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ভিটামিন এ’র পর্যাপ্ততা পেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক নানা জটিলতা দূর হয়।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন এই কর্মসূচি হাতে নেন তখন ৪ শতাংশের বেশি শিশু ভিটামিন এ-এর অভাবে অন্ধুত্বসহ নানা রোগে ভুগত। এছাড়াও এক সময়ে স্টান্টিং অনেক ছিল। পুষ্টির মান বাড়ায় এখন সেটি ২০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী ২ কোটি ৩০ লাখের বেশি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এর মধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুকে নীল রঙের এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুকে একটি করে লাল রঙের ক্যাপুসল খাওয়ানো হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, পৃথিবীর একমাত্র বাংলাদেশই কালাজ্বর থেকে মুক্ত হয়েছে। একইভাবে ফাইলেরিয়াও। আমরা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যে অনেক এগিয়েছি। আগের তুলনায় মাতৃমৃত্যু কমেছে। এটি আরও কমাতে হলে বাল্য বিয়ে রোধ করতে হবে। একজন অসুস্থ মা সন্তান জন্ম দিলে অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারিতে অনেক পিছিয়ে আছি। ক্লিনিক ও হাসপাতালে যাতে নেয় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৮ ঘণ্টা সার্ভিসে হাসপাতালগুলো চলতে পারে না। এগুলো ২৪ ঘণ্টা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়বে, কমবে শিশু ও মাতৃমৃত্যু। একই সঙ্গে অহেতুক কেউ যাতে সি-সেকশন না করায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসার মান বাড়াতে হবে। নার্সের ঘাটতি আগের মত না হলেও চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য নতুন করে ছয় হাজার চিকিৎসা নিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ বাল্যবিয়ে। শিশুদের ভালো রাখতে হলে বাল্যবিয়ে কমাতে হবে। এখনো ৫০ শতাংশ পরিবারে বাল্যবিয়ে হয়। এটা আমরা কমিয়ে আনতে পারলে শিশু ও মায়ের মৃত্যু কমবে। গর্ভবতী মা যদি ভালো থাকে, তাহলে তার গর্বের সন্তানও ভালো থাকবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে আমরা কালাজ্বর নির্মূল করেছি। এশিয়ার মধ্যে ২০তম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ফাইলেরিয়াসিস থেকে মুক্তি পেয়েছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি পদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিজিওনাল ডিরেক্টর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। এসব অর্জনের ফলেই বিশ্বের আশপাশের অনেক দেশ শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পৃথিবীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়জন রিজিওনাল ডিরেক্টরের মধ্যে বাংলাদেশের একজন। এটা আমাদের জন্য বিরাট একটি গর্বের বিষয়। এ অঞ্চলের ২০০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য দেখাশোনা করবেন সায়মা ওয়াজেদ।

তিনি বলেন, একসময় আমাদের দেশে ৪ শতাংশের মতো অন্ধত্ব ছিল, যা এখন শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছি। এর বড় কারণ আমাদের টিকা ব্যবস্থাপনা। আমরা আজ সারা দেশে ২ কোটি ৩০ লাখ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এজন্য আমাদের ২ লাখ ৪০ হাজার ভলান্টিয়ার কাজ করছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও কাজ করছেন। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খেলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এমনকি নানা সংক্রমণ ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

শূন্যের কোটায় নেমেছে অন্ধত্ব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৫:২৩:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এক সময়ে ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রাতকানা (অন্ধত্ব) রোগের প্রকোপ থাকলেও এখন তা শূন্যের কোঠায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ভিটামিন এ’র পর্যাপ্ততা পেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক নানা জটিলতা দূর হয়।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন এই কর্মসূচি হাতে নেন তখন ৪ শতাংশের বেশি শিশু ভিটামিন এ-এর অভাবে অন্ধুত্বসহ নানা রোগে ভুগত। এছাড়াও এক সময়ে স্টান্টিং অনেক ছিল। পুষ্টির মান বাড়ায় এখন সেটি ২০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী ২ কোটি ৩০ লাখের বেশি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এর মধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুকে নীল রঙের এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুকে একটি করে লাল রঙের ক্যাপুসল খাওয়ানো হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, পৃথিবীর একমাত্র বাংলাদেশই কালাজ্বর থেকে মুক্ত হয়েছে। একইভাবে ফাইলেরিয়াও। আমরা মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যে অনেক এগিয়েছি। আগের তুলনায় মাতৃমৃত্যু কমেছে। এটি আরও কমাতে হলে বাল্য বিয়ে রোধ করতে হবে। একজন অসুস্থ মা সন্তান জন্ম দিলে অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারিতে অনেক পিছিয়ে আছি। ক্লিনিক ও হাসপাতালে যাতে নেয় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৮ ঘণ্টা সার্ভিসে হাসপাতালগুলো চলতে পারে না। এগুলো ২৪ ঘণ্টা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়বে, কমবে শিশু ও মাতৃমৃত্যু। একই সঙ্গে অহেতুক কেউ যাতে সি-সেকশন না করায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসার মান বাড়াতে হবে। নার্সের ঘাটতি আগের মত না হলেও চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য নতুন করে ছয় হাজার চিকিৎসা নিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ বাল্যবিয়ে। শিশুদের ভালো রাখতে হলে বাল্যবিয়ে কমাতে হবে। এখনো ৫০ শতাংশ পরিবারে বাল্যবিয়ে হয়। এটা আমরা কমিয়ে আনতে পারলে শিশু ও মায়ের মৃত্যু কমবে। গর্ভবতী মা যদি ভালো থাকে, তাহলে তার গর্বের সন্তানও ভালো থাকবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে আমরা কালাজ্বর নির্মূল করেছি। এশিয়ার মধ্যে ২০তম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ফাইলেরিয়াসিস থেকে মুক্তি পেয়েছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি পদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিজিওনাল ডিরেক্টর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। এসব অর্জনের ফলেই বিশ্বের আশপাশের অনেক দেশ শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পৃথিবীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়জন রিজিওনাল ডিরেক্টরের মধ্যে বাংলাদেশের একজন। এটা আমাদের জন্য বিরাট একটি গর্বের বিষয়। এ অঞ্চলের ২০০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য দেখাশোনা করবেন সায়মা ওয়াজেদ।

তিনি বলেন, একসময় আমাদের দেশে ৪ শতাংশের মতো অন্ধত্ব ছিল, যা এখন শূন্যের কোটায় নিয়ে এসেছি। এর বড় কারণ আমাদের টিকা ব্যবস্থাপনা। আমরা আজ সারা দেশে ২ কোটি ৩০ লাখ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এজন্য আমাদের ২ লাখ ৪০ হাজার ভলান্টিয়ার কাজ করছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও কাজ করছেন। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খেলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এমনকি নানা সংক্রমণ ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া প্রমুখ।