নিজস্ব প্রতিবেদক :
কলম-কালিতে আর কারও ভাগ্য নির্ধারণ করবেন না। আর কাউকে দেবেন না ফাঁসি, যাবজ্জীবন কিংবা বেকসুর খালাস। ন্যায়ের পথে লড়াইয়ে বিচারকাজের বৃহস্পতিবার শেষ দিন। দীর্ঘ বিচারক জীবনের বিচারকার্য শেষে অবসরে যাচ্ছেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
২৫ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যাবেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের শরৎকালীন অবকাশ (ছুটি) শুরু হওয়ায় বিচারপতি হিসেবে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) শেষ কর্মদিবস তার। ফলে এদিন শেষবারের মতো এজলাসে বসবেন তিনি।
নিয়ম অনুসারে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) তাকে আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিদায়ী সংবর্ধনা দেবে।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শপথ বাক্য পাঠ করান।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
পড়ালেখা শেষে ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির আইন উপদেষ্টা ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।
২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগে নিয়োগ পান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া তিনি ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৮০ সালের ২৩ এপ্রিল মুন্সেফ হিসেবে বিচার বিভাগের নিয়োগ পান। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পর স্থায়ী নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তিনি আপিল বিভাগে নিয়োগ পান। ২০২১ সালে ১৫ জুলাই অবসরে যান তিনি। এরপর বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী আইন কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিচার বিভাগে গতিশীলতা আনতে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সমন্বয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন, সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, পুরোনো মামলা নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ বেঞ্চ গঠনসহ বিচারকদের পূর্ণ কর্মঘণ্টা কাজে ব্যয় করার নির্দেশনা দিয়ে বেশ কিছু আদেশ জারি করেন। অধস্তন আদালতে বিভাগওয়ারি মামলাজট তদারকি ও পর্যালোচনাসহ মামলা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে হাইকোর্টের আট বিচারপতির নেতৃত্বে পৃথক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। বছরব্যাপী এসব কমিটি নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে। প্রধান বিচারপতি দেশের অধস্তন আদালতগুলো পরিদর্শন করার পাশাপাশি সেখানকার সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন; বিচারক ও আইনজীবীদের মামলাজট কমাতে তাগিদ দেন। এসব তৎপরতা সার্বিকভাবে মামলাজট কমাতে সহায়ক হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব আদালতে বিচারাধীন ছিল ৪২ লাখ ৮ হাজার ৯৮৭টি মামলা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলা ছিল ৪২ লাখ ৩ হাজার ৫১৬টি। এ সময়ে নতুন মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি বেড়েছে।
এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কর্মকালে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত হয় বঙ্গবন্ধুর স্মারকসংবলিত স্তম্ভ ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’। এখানে আরও রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৬৯ আইনজীবীর নামের তালিকা। সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিশ্রামাগার।