Dhaka সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চরম অবনতি হয়েছে : ড. ফাহমিদা খাতুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চরম অবনতি হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যাংক খাতে অলিগার্ক তৈরি হয়েছে। এ প্রবণতা আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে ব্যাংক খাতের ওপর সিপিডি আয়োজিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চলনায় এ সংলাপ চলছে। সাবেক পরিকল্পমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ব্যাংকার মোহাম্মদ নূরুল আমিন, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাসহ অনেকে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।

ফাহমিদা খান বলেন, সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি ও স্বচ্ছতা না থাকার কারণে মন্দঋণ বেড়েছে। আর মন্দঋণ পুরো অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ব্যাংক ঋণের বড় অংশ এখন ইচ্ছাকৃত খেলাপি। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় কিন্তু ফেরত দিতে হবে তেমন কোনো দায়বদ্ধতা তাদের ভেতরে কাজ করে না। অন্য দিকে কিছু ভাল গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঋণ পরিশোধ করছে। এ অবস্থা আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ব্যাংকিং কমিশন তৈরি করে ব্যাংকিং খাতের শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমনের উদ্যোগের পরামর্শ দেন এই গবেষক।

তিনি বলেন, ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফসিল, অবলোপন সবই নিজেদের মতো করে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরের চাপে কিংবা নিজেরা ইচ্ছা করে স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এ অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে নীতি ভুল হয়। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রিয়েল টাইম তথ্য দেওয়া হয়। অথচ আমাদের এখানে সেটা নিশ্চিত না করে উল্টো তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরাতে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বাংলাদেশ ব্যাংক) নিজে যখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। তারা নিজেরা স্বাধীন বলা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের অধীনস্থ করা হচ্ছে বা কাজ করতে হচ্ছে অথচ তারা স্বাধীন। এ অবস্থায় ব্যাংকখাতের স্বাস্থ্য ফেরাতে স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই; যারা ব্যাংকের সার্বিক স্বাস্থ্য দেখবে এবং তুলে ধরবে। কেবল কমিশন গঠন করলেই হবে না, স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে কমিশনের।

খেলাপি নিয়ে ড. ফাহমিদা বলেন, গত ১০ বছরে চারগুণ বেড়েছে খেলাপি ঋণ। এর আগে যেখানে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ছিল সেখান থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় এসেছে। খারাপ অবস্থানে শুধু সরকারি না বেসরকারি ব্যাংকও একই অবস্থানে। তবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো ভালো আছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে তথ্য দিচ্ছে না, তার মানে তারা সেটা ফুলফিল করতে পারে না।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে ক্রমান্বয়ে তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। শরীয়া খাতের ব্যাংকে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তারল্য ছিল ৩৯ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকটির তারল্য ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসলামী ব্যাংকের ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২২ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে অর্থঋণ আদালতের মামলায় আটকে থাকা এক লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে খারাপ ঋণ আরও বেশি।

তিনি বলেন, দেশের আর্থিক খাত ব্যাংক নির্ভর। দেশের উন্নয়নে এ খাতের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অথচ সেই ব্যাংক খাতে ভঙ্গুরতা দেখা দিয়েছে। সুশাসন-জবাবদিহিতার হরণ ঘটেছে। ঋণ অনুমোদন, পুনঃতপশিল, অবলোপন সবই নিজেদের মতো করে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরের চাপে কিংবা নিজেরা ইচ্ছা করে স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এ অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে নীতি ভুল হয়। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রিয়েল টাইম তথ্য দেওয়া হয়। অথচ আমাদের এখানে সেটা নিশ্চিত না করে উল্টো তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মানে শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সকালে এক রকম নিয়ম করে, বিকেলে আবার আরেকজনের কথা শুনে তা পরিবর্তন করে। আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন দেওয়া আছে। তা অর্জন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সুদহার, ডলারের দর অনেক আগেই বাড়ানো দরকার ছিল। তা না করায় ভালো করতে গিয়ে মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, ডলারের দর বাড়িয়ে কিংবা সুদহার বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি হবে না। প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প, কৃষিতে ঋণ বাড়াতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চরম অবনতি হয়েছে : ড. ফাহমিদা খাতুন

প্রকাশের সময় : ০২:৩৫:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চরম অবনতি হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যাংক খাতে অলিগার্ক তৈরি হয়েছে। এ প্রবণতা আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে ব্যাংক খাতের ওপর সিপিডি আয়োজিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চলনায় এ সংলাপ চলছে। সাবেক পরিকল্পমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ব্যাংকার মোহাম্মদ নূরুল আমিন, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাসহ অনেকে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।

ফাহমিদা খান বলেন, সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি ও স্বচ্ছতা না থাকার কারণে মন্দঋণ বেড়েছে। আর মন্দঋণ পুরো অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ব্যাংক ঋণের বড় অংশ এখন ইচ্ছাকৃত খেলাপি। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় কিন্তু ফেরত দিতে হবে তেমন কোনো দায়বদ্ধতা তাদের ভেতরে কাজ করে না। অন্য দিকে কিছু ভাল গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঋণ পরিশোধ করছে। এ অবস্থা আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ ব্যাংকিং কমিশন তৈরি করে ব্যাংকিং খাতের শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমনের উদ্যোগের পরামর্শ দেন এই গবেষক।

তিনি বলেন, ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফসিল, অবলোপন সবই নিজেদের মতো করে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরের চাপে কিংবা নিজেরা ইচ্ছা করে স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এ অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে নীতি ভুল হয়। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রিয়েল টাইম তথ্য দেওয়া হয়। অথচ আমাদের এখানে সেটা নিশ্চিত না করে উল্টো তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরাতে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বাংলাদেশ ব্যাংক) নিজে যখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। তারা নিজেরা স্বাধীন বলা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের অধীনস্থ করা হচ্ছে বা কাজ করতে হচ্ছে অথচ তারা স্বাধীন। এ অবস্থায় ব্যাংকখাতের স্বাস্থ্য ফেরাতে স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই; যারা ব্যাংকের সার্বিক স্বাস্থ্য দেখবে এবং তুলে ধরবে। কেবল কমিশন গঠন করলেই হবে না, স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে কমিশনের।

খেলাপি নিয়ে ড. ফাহমিদা বলেন, গত ১০ বছরে চারগুণ বেড়েছে খেলাপি ঋণ। এর আগে যেখানে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ছিল সেখান থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় এসেছে। খারাপ অবস্থানে শুধু সরকারি না বেসরকারি ব্যাংকও একই অবস্থানে। তবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো ভালো আছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে তথ্য দিচ্ছে না, তার মানে তারা সেটা ফুলফিল করতে পারে না।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে ক্রমান্বয়ে তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। শরীয়া খাতের ব্যাংকে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তারল্য ছিল ৩৯ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকটির তারল্য ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসলামী ব্যাংকের ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মালিকানা পরিবর্তন হয়।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২২ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে অর্থঋণ আদালতের মামলায় আটকে থাকা এক লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে খারাপ ঋণ আরও বেশি।

তিনি বলেন, দেশের আর্থিক খাত ব্যাংক নির্ভর। দেশের উন্নয়নে এ খাতের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অথচ সেই ব্যাংক খাতে ভঙ্গুরতা দেখা দিয়েছে। সুশাসন-জবাবদিহিতার হরণ ঘটেছে। ঋণ অনুমোদন, পুনঃতপশিল, অবলোপন সবই নিজেদের মতো করে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরের চাপে কিংবা নিজেরা ইচ্ছা করে স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এ অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে নীতি ভুল হয়। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রিয়েল টাইম তথ্য দেওয়া হয়। অথচ আমাদের এখানে সেটা নিশ্চিত না করে উল্টো তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মানে শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সকালে এক রকম নিয়ম করে, বিকেলে আবার আরেকজনের কথা শুনে তা পরিবর্তন করে। আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন দেওয়া আছে। তা অর্জন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সুদহার, ডলারের দর অনেক আগেই বাড়ানো দরকার ছিল। তা না করায় ভালো করতে গিয়ে মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, ডলারের দর বাড়িয়ে কিংবা সুদহার বাড়িয়ে প্রবৃদ্ধি হবে না। প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প, কৃষিতে ঋণ বাড়াতে হবে।