Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে লিটনের মাসিকের আয় প্রায় তিন লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কুয়েত প্রবাসী লিটন মিয়া (৩৭) দেশে ফিরে ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত কাজ শুরু করেন। তারই ব্যবস্থাপনায় একজন বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেনি, লিটনের পাওনা টাকাও পরিশোধ করেননি। এ ঘটনায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে নিজেই নামেন প্রতারণায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিসকাউন্টে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার টোপে ফেলেন।

সাশ্রয়ী দামের টিকিট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিতেন, আর সরবরাহ করতেন জাল টিকিট। অভিনব এ প্রতারণায় বিশেষ করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে লিটনের মাসিকের আয় ছিল প্রায় তিন লাখ টাকা। ডিসকাউন্টে এয়ার টিকিট বিক্রির অভিনব এ প্রতারণার অভিযোগে লিটনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার হওয়া বাকিরা হলেন, মো. বেল্লাল হোসেন (৪৭) ও মো. রিয়াজ শেখ (৩৫)।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার ও চেক বইসহ ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, মিন্টু নামে এক কাতার প্রবাসী লিটন মিয়ার কথায় বিশ্বাস করে টিকিট কাটেন। কিন্তু পরে বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন তার টিকিটটি ভুয়া। এরপর তিনি আরেকটি টিকিট কেটে দেশে আসেন। লিটনের দেওয়া একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিন্টু সেই টিকিটের টাকা পরিশোধ করেছিলেন। সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুসন্ধান করে ডিবি জানতে পেরেছে সেটি লিটনের নয়, তার এক আত্মীয়ের নামে খোলা।

হারুন বলেন, আমরা প্রবাসীসহ সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা অনলাইনে ছাড় দেখলেই টিকিট কিনবেন না। প্রতিষ্ঠানটি কোথায়, তারা আদৌ এই ব্যবসা করে কি না সব খোঁজ খবর নিয়ে টিকিট কাটবেন। এমন প্রতারক চক্রকে আমরা এর আগেও গ্রেফতার করেছি। তারা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের ওপর প্যাকেজ দেয়। দেখবেন যে টাকা যেতেই লাগে সেটি তারা কয়েক রাত থাকা-খাওয়ার অফার দিয়ে বসে আছে। মূলত এসব প্রতারণা। এমন অফারের লোভে অনেকে দেখা যায় প্রতারিত হচ্ছে। শেষশেষ সেই টিকিট বুকিংকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে তারা খুঁজে পান না। প্রবাসী ভাইদের অনুরোধ করব, তারা যেন ১৫-২০ শতাংশ ছাড় দেখলেই টিকিট না কাটেন। অন্তত টিকিট কাটার আগে যেন সেটির অফিসটা খুঁজে বের করে তারপর টিকিট কাটেন।

ডিবি প্রধান বলেন, লিটন চক্রের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছেন তারা বেশিরভাগই প্রবাসী শ্রমিক। তারা টিকিট কাটা হলেই মোবাইল বন্ধ করে রাখত। ফলে তাদের সঙ্গে আর পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করতে পারত না।

অনেক প্রবাসী বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিংয়ের সময় জানতে পারেন টিকিটটি ভুয়া। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে এসে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন না। দেখা যায়, ৯৯ ভাগই ঝামেলা মনে করে অভিযোগ করেন না। তাই ডিসকাউন্ট দিলেই যাচাই না করে টিকিট কেনা যাবে না। আর প্রতারিত হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে হবে।

ডিবি প্রধান বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্যাকেজের অফার দেওয়া হচ্ছে। কম দামে ৩-৪ দেশ ঘুরানোর কথা বলা হচ্ছে। দেখা গেলো টিকিট ভুয়া, হোটেল বুকিংয়ের কাগজও ভুয়া দিয়ে দেবে। তাই এমন প্যাকেজ দেখলে যাচাই-বাছাই করে যেন টাকা দেন সবাই।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজানে লেনদেন একটু বেশি হয়। তাই যারা বড় লেনদেন করবেন তারা যেন পুলিশকে অবহিত করেন। বড় অঙ্কের টাকা রিকশা দিয়ে না নিয়ে গাড়িতে নেওয়াই ভালো।

ডিবির প্রত্যেকটা টিম সেহরি-ইফতার ও তারাবির পর যখন পথঘাটে জনসাধারণের চলাচল কমে যায় তখন বিভিন্ন মোড়ে ওত পেতে থাকবে। ছিনতাইকারী-ডাকাতদের ধরার জন্য ডিবির টহল ব্যবস্থা জোরদার আছে বলেও জানান তিনি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে লিটনের মাসিকের আয় প্রায় তিন লাখ টাকা

প্রকাশের সময় : ০৩:২৩:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কুয়েত প্রবাসী লিটন মিয়া (৩৭) দেশে ফিরে ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত কাজ শুরু করেন। তারই ব্যবস্থাপনায় একজন বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেনি, লিটনের পাওনা টাকাও পরিশোধ করেননি। এ ঘটনায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে নিজেই নামেন প্রতারণায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিসকাউন্টে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার টোপে ফেলেন।

সাশ্রয়ী দামের টিকিট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিতেন, আর সরবরাহ করতেন জাল টিকিট। অভিনব এ প্রতারণায় বিশেষ করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে লিটনের মাসিকের আয় ছিল প্রায় তিন লাখ টাকা। ডিসকাউন্টে এয়ার টিকিট বিক্রির অভিনব এ প্রতারণার অভিযোগে লিটনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার হওয়া বাকিরা হলেন, মো. বেল্লাল হোসেন (৪৭) ও মো. রিয়াজ শেখ (৩৫)।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার ও চেক বইসহ ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, মিন্টু নামে এক কাতার প্রবাসী লিটন মিয়ার কথায় বিশ্বাস করে টিকিট কাটেন। কিন্তু পরে বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন তার টিকিটটি ভুয়া। এরপর তিনি আরেকটি টিকিট কেটে দেশে আসেন। লিটনের দেওয়া একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিন্টু সেই টিকিটের টাকা পরিশোধ করেছিলেন। সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুসন্ধান করে ডিবি জানতে পেরেছে সেটি লিটনের নয়, তার এক আত্মীয়ের নামে খোলা।

হারুন বলেন, আমরা প্রবাসীসহ সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা অনলাইনে ছাড় দেখলেই টিকিট কিনবেন না। প্রতিষ্ঠানটি কোথায়, তারা আদৌ এই ব্যবসা করে কি না সব খোঁজ খবর নিয়ে টিকিট কাটবেন। এমন প্রতারক চক্রকে আমরা এর আগেও গ্রেফতার করেছি। তারা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের ওপর প্যাকেজ দেয়। দেখবেন যে টাকা যেতেই লাগে সেটি তারা কয়েক রাত থাকা-খাওয়ার অফার দিয়ে বসে আছে। মূলত এসব প্রতারণা। এমন অফারের লোভে অনেকে দেখা যায় প্রতারিত হচ্ছে। শেষশেষ সেই টিকিট বুকিংকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে তারা খুঁজে পান না। প্রবাসী ভাইদের অনুরোধ করব, তারা যেন ১৫-২০ শতাংশ ছাড় দেখলেই টিকিট না কাটেন। অন্তত টিকিট কাটার আগে যেন সেটির অফিসটা খুঁজে বের করে তারপর টিকিট কাটেন।

ডিবি প্রধান বলেন, লিটন চক্রের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছেন তারা বেশিরভাগই প্রবাসী শ্রমিক। তারা টিকিট কাটা হলেই মোবাইল বন্ধ করে রাখত। ফলে তাদের সঙ্গে আর পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করতে পারত না।

অনেক প্রবাসী বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিংয়ের সময় জানতে পারেন টিকিটটি ভুয়া। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে এসে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন না। দেখা যায়, ৯৯ ভাগই ঝামেলা মনে করে অভিযোগ করেন না। তাই ডিসকাউন্ট দিলেই যাচাই না করে টিকিট কেনা যাবে না। আর প্রতারিত হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে হবে।

ডিবি প্রধান বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্যাকেজের অফার দেওয়া হচ্ছে। কম দামে ৩-৪ দেশ ঘুরানোর কথা বলা হচ্ছে। দেখা গেলো টিকিট ভুয়া, হোটেল বুকিংয়ের কাগজও ভুয়া দিয়ে দেবে। তাই এমন প্যাকেজ দেখলে যাচাই-বাছাই করে যেন টাকা দেন সবাই।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজানে লেনদেন একটু বেশি হয়। তাই যারা বড় লেনদেন করবেন তারা যেন পুলিশকে অবহিত করেন। বড় অঙ্কের টাকা রিকশা দিয়ে না নিয়ে গাড়িতে নেওয়াই ভালো।

ডিবির প্রত্যেকটা টিম সেহরি-ইফতার ও তারাবির পর যখন পথঘাটে জনসাধারণের চলাচল কমে যায় তখন বিভিন্ন মোড়ে ওত পেতে থাকবে। ছিনতাইকারী-ডাকাতদের ধরার জন্য ডিবির টহল ব্যবস্থা জোরদার আছে বলেও জানান তিনি।