Dhaka মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফ্রান্সের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ফ্রান্সে চতুর্থ রাতের মতো মারাত্মক দাঙ্গা, লুটপাট এবং সহিংসতায় উত্তাল দেশটি। বিক্ষোভ দমাতে দেশটির পুলিশ শনিবার (১ জুলাই) ফ্রান্সজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে। রাস্তায় নামানো হয়েছে সাঁজোয়া যান।

গত মঙ্গলবার প্যারিসের উপকণ্ঠে পুলিশের গুলিতে এক তরুণ নিহত হওয়ার পর ফ্রান্সে এই দাঙ্গা শুরু হয়। গত রাতে সর্বশেষ দফা গোলযোগের সময় প্যারিসে বহু দোকানপাট লুট হয়, অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে অ্যাপল স্টোর থেকেও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ভবনেও।

গার্ডিয়ান বলছে, ২০১৮ সালে ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলন শুরুর পর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এবার তার নেতৃত্বে গভীর সংকটে পড়েছেন। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি সামলাতে জরুরি বৈঠক করেছেন ম্যাক্রো।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলজেরীয় এবং মরোক্কান বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল এম গত মঙ্গলবার গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। যে পুলিশ অফিসারের গুলিতে নাহেল মারা যান, তিনি তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছেকৃতভাবে খুনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

নাহেলের মৃত্যু ফ্রান্সে বর্ণবাদ এবং সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠীর মানুষদের প্রতি পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারে ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো ফ্রান্স সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল।

শুক্রবার (৩০ জুন) অন্তত ৪৭০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে ফ্রান্স পুলিশ। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আগের রাতের তুলনায় কালকের পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল। গতকাল প্যারিসের উপকণ্ঠে বিভিন্ন শপিং মলে লুটপাট অব্যাহত ছিল।

শনিবার (১ জুলাই) ভোর নাগাদ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেন, তিনি পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশজুড়ে আমরা ৪৭১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। প্রজাতন্ত্রের জয় হবে দাঙ্গাকারীদের না বলে এসময় উল্লেখ করেন তিনি।

সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে কি না প্রশ্নের উত্তরে ডারমানিন বলেন, একদম স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আমি বলব—আমরা কোনো সম্ভাব্য সমাধান এড়িয়ে যেতে চাইছি না। সামনের কয়েক ঘণ্টা আমরা দেখব, তারপর পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যে পন্থা বেছে নেবেন তা কার্যকর করা হবে।

এর আগে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন বলেছেন, ১৭ বছর বয়সী নাহেলের মৃত্যুতে যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারেন। তবে এই সহিংসতা কোনো যুক্তিতেই মানা যায় না।

পুলিশের গুলিতে নাহেল নিহত হওয়ার পরই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে নানতেরে। তারপর বৃহস্পতিবার বিকেলে এক অনলাইন বার্তায় নাহেলের মা মৌনিয়া তার নিহত ছেলের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে পাশে থাকার জন্য বিক্ষোভকারীদের ধন্যবাদও জানান তিনি। তার এই অনলাইন বার্তা পোস্ট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে আন্দোলন তীব্র রূপ নিতে থাকে।

মূল বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল প্যারিসে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্যারিস বিক্ষোভের কেন্দ্র হিসেবে থাকলেও প্রায় একই পরিস্থিতিতে রয়েছে মার্সেইলি, লিয়ন, তুলুস, স্ট্রাসবুর্গ এবং লিলিসহ আরো কয়েকটি শহর।

তবে দেশটির পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষোভ এখন দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন শহরে সমানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা, সরকারি-বেসরকারি ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট লুটপাট এবং যানবাহন জ্বালিয়ে দিচ্ছে দাঙ্গাকারীরা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দিনে ফ্রান্সজুড়ে ২ হাজারেরও বেশি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

শুক্রবারের সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দাঙ্গায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা এক হাজার ১০০ জন ছাড়িয়ে গেছে এবং তাদের সবারই গড় বয়স ১৭।

দাঙ্গাকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলও। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘শোকপ্রকাশ, সংলাপ এবং পুনর্গঠনের জন্য অবশ্যই সহিংসতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ফ্রান্সের অন্যতম তারকা ফুটবল খেলোয়াড় ও জাতীয় টিমের সদস্য কিলিয়ান এমবাপ্পে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সেই বিবৃতির কপি পোস্ট করেছেন। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফ্রান্সের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন

প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুলাই ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ফ্রান্সে চতুর্থ রাতের মতো মারাত্মক দাঙ্গা, লুটপাট এবং সহিংসতায় উত্তাল দেশটি। বিক্ষোভ দমাতে দেশটির পুলিশ শনিবার (১ জুলাই) ফ্রান্সজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে। রাস্তায় নামানো হয়েছে সাঁজোয়া যান।

গত মঙ্গলবার প্যারিসের উপকণ্ঠে পুলিশের গুলিতে এক তরুণ নিহত হওয়ার পর ফ্রান্সে এই দাঙ্গা শুরু হয়। গত রাতে সর্বশেষ দফা গোলযোগের সময় প্যারিসে বহু দোকানপাট লুট হয়, অনেক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে অ্যাপল স্টোর থেকেও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ভবনেও।

গার্ডিয়ান বলছে, ২০১৮ সালে ইয়োলো ভেস্ট আন্দোলন শুরুর পর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো এবার তার নেতৃত্বে গভীর সংকটে পড়েছেন। ইতোমধ্যে পরিস্থিতি সামলাতে জরুরি বৈঠক করেছেন ম্যাক্রো।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলজেরীয় এবং মরোক্কান বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল এম গত মঙ্গলবার গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। যে পুলিশ অফিসারের গুলিতে নাহেল মারা যান, তিনি তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছেকৃতভাবে খুনের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

নাহেলের মৃত্যু ফ্রান্সে বর্ণবাদ এবং সংখ্যালঘু জাতি-গোষ্ঠীর মানুষদের প্রতি পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণের ব্যাপারে ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুরো ফ্রান্স সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল।

শুক্রবার (৩০ জুন) অন্তত ৪৭০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে ফ্রান্স পুলিশ। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আগের রাতের তুলনায় কালকের পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল। গতকাল প্যারিসের উপকণ্ঠে বিভিন্ন শপিং মলে লুটপাট অব্যাহত ছিল।

শনিবার (১ জুলাই) ভোর নাগাদ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেন, তিনি পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশজুড়ে আমরা ৪৭১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। প্রজাতন্ত্রের জয় হবে দাঙ্গাকারীদের না বলে এসময় উল্লেখ করেন তিনি।

সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে কি না প্রশ্নের উত্তরে ডারমানিন বলেন, একদম স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আমি বলব—আমরা কোনো সম্ভাব্য সমাধান এড়িয়ে যেতে চাইছি না। সামনের কয়েক ঘণ্টা আমরা দেখব, তারপর পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যে পন্থা বেছে নেবেন তা কার্যকর করা হবে।

এর আগে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন বলেছেন, ১৭ বছর বয়সী নাহেলের মৃত্যুতে যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারেন। তবে এই সহিংসতা কোনো যুক্তিতেই মানা যায় না।

পুলিশের গুলিতে নাহেল নিহত হওয়ার পরই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে নানতেরে। তারপর বৃহস্পতিবার বিকেলে এক অনলাইন বার্তায় নাহেলের মা মৌনিয়া তার নিহত ছেলের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে পাশে থাকার জন্য বিক্ষোভকারীদের ধন্যবাদও জানান তিনি। তার এই অনলাইন বার্তা পোস্ট হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে আন্দোলন তীব্র রূপ নিতে থাকে।

মূল বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল প্যারিসে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্যারিস বিক্ষোভের কেন্দ্র হিসেবে থাকলেও প্রায় একই পরিস্থিতিতে রয়েছে মার্সেইলি, লিয়ন, তুলুস, স্ট্রাসবুর্গ এবং লিলিসহ আরো কয়েকটি শহর।

তবে দেশটির পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষোভ এখন দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন শহরে সমানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা, সরকারি-বেসরকারি ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট লুটপাট এবং যানবাহন জ্বালিয়ে দিচ্ছে দাঙ্গাকারীরা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দিনে ফ্রান্সজুড়ে ২ হাজারেরও বেশি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

শুক্রবারের সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দাঙ্গায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা এক হাজার ১০০ জন ছাড়িয়ে গেছে এবং তাদের সবারই গড় বয়স ১৭।

দাঙ্গাকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলও। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘শোকপ্রকাশ, সংলাপ এবং পুনর্গঠনের জন্য অবশ্যই সহিংসতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ফ্রান্সের অন্যতম তারকা ফুটবল খেলোয়াড় ও জাতীয় টিমের সদস্য কিলিয়ান এমবাপ্পে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সেই বিবৃতির কপি পোস্ট করেছেন। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।