নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভারত থেকে অল্প দামে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, ভারত সরকার দুবাইয়ের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ১২০০ ডলারে। সেখানে আমরা ৮০০ ডলারে নিয়ে এসেছি। আমরা অনেক নেগোশিয়েট করেছি। তারা যে দাম ধরেছিল সেই দামে আমরা ভর্তুকি দিয়ে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়তে পারব না। আমাদের সিনিয়র বাণিজ্য সচিব অনেক পরিশ্রম করেছেন। টিসিবির টিমও সঙ্গে ছিল।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ আনা-নেওয়ার বিষয়ে আমাদের ঝুঁকি নিতে হয়েছে। পেঁয়াজ আনা, দরদাম ঠিক করা প্রত্যেকটা জিনিসই কিন্তু আমরা নিজেরা বসে করেছি। পেঁয়াজের দাম যদি হঠাৎ করে কমে যেত, সেটার কিন্তু একটা সম্ভাবনা ছিল। তারপরও আমরা ঝুঁকিটা নিয়েছি। এই ঝুঁকি সাধারণ মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি পেঁয়াজের মান নিয়ে সন্তুষ্ট। অন্তত এই পেঁয়াজ ১৫ দিন সংরক্ষণ করে বাজারে বিক্রি করা যায়। আমরা এই পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছি। এখন আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হলো। বাকি পেঁয়াজগুলো আনতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি কত সময়ে আমরা পেঁয়াজগুলো ভারত থেকে আনতে পারব।
তিনি বলেন, এখন ১৬৫০ টন পেঁয়াজ এসেছে। বাকি পেঁয়াজগুলো ধীরে ধীরে চলে আসবে। আমরা চাই না আমাদের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। ভারতের বাইরে আমাদের পেঁয়াজের জায়গা হচ্ছে মিশর ও তুর্কি। সেখান থেকে জাহাজে পেঁয়াজে আনতে হয় এবং এটা আনতে অনেক সময় লাগে। ভারতে নির্বাচন চলছে। তাদের ওখানে কৃষক আন্দোলন চলছে। এরপরও কিন্তু তারা তাদের কমিটমেন্ট রেখেছে। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে তারা তাদের কথা রেখেছে। তাদের ট্রেন আমাদের সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত এসে পেঁয়াজ দিয়ে গেছে।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পেঁয়াজ রপ্তানি করায় ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতে একটি নির্বাচন চলছে, কৃষক আন্দোলন হচ্ছে, তাদেরও ভোক্তা আছে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা তাদের কমিটমেন্ট রেখেছে। আমাদের কাউন্টার পার্ট হচ্ছে পীযূষ গোয়েল। তিনি বলেছেন রমজানের মধ্যেই আমরা পেঁয়াজ পাবো। তিনি তার কথা রেখেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ। ভারত সরকার এ অনুমতি দেওয়া নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। তারপরও তার চেষ্টায় অনুমতি দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের কারণেই আমরা পেঁয়াজ পেয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্টক তৈরি করবো। বাজার ব্যবস্থাপনা একটি বিজ্ঞান-অংক। এটি ছক মতো সাজাতে পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনেক সময় আমরা চাইলেই পণ্য সরবরাহ করতে পারি না, পাই না।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য। এটা আনার ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি ছিল। ফাইনালি যখন আমরা পেলাম তখনও আমরা একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম যে আমরা এ পেঁয়াজ এনে রোজা শেষ হওয়ার আগে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবো কিনা। আপনারা বিশ্বাসও করবেন না এ পেঁয়াজ দিল্লি থেকে লোডিং হয়ে দর্শনা হয়ে ট্রাকে আজ এখানে আসছে। এটা আনার জন্য অস্বাভাবিক লজিস্টিক প্রয়োজন। যেটা টিসিবি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি পেঁয়াজও নষ্ট না হয়ে দেশে এসেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে হয়েছে। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। তারপরও আমরা এ ঝুঁকি নিয়েছি। এটি সাধারণ মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচারক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান প্রমুখ।