নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিচার বিভাগের দক্ষতা অর্জন শুধু প্রশাসনিক লক্ষ্য নয়। এটা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে জুডিসিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে সেমিনারটি হয়।
তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থীদের জন্য সুপ্রিম কোর্টের হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে, যেন বিচারব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হয়। বিচার প্রক্রিয়ার বিলম্ব ও ফাইল জমে থাকার মত সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বিচার বিভাগের সংস্কার কার্যক্রমে উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থনের আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
এ ক্ষেত্রে ইউএনডিপির সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিচার বিভাগের প্রয়োজন অনুযায়ী নীতিগত উন্নয়ন কার্যক্রমে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের সব প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে জনগণের সেবা করে এমন একটি বিচার বিভাগ তৈরি করা একটি একক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। ন্যায়বিচার অবশ্যই একটি বড় শহরের আদালত কক্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দিতে হবে। এটি অর্জনের জন্য, আমরা আইনি সহায়তা পরিষেবার প্রসার, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক বাধা অতিক্রম করার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ বিচারসেবা দিতে দক্ষতা বাড়াতে করণীয় সম্পর্কে আয়োজিত এই সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম সেমিনারে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এসময় প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি আদালতকক্ষে এক বিচারপ্রার্থীর কান্নার ঘটনাটি তুলে ধরেন। যা ‘প্রধান বিচারপতির এজলাসে বিচারপ্রার্থীর কান্না’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, একটি জনকেন্দ্রিক বিচার বিভাগ এমন একটি ব্যবস্থা, যা শুধু বিচারই করে না, অধিকারকেও প্রতিষ্ঠা করে। এটি নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলে, তাদের গ্রহণযোগ্য পরিষেবা নিশ্চি করে এবং স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার মাধ্যমে বিশ্বাস গড়ে তোলে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের প্রতিদিন চালিত করে এবং এটিই ভবিষ্যতের বিচার ব্যবস্থাকে নির্ধারিত করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার ‘রিভিউ’ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে থাকার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ যাতে অযৌক্তিক রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সেমিনারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, জেলা পর্যায়ের বিচারক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন ও আইন কমিশনে নিযুক্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।