Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফৌজদারি অপরাধে গ্রেফতারের পর মুক্ত ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুক্তি পেয়েছেন। নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতে যাওয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর বিচারকের সামনে হাজির করা হয়।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) প্রায় এক ঘণ্টা পর আদালত ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে, আদালতে শুনানিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ প্রাথমিকভাব প্রমাণ হয়নি। সবগুলো অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ট্রাম্প। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ৪ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে আদালত।

তারও আগে আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একপর্যায়ে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তখন আইনি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুনানির পর এ মামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামিন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শেষ পর্যন্ত তিনি জামিন পেয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, আদালত থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।

বিবিসির সংবাদদাতা কাইলা ইপস্টেইন বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের আসনের সরাসরি পাঁচ সারি পেছনে একদল সাংবাদিকের সাথে আমি বসেছিলাম। পুলিশের একটি দল সেখানে নজরদারি করছিল। আদালতে আমাদের ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতেও নিষেধ করা হয়েছিল।

যখন বিচারক জুয়ান মার্চান আদালতে আসেন, তখন ট্রাম্পসহ সবাই উঠে দাঁড়ান। বহুতল এই আদালত ভবনের ১৫ তলা নীচে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক হল্লা চললেও বিচারক মার্চান ঠাণ্ডা একরকম সুরেই আদালত পরিচালনা করছিলেন। এমনকি তিনি আওয়াজও বৃদ্ধি করেননি।

শুনানির সময় বেশিরভাগ সময় জুড়ে আইনজীবীদের সময়সীমা এবং আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই মামলার তাৎপর্য আদালত কক্ষে উপস্থিত কারও বুঝতে ভুল হয়নি। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪ ধরনের অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক, ট্রাম্প বলেন ‘নট গিল্টি’।

এরপর একপর্যায়ে বিচারক মার্চান সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতের সকল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার আছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কিনা? ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যা’।

এরপর বিচারক বলেন, অন্য যেকোন অভিযুক্তের মতো তিনি যদি আদালতে অবাধ্য বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, তাহলে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার হারাতে পারেন।

যখন আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করছিলেন, প্রসিকিউটররা উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুমকিমূলক পোস্ট করেছিলেন যার মধ্যে একটিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে সম্ভাব্য ‘মৃত্যু এবং ধ্বংস’ সম্পর্কে হুমকি দেয়া হয়। ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, তাদের মক্কেল এই মামলায় হতাশ এবং বিরক্ত ছিলেন। যাকে তিনি অবিচার বলে মনে করেন।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গ্রেফতার

আদালতে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চাননি ট্রাম্প। তবে পরে ফ্লোরিডায় নিজের বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটাকে নরকে নিয়ে যাচ্ছেন। গোটা দুনিয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। জীবনে কখনও ভাবিনি আমেরিকায় এ জিনিস হবে। দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য সাহস দেখিয়েছিলাম। যা হয়েছে তা গোটা দেশের জন্য অপমান।

অন্যদিকে ট্রাম্পের আইনজীবী বলেন, অত্যন্ত অপমানজনক এই জেলে যাওয়া। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।

শুনানির পর আদালত থেকে বেরিয়ে নিজের বোয়িং ৫৭৫ জেটে ফ্লোরিডায় ফিরে যান।

আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ট্রাম্প নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায় চলে আসেন। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোয় নিজ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি কড়া ভাষায় বিচার সংশ্লিষ্ট সবার সমালোচনা করেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে কড়া ভাষায় যা বললেন ট্রাম্প

ট্রাম্প তার বক্তব্য শুরু করেন এই বলে, একমাত্র অপরাধ আমি যেটি করেছি, সেটি হলো যারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চায় তাদের কাছ থেকে দেশকে নির্ভয়ে রক্ষা করেছি।

সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যা করেছি দেশের জন্য। দেশ ও জাতি অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে। এখন উগ্র বাম পাগলরা আইন প্রয়োগকারীদের ব্যবহার করে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চায়। আমরা এটা হতে দিতে পারে না। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের প্রিয় দেশটির ওপর কালো মেঘ ভর করেছে। তবুও আমরা আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলব।

ফ্লোরিডায় নিজের সমর্থকদের ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি আমেরিকায় এমন কিছু হতে পারে। দেশ রক্ষায় দৃঢ়তা প্রদর্শন করাই ছিল আমার অপরাধ।

ট্রাম্প বলেন, শুরু থেকে, ডেমোক্র্যাটসরা (জো বাইডেনের দল) আমার ক্যাম্পেইনের ওপর নজরদারি চালিয়েছে। তারা আমার ওপর তদন্তের হামলা চালিয়েছে।

অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেন লড়াই করতে না পারি সে ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। এসব ভুয়া মামলা করা হয়েছে শুধুমাত্র ২০২৪ সালের ভোটকে প্রভাবিত করতে।

অবিলম্বে সবগুলো মামলা খারিজ করার দাবিও করেন তিনি।

এক পর্যায়ে বাইডেন প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, যেকোনো মূল্যে আমাকে কারাগারে পাঠানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে অতি বামপন্থী বিচারকদের। যদিও এসময় তিনি বাইডেনের নাম সরাসরি উচ্চারণ করেননি।

এছাড়া ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি করে জো বাইডেন জয় পেয়েছেন বলে আবারও দাবি করেছেন তিনি।

এরপর নিউইয়র্কের ম্যানহাটন আদালতের জেলা অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগের কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। এই আলভিন ব্রাগই ট্রাম্পকে আদালত পর্যন্ত নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা করেছেন। অ্যাটর্নি ব্রাগকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেছেন, আলভিন ব্রাগ একজন ক্রিমিনাল। তার বিচার হওয়া উচিত অথবা তার পদত্যাগ করা উচিত।

ট্রাম্পের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তথ্যগুলো মিডিয়ায় ফাঁস করেছেন ব্রাগ।

এছাড়া ট্রাম্প বলেন, জেলা অ্যাটর্নির অফিসের একটি ওয়েবপেইজও ছিল। যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এসব করেছে তারা সেখানে বৈঠক করত।

এরপর ম্যানহাটন আদালতের বিচারক জুয়ান মার্চেনের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। সাবেক প্রেসিডেন্টের দাবি, তার বিরুদ্ধে এমন একজন বিচারক বিচার করছেন যার পুরো পরিবার ট্রাম্প বিরোধী। তিনি বলেছেন, আমার একজন ট্রাম্প-ঘৃণাকারী বিচারক আছে, সঙ্গে আছে ট্রাম্প-ঘৃণাকারী স্ত্রী ও পরিবার।

ট্রাম্পের দাবি, বিচারক জুয়ান মার্চেনের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে টুইট করেছিলেন। অপরদিকে তার মেয়ে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হয়ে কাজ করেছেন।

এরপর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খারাপ। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাশিয়া চীনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন? সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। যদি আমি আপনাদের প্রেসিডেন্ট থাকতাম তাহলে এর কিছুই হতো না।

এছাড়া ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি দাবি করেন হান্টার বাইডেন নিজের ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ঠিক করাতে দিয়ে সেটি নিতে ভুলে যান। এরপর ওই ল্যাপটপের ভেতর থেকে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। যেসব তথ্য থেকে জানা যায়, হান্টার তার পরিবারের পরিচয় দিয়ে সুবিধা আদায় করে নিতে চেয়েছিলেন। হান্টার ও জো বাইডেনসহ সবাইকে ‘ক্রিমিনাল পরিবার’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

ট্রাম্পই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হলেন। ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আদালতে হাজির হয়ে পর্ন তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলবেন।

স্টরমির সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখতে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠলেও ট্রাম্প তা অস্বীকার করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন দু’বার অভিশংসিত হওয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।

অন্যদিকে, এই মামলাকে নিজের শক্তিশালী সমর্থন বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। ইতোমধ্যে এই মামলায় লড়াইয়ের জন্য সমর্থকদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছেন আগামী বছর হোয়াইট হাউসে ফেরার ঘোষণা দেওয়া ট্রাম্প।

আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য সোমবার রাতেই ফ্লোরিডায় নিজের বাসস্থান থেকে নিউ ইয়র্কে পৌঁছন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই প্রথম আমেরিকার কোনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ধারায় মামলা দায়ের হলো। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান ট্রাম্পের ব্যাপারে তার কিছু বলার নেই। ইতোমধ্যেই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি ও আল জাজিরা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

ফৌজদারি অপরাধে গ্রেফতারের পর মুক্ত ট্রাম্প

প্রকাশের সময় : ০২:১৫:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ এপ্রিল ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুক্তি পেয়েছেন। নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালতে যাওয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর বিচারকের সামনে হাজির করা হয়।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) প্রায় এক ঘণ্টা পর আদালত ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে, আদালতে শুনানিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ প্রাথমিকভাব প্রমাণ হয়নি। সবগুলো অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ট্রাম্প। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ৪ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে আদালত।

তারও আগে আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একপর্যায়ে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তখন আইনি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুনানির পর এ মামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামিন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শেষ পর্যন্ত তিনি জামিন পেয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, আদালত থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।

বিবিসির সংবাদদাতা কাইলা ইপস্টেইন বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের আসনের সরাসরি পাঁচ সারি পেছনে একদল সাংবাদিকের সাথে আমি বসেছিলাম। পুলিশের একটি দল সেখানে নজরদারি করছিল। আদালতে আমাদের ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতেও নিষেধ করা হয়েছিল।

যখন বিচারক জুয়ান মার্চান আদালতে আসেন, তখন ট্রাম্পসহ সবাই উঠে দাঁড়ান। বহুতল এই আদালত ভবনের ১৫ তলা নীচে গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক হল্লা চললেও বিচারক মার্চান ঠাণ্ডা একরকম সুরেই আদালত পরিচালনা করছিলেন। এমনকি তিনি আওয়াজও বৃদ্ধি করেননি।

শুনানির সময় বেশিরভাগ সময় জুড়ে আইনজীবীদের সময়সীমা এবং আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এই মামলার তাৎপর্য আদালত কক্ষে উপস্থিত কারও বুঝতে ভুল হয়নি। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪ ধরনের অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক, ট্রাম্প বলেন ‘নট গিল্টি’।

এরপর একপর্যায়ে বিচারক মার্চান সরাসরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আদালতের সকল প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার আছে, তিনি সেটা বুঝতে পারছেন কিনা? ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যা’।

এরপর বিচারক বলেন, অন্য যেকোন অভিযুক্তের মতো তিনি যদি আদালতে অবাধ্য বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী আচরণ করেন, তাহলে তিনি বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অধিকার হারাতে পারেন।

যখন আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করছিলেন, প্রসিকিউটররা উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে হুমকিমূলক পোস্ট করেছিলেন যার মধ্যে একটিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে সম্ভাব্য ‘মৃত্যু এবং ধ্বংস’ সম্পর্কে হুমকি দেয়া হয়। ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, তাদের মক্কেল এই মামলায় হতাশ এবং বিরক্ত ছিলেন। যাকে তিনি অবিচার বলে মনে করেন।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গ্রেফতার

আদালতে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চাননি ট্রাম্প। তবে পরে ফ্লোরিডায় নিজের বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটাকে নরকে নিয়ে যাচ্ছেন। গোটা দুনিয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। জীবনে কখনও ভাবিনি আমেরিকায় এ জিনিস হবে। দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য সাহস দেখিয়েছিলাম। যা হয়েছে তা গোটা দেশের জন্য অপমান।

অন্যদিকে ট্রাম্পের আইনজীবী বলেন, অত্যন্ত অপমানজনক এই জেলে যাওয়া। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।

শুনানির পর আদালত থেকে বেরিয়ে নিজের বোয়িং ৫৭৫ জেটে ফ্লোরিডায় ফিরে যান।

আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ট্রাম্প নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায় চলে আসেন। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোয় নিজ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি কড়া ভাষায় বিচার সংশ্লিষ্ট সবার সমালোচনা করেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে কড়া ভাষায় যা বললেন ট্রাম্প

ট্রাম্প তার বক্তব্য শুরু করেন এই বলে, একমাত্র অপরাধ আমি যেটি করেছি, সেটি হলো যারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চায় তাদের কাছ থেকে দেশকে নির্ভয়ে রক্ষা করেছি।

সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যা করেছি দেশের জন্য। দেশ ও জাতি অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে। এখন উগ্র বাম পাগলরা আইন প্রয়োগকারীদের ব্যবহার করে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে চায়। আমরা এটা হতে দিতে পারে না। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের প্রিয় দেশটির ওপর কালো মেঘ ভর করেছে। তবুও আমরা আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলব।

ফ্লোরিডায় নিজের সমর্থকদের ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি আমেরিকায় এমন কিছু হতে পারে। দেশ রক্ষায় দৃঢ়তা প্রদর্শন করাই ছিল আমার অপরাধ।

ট্রাম্প বলেন, শুরু থেকে, ডেমোক্র্যাটসরা (জো বাইডেনের দল) আমার ক্যাম্পেইনের ওপর নজরদারি চালিয়েছে। তারা আমার ওপর তদন্তের হামলা চালিয়েছে।

অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেন লড়াই করতে না পারি সে ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। এসব ভুয়া মামলা করা হয়েছে শুধুমাত্র ২০২৪ সালের ভোটকে প্রভাবিত করতে।

অবিলম্বে সবগুলো মামলা খারিজ করার দাবিও করেন তিনি।

এক পর্যায়ে বাইডেন প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প বলেন, যেকোনো মূল্যে আমাকে কারাগারে পাঠানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে অতি বামপন্থী বিচারকদের। যদিও এসময় তিনি বাইডেনের নাম সরাসরি উচ্চারণ করেননি।

এছাড়া ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি করে জো বাইডেন জয় পেয়েছেন বলে আবারও দাবি করেছেন তিনি।

এরপর নিউইয়র্কের ম্যানহাটন আদালতের জেলা অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগের কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। এই আলভিন ব্রাগই ট্রাম্পকে আদালত পর্যন্ত নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা করেছেন। অ্যাটর্নি ব্রাগকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেছেন, আলভিন ব্রাগ একজন ক্রিমিনাল। তার বিচার হওয়া উচিত অথবা তার পদত্যাগ করা উচিত।

ট্রাম্পের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তথ্যগুলো মিডিয়ায় ফাঁস করেছেন ব্রাগ।

এছাড়া ট্রাম্প বলেন, জেলা অ্যাটর্নির অফিসের একটি ওয়েবপেইজও ছিল। যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এসব করেছে তারা সেখানে বৈঠক করত।

এরপর ম্যানহাটন আদালতের বিচারক জুয়ান মার্চেনের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। সাবেক প্রেসিডেন্টের দাবি, তার বিরুদ্ধে এমন একজন বিচারক বিচার করছেন যার পুরো পরিবার ট্রাম্প বিরোধী। তিনি বলেছেন, আমার একজন ট্রাম্প-ঘৃণাকারী বিচারক আছে, সঙ্গে আছে ট্রাম্প-ঘৃণাকারী স্ত্রী ও পরিবার।

ট্রাম্পের দাবি, বিচারক জুয়ান মার্চেনের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে টুইট করেছিলেন। অপরদিকে তার মেয়ে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হয়ে কাজ করেছেন।

এরপর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খারাপ। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাশিয়া চীনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন? সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। যদি আমি আপনাদের প্রেসিডেন্ট থাকতাম তাহলে এর কিছুই হতো না।

এছাড়া ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি দাবি করেন হান্টার বাইডেন নিজের ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ঠিক করাতে দিয়ে সেটি নিতে ভুলে যান। এরপর ওই ল্যাপটপের ভেতর থেকে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। যেসব তথ্য থেকে জানা যায়, হান্টার তার পরিবারের পরিচয় দিয়ে সুবিধা আদায় করে নিতে চেয়েছিলেন। হান্টার ও জো বাইডেনসহ সবাইকে ‘ক্রিমিনাল পরিবার’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

ট্রাম্পই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হলেন। ৭৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আদালতে হাজির হয়ে পর্ন তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলবেন।

স্টরমির সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখতে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠলেও ট্রাম্প তা অস্বীকার করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন দু’বার অভিশংসিত হওয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।

অন্যদিকে, এই মামলাকে নিজের শক্তিশালী সমর্থন বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। ইতোমধ্যে এই মামলায় লড়াইয়ের জন্য সমর্থকদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছেন আগামী বছর হোয়াইট হাউসে ফেরার ঘোষণা দেওয়া ট্রাম্প।

আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য সোমবার রাতেই ফ্লোরিডায় নিজের বাসস্থান থেকে নিউ ইয়র্কে পৌঁছন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই প্রথম আমেরিকার কোনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ধারায় মামলা দায়ের হলো। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান ট্রাম্পের ব্যাপারে তার কিছু বলার নেই। ইতোমধ্যেই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি ও আল জাজিরা।