Dhaka সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাচার হওয়া অর্থ প্রবাসী আয় হয়ে ফিরে আসছে: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

হঠাৎ করে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসাকে অস্বাভাবিক মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাংলাদেশের শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য, সেখানে বাংলাদেশের মানুষও বেশি। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসছে। পাচারের অর্থ প্রবাসী আয় হয়ে দেশে ফিরছে কি না; প্রশ্ন সংস্থাটির।

শনিবার (২৭ মে) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘স্টট অফ দ্য বাংলাদেশ ইকনোমি’ শীর্ষক সভায় রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র তুলে ধরে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সেখানেই সন্দেহের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি।

প্রবাসী আয়ের তথ্য তুলে ধরে ফাহমিদা বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গেছে। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি থেকে ৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময়ে এসেছে ৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থ বছরের একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বাভাবিক।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, এটা একেবারেই আনইউজাল, কখনোই হয় না। কারণ, আমরা জানি আমাদের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স কোথা থেকে আসে। গত ১০ মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৯ দশমিক ২২ লাখ মানুষ গেছে। সেখান থেকে প্রত্যাশা মতো রেমিট্যান্স আসছে না। লোক যাওয়া ও রেমিট্যান্সের মধ্যে মিসম্যাচ হচ্ছে। এতদিন সৌদি আরব থেকে বেশি রেমিট্যান্স এলেও যুক্তরাষ্ট্র এখন সে জায়গা দখল করেছে।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায় তাদের বেশির ভাগই হোয়াইট কলার জব করে। অনেকেই দেশের ঘরবাড়ি ও জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে চলে যায়। অনেক শিক্ষার্থীও সেদেশে আছে। তারা টাকা পাঠাতে পারে না। তাহলে এত প্রবাসী আয় কারা পাঠাচ্ছে?

তিনি বলেন, এর একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে এমন- যেখান থেকে টাকাটা পাচার হয়েছে সেটা আবার রেমিট্যান্স হয়ে দেশে ফেরত আসছে। রেমিট্যান্সের ওপর যে আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ বা সাবসিডি দেওয়া হচ্ছে সেটার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আরও গভীরে গিয়ে বিষয়টির অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে এমন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমানো হলে তারা স্বস্তি পাবে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং করাও প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।

অভ্যন্তরীণ বাজারে বিশৃঙ্খলার ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানীর মূল্য নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। কারণ অভ্যন্তরীণ বাজারে বিশৃঙ্খলা রয়েছে। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমানো হলে হয়তো স্বস্তি আসবে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং করাও প্রয়োজন। দরিদ্রদের প্রত্যক্ষ সহায়তার আওতা বাড়ানো দরকার। সঠিক ব্যক্তিরা পাচ্ছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রপ্তানি বৃদ্ধির হার ইতিবাচক নয়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হচ্ছে। মে ও জুনে রপ্তানি ৪১ শতাংশ বাড়াতে হবে, যা খুবই কষ্ট সাধ্য। তৈরি পোশাক বহির্ভূত পণ্য কম রপ্তানি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রতিযোগিতা বাড়ছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাচার হওয়া অর্থ প্রবাসী আয় হয়ে ফিরে আসছে: সিপিডি

প্রকাশের সময় : ০৪:০৯:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

হঠাৎ করে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসাকে অস্বাভাবিক মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাংলাদেশের শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য, সেখানে বাংলাদেশের মানুষও বেশি। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসছে। পাচারের অর্থ প্রবাসী আয় হয়ে দেশে ফিরছে কি না; প্রশ্ন সংস্থাটির।

শনিবার (২৭ মে) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘স্টট অফ দ্য বাংলাদেশ ইকনোমি’ শীর্ষক সভায় রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র তুলে ধরে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সেখানেই সন্দেহের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি।

প্রবাসী আয়ের তথ্য তুলে ধরে ফাহমিদা বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গেছে। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি থেকে ৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময়ে এসেছে ৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থ বছরের একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বাভাবিক।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, এটা একেবারেই আনইউজাল, কখনোই হয় না। কারণ, আমরা জানি আমাদের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স কোথা থেকে আসে। গত ১০ মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৯ দশমিক ২২ লাখ মানুষ গেছে। সেখান থেকে প্রত্যাশা মতো রেমিট্যান্স আসছে না। লোক যাওয়া ও রেমিট্যান্সের মধ্যে মিসম্যাচ হচ্ছে। এতদিন সৌদি আরব থেকে বেশি রেমিট্যান্স এলেও যুক্তরাষ্ট্র এখন সে জায়গা দখল করেছে।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায় তাদের বেশির ভাগই হোয়াইট কলার জব করে। অনেকেই দেশের ঘরবাড়ি ও জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে চলে যায়। অনেক শিক্ষার্থীও সেদেশে আছে। তারা টাকা পাঠাতে পারে না। তাহলে এত প্রবাসী আয় কারা পাঠাচ্ছে?

তিনি বলেন, এর একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে এমন- যেখান থেকে টাকাটা পাচার হয়েছে সেটা আবার রেমিট্যান্স হয়ে দেশে ফেরত আসছে। রেমিট্যান্সের ওপর যে আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ বা সাবসিডি দেওয়া হচ্ছে সেটার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আরও গভীরে গিয়ে বিষয়টির অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে এমন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমানো হলে তারা স্বস্তি পাবে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং করাও প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।

অভ্যন্তরীণ বাজারে বিশৃঙ্খলার ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানীর মূল্য নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। কারণ অভ্যন্তরীণ বাজারে বিশৃঙ্খলা রয়েছে। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক সাময়িকভাবে কমানো হলে হয়তো স্বস্তি আসবে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং করাও প্রয়োজন। দরিদ্রদের প্রত্যক্ষ সহায়তার আওতা বাড়ানো দরকার। সঠিক ব্যক্তিরা পাচ্ছে কিনা সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রপ্তানি বৃদ্ধির হার ইতিবাচক নয়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হচ্ছে। মে ও জুনে রপ্তানি ৪১ শতাংশ বাড়াতে হবে, যা খুবই কষ্ট সাধ্য। তৈরি পোশাক বহির্ভূত পণ্য কম রপ্তানি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রতিযোগিতা বাড়ছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল প্রমুখ।