নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা সাত দিন ধরে আন্দোলন করছেন তার সমর্থকেরা। তবে অন্য দিনের মতো বুধবার (২১ মে) নগর ভবনে না গিয়ে মৎস্য ভবন মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা। এতে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বুধবার (২১ মে) সকাল থেকেই মৎস্য ভবন মোড় ও এর আশপাশে জড়ো হন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। তাদেরকে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট গেট, প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবনের মোড়ে জড়ো হন। পরে সবাই একসঙ্গে মৎস্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় চারদিকে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে নগর ভবনের সামনের সড়ক ফাঁকা। সেখানে কোনো লোকজন দেখা যায়নি। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা নগর ভবনের ভেতরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। সেই সঙ্গে অন্যান্য দিনের মতো আজও নগরভবনের বিভিন্ন বিভাগের অফিসে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন তারা। ফলে আজও বন্ধ আছে সব ধরনের সেবা কার্যক্রম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার (২১ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগর ভবনের সামনে এসে জড়ো হন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে নগর ভবনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নগর ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বন্ধ।
সকাল ১০টার দিকে ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে উচ্চ আদালত তথা মৎস্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন। তারা অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দাও, দিতে হবে, দফা এক দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ, আসিফ ভূইয়ার কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, শপথ নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না স্লোগান দেন। এ কারণে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ দেখা গেছে।
মৎস্য ভবনের সামনে আন্দোলনে অংশ নেওয়া লালবাগের গোলাম কাদের বলেন, ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা এই জায়গা ছাড়বো না। আজ উচ্চ আদালতে তার মেয়র শপথ নেওয়া নিয়ে একটা রিটের রায় হবে। আমরা রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
তবে গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
এরপর মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।