আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতে দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে আফগানিস্তান। নয়াদিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণসহ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে এ ঘোষণা দিয়েছে কাবুল।
ভারতের আফগান দূতাবাস শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে, রোববার (১ অক্টোবর) থেকে নয়াদিল্লিতে আফগানিস্তানের দূতাবাসের কাজকর্ম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু আফগান নাগরিকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া সংক্রান্ত ‘কনসুলার সার্ভিস’ আপাতত চালু থাকবে। খবর এনডিটিভির
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে তিন পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে ১ অক্টোবর থেকে দূতাবাস বন্ধের এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ভারতে আফগান দূতাবাস বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আমাদের অনুরোধ, এর আগে ভারত সরকারের কাছে জমা দেয়া চার দফা যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বিশেষ করে দূতাবাস প্রাঙ্গণে যেন আফগানিস্তানের পতাকা উড়াতে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় এবং কাবুলের বৈধ সরকারের কাছে দূতাবাসের সবকিছু যেন হস্তান্তর করা হয়।’
ভারতে আফগান রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ফরিদ মাহমুদজাই, যিনি তালেবানপূর্ববর্তী আশরাফ গনি সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। তবে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পরও তিনিই ভারতীয় আফগান দূতাবাসের প্রধান রয়ে গেছেন।
পরে ট্রেড কাউন্সিলর কাদির শাহ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে নিজেকে দূতাবাসটির তালেবান দ্বারা নিযুক্ত চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দাবি করেন। যদিও ভারতের আফগান দূতাবাসের দেয়া বিবৃতিতে কূটনৈতিক মিশনটিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে।
ভারত এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে নয়াদিল্লির কাবুল দূতাবাসে আগের সরকারের পতাকা উড়ানো হবে, নাকি বর্তমান তালেবানের পতাকা উড়ানোর অনুমতি দেয়া হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ভারত সরকার বলে আসছে, আফগানিস্তানের মাটি সন্ত্রাসীদের হাতে যাক বা সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যবহৃত হোক তা তারা চায় না।
কাবুলের বর্তমান তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। কিন্তু কাবুলে ভারতসহ ১২টি দেশের দূতাবাস এখনও চালু রয়েছে। আফগানদের জন্য চালু করা মানবিক সাহায্য, বাণিজ্য ও মেডিক্যাল সাহায্য চালু রাখার জন্য দূতাবাস খোলা রাখা হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার।
আফগান দূতাবাসের যত অভিযোগ
নয়াদিল্লিতে কার্যক্রম বন্ধের জন্য বেশ কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে আফগান দূতাবাস
ভারত সরকারের অসহযোগিতা:
গুরত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজে ভারত সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা মেলেনি বলে অভিযোগ করেছে আফগান দূতাবাস। এটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা বাধাগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আফগান স্বার্থ পূরণে ব্যর্থতা :
নয়াদিল্লির দূতাবাস আফগানিস্তান ও এর নাগরিকদের প্রত্যাশিত স্বার্থ ও প্রয়োজনীয়তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এর জন্যও অবশ্য ভারত সরকারের অসহযোগিতা ও কাবুলে বৈধ সরকারের অনুপস্থিতিকে দায়ী করা হয়েছে।
কর্মী সংকট:
দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে উঠেছিল বলে জানানো হয়েছে। কার্যক্রম বন্ধের পর ভিয়েনা কনভেনশনের নীতি অনুসারে দূতাবাসের সব সম্পত্তি ও স্থাপনা ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জিম্মায় চলে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দূতাবাস স্বীকার করছে, এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ কেউ কাবুল থেকে সমর্থন ও নির্দেশনা পেতে পারেন, যা আমাদের বর্তমান কর্মপন্থা থেকে ভিন্ন হতে পারে।
আফগান-ভারত সম্পর্ক
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। দেশটিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন এবং কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
বিগত আশরাফ ঘানি সরকারের আমলে ভারতে আফগান রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ফরিদ মামুন্দজ। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পরও দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন তিনি।
কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিলে ক্ষমতার লড়াইয়ের সম্মুখীন হয় দিল্লির আফগান দূতাবাস। সেই সময় তালেবানরা বর্তমান রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুন্দজের পরিবর্তে একজন নতুন মিশন প্রধান নিযুক্ত করে বলে শোনা যায়।
২০২০ সাল থেকে দিল্লিতে আফগান দূতাবাসের ট্রেড কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করা কাদির শাহ নামে এক কর্মকর্তা এপ্রিলের শেষের দিকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে দাবি করেন, চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছে তালেবান প্রশাসন।
তবে দূতাবাস এক বিবৃতিতে জোর দিয়ে জানায়, তাদের নেতৃত্বের কোনো পরিবর্তন হয়নি।