আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
নেদারল্যান্ডসের সাধারণ নির্বাচনে একটি ইসলাম-বিরোধী রাজনৈতিক দলের নাটকীয় উত্থান হয়েছে। দেশটির নির্বাচনের বুথ ফেরত জরিপে দেখা গেছে, ইসলাম ইসলামবিদ্বেষী নেতা গ্রিট ওয়াইল্ডারের দল ফ্রিডম পার্টি নাটকীয় জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) প্রায় সব ভোট গণনার পর তার ফ্রিডম পার্টি (পিভিভি) ৩৭টি আসনে জয় পেয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থি জোটের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর দেশটির ফ্রিডম পার্টি (পিভিভি) ৩৭ আসনে জিতেছে। ফলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী দলের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। এ আসন পাওয়ার পরই গির্ট উইল্ডারস বলেন, আমাদের আর বঞ্চিত করা যাবে না। আমরাই সরকার গঠন করব।
কট্টর ডানপন্থী ও ইসলাম বিরোধী এই নেতার জয়লাভ পুরো নেদারল্যান্ডের নির্বাচনকে যে শুধু ধাক্কা দিয়েছে তা নয়, তার জয়ে পুরো ইউরোপের রাজনীতিতে ধাক্কা লাগবে। তবে সবার জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে তাকে ১৫০টি আসনের মধ্যে ৭৬টি আসন পেতে হবে। এজন্য গির্ট উইল্ডারস সরকার গঠনের জন্য অন্যান্য দলকে কাছে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন।
ওই জরিপ অনুসারে দেখা যায়, ২৫ বছর যাবত সংসদে থাকা ফ্রিডম পার্টি ৩৫টি আসনে জয়ের পথে আছে। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী জোটের চেয়ে ফ্রিডম পার্টি অনেক এগিয়ে আছে।
“ফ্রিডম পার্টিকে এখন আর অবহেলা করা যাবে না। এখন আমরা দেশ চালাবো,” বলেন গ্রিট ওয়াইল্ডার। এই ফলাফল যদি শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে ডাচ রাজনীতির জন্য বড় এক ঝাঁকুনি।
কিন্তু ফ্রিডম পার্টিকে তাদের সঙ্গে সরকারে জোট সঙ্গী খুঁজে পেতে সংগ্রাম করতে হবে।
পার্লামেন্টে ৩০০টি আসনের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো দল পায়নি। সরকার গঠন করতে হলে ৭৬টি আসনের প্রয়োজন। সেজন্য ফ্রিডম পার্টিকে অবশ্যই জোট সরকার গঠন করতে হবে।
ফ্রিডম পার্টির পরে যে তিনটি বড় দলের অবস্থান রয়েছে তারা এরই মধ্যে ওয়াইল্ডারের নেতৃত্বে সরকারে যোগ না দেবার কথা জানিয়ে দিয়েছে।
বিজয়ী ভাষণে ৬০ বছর বয়সী ওয়াইল্ডার বলেন, আমরা দেশ শাসন করতে চাই এবং ৩৫টি আসন দিয়ে আমরা দেশ শাসন করবো। ৩৫টি আসন অনেক বড় বিষয় এবং অনেক বড় দায়িত্বও বটে।
বামপন্থী জোট নির্বাচনে ২৫টি আসনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জোটের নেতা ফ্রাঁ টিমারম্যানস বলেছেন, ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে কোনো সমঝোতায় তিনি যাবেন না।
তিনি সমর্থকদের বলেন, এখন ডাচ গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে রক্ষা করার সময়। আমরা কাউকে এখান থেকে যেতে দেব না। নেদারল্যান্ডস-এ সবাই সমান।
নির্বাচনে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে থাকা বড় দু’টি দলের সমর্থন লাভের চেষ্টা করবে ফ্রিডম পার্টি।
নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দিলান ইয়েসিলগোজ-এর নেতৃত্বে মধ্য-ডানপন্থী দল এবং চতুর্থ স্থানে থাকেবে পিটার ওমটজিগট-এর নতুন রাজনৈতিক দল।
উভয় নেতা ফ্রিডম পার্টিকে অভিনন্দন জানিয়েছে তাদের সাফল্যের জন্য। ইয়েসিলগোজ এ সপ্তাহে বলেছেন তিনি ওয়াইল্ডারের নেতৃত্বে ক্যাবিনেটে কাজ করবেন না। যদিও ওয়াইল্ডারের সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা তিনি পুরোপুরি খারিজ করে দেননি।
ওয়াইল্ডারের নেতৃত্বে ফ্রিডম পার্টির জয় ইউরোপজুড়ে একটি বড় ধাক্কা দেবে। কারণ, নেদারল্যান্ডস হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম।
৬০ বছর বয়সী ওয়াইল্ডার ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নেদারল্যান্ডস বের হয়ে আসার জন্য গণভোটের আয়োজন করতে চান, যেটাকে তিনি ‘নেক্সিট’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার মতো আবহ দেশের ভেতরে নেই।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি অবশ্য ভাষা পরিবর্তন করে বলেছেন যে নেদারর্যান্ডস-এ ইসলাম নিষিদ্ধ করার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন আছে। সেজন্য তিনি বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখতে চান।
তার এই কৌশল কাজে দিয়েছে এবং তার দল গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ আসনে জয়লাভ করেছে।
বুধবার বিজয়ী ভাষণে ওয়াইল্ডার বলেন, ডাচ ভোটাররা তাদের তাদের ‘আশার পূরণের পক্ষে’ কথা বলেছে।
এর আগের সরকারকে নিয়ে নেদারর্যান্ডস-এ যে হতাশা ছিল সেটি নির্বাচনী প্রচারণার সময় কাজে লাগিয়েছে ফ্রিডম পার্টি। অভিবাসন নীতি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বিগত সরকার ভেঙ্গে যায়। দিলান ইয়েসিলগোজ- এর দল নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও টোয়েন্টি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মার্টিন রোসেমা বলেন, যে কয়েকটি বিষয় ওয়াইল্ডারকে সুবিধা দিয়েছে তার মধ্যে বিগত সরকারের অভিবাসন ইস্যুটি অন্যতম। আন্তর্জাতিক উদাহরণ থেকে আমরা দেখি যে উগ্র ডানপন্থী দলগুলো যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে তখন তারা আরও বেশি খারাপ হয়,” বলেন অধ্যাপক মার্টিন রোসেমা।
ওয়াইল্ডার বুধবারের ভাষণে বলেছেন, তিনি ‘শরণার্থী ও অভিবাসনের সুনামি’ বন্ধ করবেন।
গত বছর নেদারর্যান্ডস-এ অভিবাসন দ্বিগুণ হয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দু’লাখ ২০ হাজারে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরে সেখান থেকে শরণার্থীরা পালিয়ে এসেছে। নেদারল্যান্ডস-এ প্রায় চার লাখ বাড়ির সংকট তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।
ফ্রিডম পার্টির নেতা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আহবান জানিয়েছেন, এখন প্রচারণা শেষে হয়ে গেছে। এখন একসঙ্গে কাজ করার সময় এবং ফ্রিডম পার্টি সেটাই করবে।