আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের হলিউডের বিগত ৬৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্দোলনে নেমেছিলেন চিত্রনাট্যকাররা। তাদের পদাঙ্কই অনুসরণ করলো হলিউডের অভিনেতাদের সংগঠন হলিউড অ্যাক্টরস ইউনিয়ন। বিভিন্ন দাবিতে স্টুডিও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দাবির বনিবনা না হওয়ায় আন্দোলনে নামেন তারা।
মুনাফা থেকে ন্যায্য পাওনা আর ভালো কর্ম পরিবেশের দাবিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন ‘দ্যা স্ক্রিন অ্যাক্টর গিল্ড’ (এসএজি)।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) মধ্যরাতে অ্যাক্টর ইউনিয়নের সভাপতি ফ্র্যাঁ ড্রেশার হলিউডের স্টুডিও মালিকদের কড়া সমালোচনা করেন ধর্মঘটের আহ্বান জানান।
ড্রেশার বলেন, হলিউডে বিনিয়োগকারীরা আজ নিজেদের ওয়ালস্ট্রিট খুলে বসেছে এবং লোভকে প্রাধান্য দিতে তারা এই শিল্পটিকে একটি মেশিনে পরিণত করেছে। তবে তারা মেশিনটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অবদানকারীদের কথা ভুলে যায়। এটি খুবই জঘন্য। তাদের ধিক্কার, তারা ইতিহাসের ভুল পিঠে দাঁড়িয়ে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত একাধিক স্টুডিও-র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক হয় অভিনেতা ইউনিয়নের। কিন্তু ইউনিয়নের প্রতিটি দাবি মেনে নিতে পারেনি স্টুডিও কর্তৃপক্ষ।
অভিনেতাদের দাবি, তাদের বেতন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলিকে জনপ্রিয়তা অনুযায়ী প্রণোদনা দিতে হবে। আগে টেলিভিশনের জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলি ভিউ অনুযায়ী অভিনেতাদের প্রণোদনা দিত। ইউনিয়নের অভিযোগ, নেটফ্লিক্সসহ অন্যান্য অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি ভিউয়ের হিসাব পর্যন্ত দেয় না। ফলে কোনটি জনপ্রিয় হচ্ছে, তা বোঝাও যায় না, প্রণোদনাও দেওয়া হয় না।
এই আলোচনার কয়েক ঘণ্টা আগে, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড, আমেরিকান ফেডারেশন অফ টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টসহ অভিনেতাদের বিভিন্ন সংগঠন ডিজনি, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন এবং অন্যান্য নিয়োগকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানের জোট অ্যালায়েন্স অফ মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রযোজকদের তিন বছরর একটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে তারা বিষয়টি আলোচনায় বসেন কিন্তু কোনো ঐকমত্য না হওয়ায় আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকালে ক্যালিফোর্নিয়ায় নেটফ্লিক্স সদরদফতর ছাড়া প্যারামাউন্ট, ওয়ার্নার ব্রস ও ডিজনির সামনে শিল্পী কুশলীদের জড়ো হওয়ার কথা। এর আগে এসএজির এই ধর্মঘট লসএঞ্জেলস সময়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) মধ্যরাতে শুরু হয়েছে।
প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার শিল্পী কাজ বন্ধ করে দেয়ার কথা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র ও টিভি প্রডাকশনের বড় অংশের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ধর্মঘট ঘোষণার পর সিলিয়ান মারফি, ম্যাট ডামোন এবং এমিলি ব্লান্টের মতো শিল্পীরা লন্ডনে ক্রিস্টোফার নোলানের একটি চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো থেকে ফিরে গেছেন।
শিল্পীদের ইউনিয়ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কম্পিউটার জেনারেটেড চেহারা বা কণ্ঠ যেন শিল্পীদের জায়গায় ব্যবহার না করা হয়।
ধর্মঘটের বিষয়ে ইউনিয়ন যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে অভিনয়শিল্পী ছাড়াও গান, নৃত্য, স্টান্ট পারফর্মার এবং পাপেট বা মোশন পিকচার নিয়ে যারা কাজ করেন তারাও এর আওতায় আছেন। মূলত স্টুডিওগুলোর সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় বুধবার (১২ জুলাই) দ্যা স্ক্রিন অ্যাক্টর গিল্ড-আমেরিকান ফেডারেশন অফ টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্ট বা এসএজি-আফট্রা জানিয়ে দেয় যে তারা স্টুডিওগুলোর সাথে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি।
ফলে আলোচনার জন্য তাদের কমিটি সর্বসম্মতভাবেই ধর্মঘটের প্রস্তাব করে।
তবে স্টুডিওগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন-দ্যা অ্যালায়েন্স অফ মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউচারস বা এএমপিটিপি এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে।
তারা বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত ইন্ডাস্ট্রির ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষকে সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে এএমপিটিপি বলেছে, তারা এ নিয়ে একটি ‘যুগান্তকারী প্রস্তাবে’ একমত হয়েছে যা অভিনয় শিল্পীদের ডিজিটাল প্রতিলিপি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেবে এবং কোনো শিল্পীর ডিজিটাল রেপ্লিকা ব্যবহার করা হলে তার সম্মতি নিতে হবে।
তবে এসএজির পক্ষে থাকা প্রধান আলোচক ডানকান ক্রাবট্রি- আয়ারল্যান্ড বলেন, এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর বিষয়ে এসএজির দাবি ছিল চলচ্চিত্র বা অনুষ্ঠান পুন:প্রচার হলে সেজন্য শিল্পীদের অর্থ দিতে হবে।
অন্যদিকে, রাইটার্স গিল্ড অফ আমেরিকা আরেকটি ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংগঠনের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার সদস্য আছে। তারা পারিশ্রমিক বৃদ্ধি ও ভালো কর্ম পরিবেশের দাবিতে গত ২ মে থেকেই এই ধর্মঘটে আছে।
লেখক এবং শিল্পীদের একযোগে দুটি ধর্মঘট ১৯৬০ সালের পর এই প্রথম। তখন এসএজির নেতৃত্বে ছিলেন অভিনেতা রোনাল্ড রিগ্যান। যিনি পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। আর অভিনয় শিল্পীরা সর্বশেষ ধর্মঘট করেছিলেন ১৯৮০ সালে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ইউনিয়নগুলো ধর্মঘটের ডাক দেয়ার পর ডিজনির সিইও বব আইজার বলেন, শিল্পী ও লেখকদের দাবিগুলো অবাস্তব এবং কোভিড অতিমারিতে ক্ষতি থেকে উত্তরণের চেষ্টায় থাকা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর।
এদিকে তৃতীয় আরেকটি ইউনিয়ন দ্যা ডিরেক্টর গিল্ড অফ আমেরিকার সাথে গত জুনে আলোচনা সফল হওয়ায় তারা এ কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে না। সূত্র : বিবিসি।