নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে ভোটের চিন্তা থাকবে না। জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে আওয়ামী লীগ। লক্ষ্য স্থির রেখে পরিকল্পনার জন্য দেশে দারিদ্র্যতা হ্রাস পেয়েছে। মানুষের সেবা করলে জনপ্রতিনিধিদের কেউ হারাতে পারবে না। ভবিষ্যতে ভোটের চিন্তাও থাকবে না।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর এবং ৫ জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ আপনাদের বিরল সম্মান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে থেকে তাদের দুঃখ দুর্দশা ভাগ করে সে সম্মান আপনাদের ধরে রাখতে হবে। আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে ভোটের কোনো চিন্তা থাকবে না। মানুষ আপনাদের ওপর আস্থা রাখবে, বিশ্বাস রাখবে। এই কথাটা আপনারা মাথায় রাখবেন। জনসেবার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন, সেটাই আমরা চাই। নিজেদের জায়গা থেকে সিটি করপোরেশন ও জেলাকে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাতির পিতা প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ে দশ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করার ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি। আমি সরকারে আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক করলাম। স্থানীয় লোক সেখানে জমি দেয়, আমরা ভবনের ব্যবস্থা করা, চিকিৎসার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যকর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে সেখানে নিয়োগ দেই। ৩০ ধরনের ওষুধ আমরা বিনামূল্যে দিচ্ছি। আপনারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে এসব দিকে নজর দেবেন যেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সঠিকভাবে চলছে কিনা। মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে কিনা। মানুষ সেবা পাওয়াটাই বড় কথা।
তিনি বলেন, গ্রাম বা তৃণমূলকে লক্ষ্য করে আমরা সব উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে থাকি। দেশের উন্নতি করতে হলে গ্রামকে উন্নত করতে হবে। গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করতে হবে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে, তাদের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে হবে। আবার যদি শিল্পাঞ্চলের কথাও চিন্তা করি, তখন আমাদের ভাবতে হবে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের পণ্য উৎপাদন করা। যাতে আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরি হয়। মানুষ যাতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই জনগণ সেবা পায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার যে জনগণের সেবক তা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষ বুঝতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশ চাইবে খাদ্য আমদানির মাধ্যমে তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকি। তবে কোনো বড় দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে না বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের আগে যেটা দরকার, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করেছে, তখন এ দেশের মানুষ অন্তত পক্ষে এটুকু পেয়েছে যে, সরকার জনগণের সেবক—সেবক হিসেবে কাজ করে। যে কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রত্যেকটা এলাকা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়র, কাউন্সিল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে যাতে নির্বাচিত হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের প্রত্যেকটি উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা গ্রামকে লক্ষ্য করে। তৃণমূলকে লক্ষ্য করেই কিন্তু আমাদের সকল পরিকল্পনা নেই। কারণ আমি মনে করি যে, দেশের উন্নতি করতে হলে আমাদের সমস্ত গ্রামগুলোকে আগে উন্নত করতে হবে, গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে হবে, তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে, তাদের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যদি শিল্পায়ন করার কথাও চিন্তা করি, তাহলেও আমাদের এটা ভাবতে হবে যে, আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করেই পণ্য উৎপাদন করা; যাতে আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরি হয়। মানুষ যাতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের উন্নত সেবা প্রদান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা হলো সরকারের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে আমরা ঘোষণা দিয়েছি আমার গ্রাম আমার শহর। অর্থাৎ গ্রামের মানুষ নাগরিক সকল সুবিধা পাবে।
এ সময় কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উন্নয়ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজকে গত ১৫ বছরে আমি অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকে যার বয়স ১৫ বছর, সে হয়তো ভাবতেও পারবে না যে, ১৫ বছর আগে—অর্থাৎ ২০০৯ সালের আগের বাংলাদেশ কী অবস্থায় ছিল! আজকের বাংলাদেশে সেখান থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে; পাঁচ গুণ আমরা বৃদ্ধি করেছি। সব থেকে বড় কথা দারিদ্র্যের হার আমরা পেয়েছিলাম ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আমরা তা কমিয়ে ১৮ দশমিক সাত শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, অন্তত আমরা ১৬ বা ১৭ শতাংশের নামিয়ে আনব। যেটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান। আমরা সেটা করতে পারতাম, যদি কোভিড-১৯ এর অতিমারি না দেখা দিতো। আর এই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হতো, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি; প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তেলের দাম বেড়ে গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে—এগুলো যদি না হতো, আমরা কিন্তু আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের দারিদ্র্যের হার আরও কমাতে পারতাম।
অতি দরিদ্র প্রায় ২৫ ভাগের উপরে ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেটা আমরা পাঁচ দশমিক ছয় ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এত দ্রুত অতি দরিদ্রের হার কমানো, আমার মনে হয়, পৃথিবীর কোনো দেশ এটা পারেনি। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে, এটা আওয়ামী লীগই পারে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা খুব পরিকল্পিতভাবে পরিকল্পনা নিয়েছি এবং আমরা লক্ষ্য স্থির করে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমাদের এখন লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে কেউ আর ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, অতি দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না।
শপথ নেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র একরামুল হক টিটু।
একই অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহণ করেন কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা।
দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা হলেন, কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান, ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল মিয়া এবং হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলেয়া আক্তার।
পরে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।