নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। গাড়ি চলাচল শুরুর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে আগামী বছরের জুনে। চালুর জন্য সময় অবশিষ্ট রয়েছে এক বছরের মতো। তবে এখনই সেতুটির জন্য টোল হার চূড়ান্ত করতে চায় না সরকার। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) বোর্ড সভায় পদ্মা সেতুর জন্য একটি টোল প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও তা অনুমোদন করেনি সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ।
পদ্মা সেতুর টোল হার চূড়ান্ত না হলেও বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে বিবিএ। আগামী অক্টোবর থেকে বাড়বে এ দুই সেতুর টোল।
বর্তমানে ফেরি পারাপার করতে যত টাকা টোল দিতে হয়, তার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি ধরে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর জন্য টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। টোল আদায়ের জন্য যানবাহনের শ্রেণী নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩টি। প্রস্তাব অনুযায়ী, মোটরসাইকেলে সেতু পার হতে দিতে হবে ১০০ টাকা। কার আর জিপের টোল ৭৫০ টাকা। ১ হাজার ২০০ টাকা টোল দিতে হবে স্টেশনওয়াগন, প্রাডো, নিশানের মতো বিলাসবহুল জিপে। মাইক্রোবাসের টোল ১ হাজার ৩০০ টাকা। ছোট, মাঝারি ও বড় বাসে টোল দিতে হবে যথাক্রমে ১ হাজার ৪০০, ২ হাজার ও ২ হাজার ৪০০ টাকা। ট্রাকের শ্রেণী নির্ধারণ করা হয়েছে চারটি।
এর মধ্যে পাঁচ টন পর্যন্ত ট্রাকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, পাঁচ থেকে আট টন পর্যন্ত ট্রাকে ২ হাজার ১০০ টাকা, আট থেকে ১১ টনের ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা আর তিন এক্সেলের ট্রাকের টোল প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে চার এক্সেলের ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকার সঙ্গে এক্সেলপ্রতি দেড় হাজার টাকা টোল দিতে হবে।
পদ্মা সেতুর জন্য এ টোল প্রস্তাব বৃহস্পতিবার বিবিএর ১১০তম বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। তবে প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়নি। অনুমোদন না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, পদ্মা সেতুর এখনো আরো কাজ বাকি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, যানবাহন চলাচল শুরু হতে আরো এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে।
এর ওপর আবার বিদ্যমান মহামারীর কারণে সবকিছুতেই এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে টোল প্রস্তাবটি এখনই অনুমোদনের পক্ষে নয় বিবিএর পরিচালনা পর্ষদ। তাই প্রস্তাবটি আগামী বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। মূল সেতুর নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে ৬ জুন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। একইভাবে নদীশাসন কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮৩ দশমিক ৫০ ভাগ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৮৬ ভাগ।
এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর টোল হার চূড়ান্ত না করলেও বাড়ানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল। বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহনভেদে টোল বাড়ানো হয়েছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। মোটরসাইকেলে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, হালকা যানবাহনে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা, মাইক্রো/পিকআপে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা, ছোট বাসে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা, বড় বাসে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা, ছোট ট্রাকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা, মাঝারি ট্রাকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৫০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন এক্সেলের ট্রাকে ২ হাজার টাকা, চার এক্সেলের ট্রেইলারে ৩ হাজার টাকা, চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলারে ৩ হাজার টাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত এক্সেলপ্রতি আরো ১ হাজার টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতদিন সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে এ ক্যাটাগরিগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অন্যদিকে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে বার্ষিক টোল হার ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর জন্য প্রথম টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। এর ১৪ বছর পর ২০১১ সালে টোল হার ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। এক দশক পর দ্বিতীয় দফায় ফের ১৭ শতাংশ হারে টোল বাড়ল সেতুটির।
অন্যদিকে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা টোল বাড়ানো হয়েছে মুক্তারপুর সেতুতে। ১০ টাকা বাড়িয়ে সিএনজি/অটোরিকশায় ৩০ টাকা, কার/টেম্পোতে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, জিপ/মাইক্রো/পিকআপে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, ছোট বাসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, বড় বাসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, পাঁচ টন পর্যন্ত ট্রাকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, আট থেকে ১১ টনের ট্রাকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে তিন এক্সেলের ট্রাকে ৮০০ টাকা, চার এক্সেলের ট্রেইলারে ১ হাজার টাকা, চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলারে ১ হাজার টাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত এক্সেলপ্রতি আরো ৫০০ টাকা আদায় করা হবে। এতদিন সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে এ ক্যাটাগরিগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
মুক্তারপুর সেতুর টোল হার নির্ধারণ করা হয় ২০০৮ সালে। এরপর এ প্রথমবার বাড়ছে সেতুটির টোল। আগামী ১ অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর নতুন টোল হার কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক।