নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি সরকার মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ কলেজের ৫ নম্বর ভবনের সামনে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজের দুর্ঘটনাকবলিত হায়দার আলী ভবন পরিদর্শন করেন আইন উপদেষ্টাসহ শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আসিফ নজরুল বলেন, আপনাদের দাবির সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত। আপনারা যে দাবিগুলো করেছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি আপনাদের সব দাবি মেনে নেব। অভিভাবক হিসেবে আমরা সহানুভূতি জানাতে এখানে ছুটে এসেছি। আপনাদের দাবি মেনে নেব। কোমলমতি যারা প্রাণ হারিয়েছে অবশ্যই তাদের প্রকৃত অবস্থা জানানো হবে। কতজন শহীদ হয়েছে, কতজন আহত হয়েছে প্রকৃত তথ্য জানানো হবে। কনফারেন্স রুমে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সব তথ্য জানানো হবে। যে বাহিনী আপনাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষমা চাইছি। সবার দাবি মেনে নিয়েছি। আসুন যারা আহত-নিহত হয়েছে সবার পাশে দাঁড়াই।
এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ছয়টি দাবির প্রত্যেকটিই যৌক্তিক বলে মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে নিহত ও আহতের তথ্য থাকছে। কেউ নিখোঁজ থাকলে সে তথ্য থাকছে। এখান থেকে তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। নিহত ও আহত পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনকালে কয়েকজন সেনাসদস্য কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর মারধরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।’
আরও বলা হয়, ‘জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমান বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলেও আইন উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের জানান। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের বলেন, আগামী ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ নিয়মিত পরীক্ষা শেষে ঘোষণা করা হবে।’
শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৬ দফা দাবি হলো
১. নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
২. আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৩. শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলা— এই জঘন্য ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো প্লেনগুলো বাতিল করে আধুনিক প্লেন চালু করতে হবে।
৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিবর্তন করে আরো মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিহতদের সঠিক সংখ্যা শতাধিক হলেও এর সঠিক তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, হতাহতের সংখ্যা গোপন করার দাবি সঠিক নয়। এসব দাবিতে সকাল থেকো বিক্ষোভ করছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয়।
সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি স্কুল চত্বরের একটি দোতলা ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৮ জন।