নিজস্ব প্রতিবেদক :
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনকে অপসারণ নয়, তিনি নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পররাষ্ট্র সচিব জসীম নিজেই এ অবস্থান থেকে সরে যেতে চান। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই উনি দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন।
জসীম উদ্দিনের পরির্বতন নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, পররাষ্ট্রসচিব বিভিন্ন কারণে নিজে থেকে এখান থেকে সরে যেতে চান। সরে যেতে চান মানে এই দায়িত্ব থেকে চলে যেতে চান। আমরা তাকে সরে যেতে দিচ্ছি। উনি আগামী দু’একদিনের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন।
পররাষ্ট্রসচিব জসীম ছুটিতে যাবেন নাকী চাকরি ছাড়ছেন, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, উনি চাকরি ছেড়ে দেবেন কেন? চাকরি আছেন। ওনার দায়িত্ব পরিবর্তন হবে।
পররাষ্ট্রসচিব সরে যাচ্ছেন কেন আর আপনারা কেন তাকে সরে যেতে দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আসলে ঠিক ব্যাখ্যা করার মতো বিষয় না। বিভিন্ন কারণে মানুষ দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে এবং তেমন কোনো কারণেৃ।
পররাষ্ট্রসচিবের পরিবর্তনের সঙ্গে বাইরের চাপ নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কোনো সিদ্ধান্তের পেছনে অনেকের স্বার্থ, তাদের বিভিন্ন মতামত এগুলো থাকে। কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কোনো একজনে নিয়ে নেয় না। এর বিবেচনায় অনেক সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হয়, দেখা যাক।
নতুন পররাষ্ট্রসচিব কে হচ্ছেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা তার নাম বলেননি। তিনি বলেনে, দু’একদিনের সেটা আপনারা জানতে পারবেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানকে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২০ এপ্রিল প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এক মাস পার হয়েও গেলেও তিনি এখনো দায়িত্ব শুরু করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, উনি এখন পর্যন্ত যোগ দেননি। সরকারের সিদ্ধান্ত যখন হবে তখন যোগ দেবেন বা দেবেন না।
সুফিউর রহমান তার দায়িত্বে যোগ দিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, জয়েন করতে সমস্যার প্রশ্ন না। এ ব্যাপারে কিছু চিন্তা-ভাবনা আরও চলছে। তার দায়িত্ব পরিবর্তন বা কোনো কিছু। সেটা যথা সময়ে আপনারা জানতে পারবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পুশইন করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। তাদের পুশব্যাক করার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা, তা জানা নেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তবে তিনি বলেন, ‘যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।’
ভারতের নাগরিক বা রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত আমার কাছে এখনও পর্যন্ত নেই। আমরা সাধারণত পুশব্যাক করি না। তবে, বিষয়টি হলো, যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।
পুশইন করার বিষয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং এটি বন্ধে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমরা চেষ্টা করছি নিয়মের বাইরে যেন কিছু না ঘটে।’
ভারতের কাছ থেকে কী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একদিনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে, এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। তারা তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি— এভাবে দেওয়াটা (ঠেলে পাঠানো) ঠিক না। আমরা বলছি যে, আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর আছে। সেই প্রসিডিওর অনুযায়ী আমরা যাবো। তারা তালিকা দিয়েছে। আমরা সেই তালিকাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করছি।’
ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ছোট ছোট বিভিন্ন চুক্তি বিভিন্ন সময়ে হয়েছে, সমঝোতা স্মারক হয়েছে এবং সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আপনাদেরকে জানানো হয়েছে— গত অনেক বছরের মধ্যে। তার মধ্যে চুক্তিগুলো দুপক্ষের সম্মতিতে বাতিল করতে হবে, অথবা প্রভিশন থাকে যে, যেকোনও একপক্ষ যদি আপত্তি করে, তবে বাতিল করা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা বাতিল কোনোটিই করিনি। আমরা আসলে চাই যে, নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু এগিয়ে যাক।’
ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবং আমাদের কোথায় সমস্যা আছে, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং সময়মতো সেগুলো ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
ভারত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়মকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এখন ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, নেতিবাচকভাবেও ব্যাখ্যা করা যায় কখনও কখনও। সব মিলিয়ে আমাদের সেভাবেই এগোতে হচ্ছে। কেউতো স্বীকার করে না যে, সে নিয়মের বাইরে যাচ্ছে।’
ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি বন্ধের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কিনা, এম প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এটি বাণিজ্য উপদেষ্টা দেখছেন।’