নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষ দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইলেও সরকার নীরব। এতে জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও আশঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। সরকারের সাম্প্রতিক আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা আবারও শেখ হাসিনার পুরোনো কৌশলের পথেই এগিয়ে চলেছে।
রোববার (১১ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের উদ্যোগে শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সরকারের সাম্প্রতিক আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারাও শেখ হাসিনার পুরনো কৌশলের পথেই এগিয়ে চলেছে।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা শিশু-কিশোরদের হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। তিনি লোক দেখানো নামাজের কথা বলতেন। এদেশের মানুষ শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার পার্থক্য স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা করে। কারণ তিনি প্রকৃত গণতন্ত্রের পক্ষে, আপসহীন এক নেতৃত্বের প্রতীক।’
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি আবদুল হামিদ কীভাবে দেশ ত্যাগ করলেন? তার লাল পাসপোর্ট কি এখনও বৈধ? উপদেষ্টারা থাকতেও কেন এসব রোধ করা গেল না?
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে রিজভী বলেন, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবাধে লোক ঢুকছে। অথচ সরকারের তরফে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ নেই। ভারতের সঙ্গে যে বন্ধুত্ব, তা প্রকৃত বন্ধুত্ব নয়। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে অপপ্রচার চালায়। অথচ বাংলাদেশ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যা অনেক দেশের কাছেই ঈর্ষণীয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত লোক পুশ ইন করছে। এসব বিষয়ে সরকার তো একটা কথাও বলেনি; কোথায় সরকারের পাওয়ারফুল উপদেষ্টা খোদা বখস?
রিজভী বলেন, আমরা শুনেছি একজন খুব শক্তিশালী উপদেষ্টা রয়েছেন, যিনি সমস্ত স্বরাষ্ট্র ব্যবস্থাটা দেখেন, তার নাম খোদা বখস, তিনি নাকি খুব পাওয়ারফুল? আবার এটাও শুনি, তিনি নাকি বিএনপিকে খুব একটা পছন্দ করেন না। নিজের মতো করে সব গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। এত শক্তিশালী উপদেষ্টা থাকার পরও আজকে এই ধরনের পরিস্থিতি কেন হচ্ছে? আজকে সাতক্ষীরা-কুড়িগ্রাম-খাগড়াছড়ি-মৌলভীবাজার এই সমস্ত সীমান্ত দিয়ে ভারত লোক ঢুকাচ্ছে, বাংলাদেশে পুশ ইন করছে, এসব বিষয়ে সরকার তো একটা কথাও বলেনি। কোথায় খোদা বখস? কোথায় সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর?
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোথায় সরকার? তারা তো পুশ ইন বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এগুলো তো বিরাট এক অন্যায়। কোথা থেকে এই রাষ্ট্রীয় অপরাধগুলো করা হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশের লোক জোর করে ঢুকিয়ে দিতে চান? বাংলাদেশকে, আমাদেরকে কি অত্যন্ত দুর্বল জাতি মনে করছেন আপনারা? মুক্তিযুদ্ধ হওয়া একটা জাতি, ৩০ লাখ মানুষ জীবন দেওয়া একটা জাতি, চব্বিশে দেড় হাজার শিশু বাচ্চা তরুণের জীবন দেওয়া একটা জাতি, সেই জাতিতে পার্শ্ববর্তী দেশ তার ইচ্ছামতো লোক ঢুকাবেন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আর আপনারা নিশ্চুপ, টুঁ শব্দ করছেন না, এর কারণ কী? তাহলে তো শেখ হাসিনা যেমন করেছেন আপনারাও তাই করছেন। আমাদের সীমান্তে লোক হত্যা করলে শেখ হাসিনা একটা প্রতিবাদও করতেন না- টুঁ শব্দ করতেন না, আপনারাও কেন আজকে একেবারে নিশ্চুপ-নিরুত্তর?এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তো সমস্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছে,তারপরও কোন সাহসে পার্শ্ববর্তী দেশ জোর করে তাদের লোক আমাদের সীমান্ত দিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর গঠিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের কাছে মানুষ অনেক প্রত্যাশা করেছিল। তারা সংস্কারের কথা বলেছে, জনগণ সে সংস্কারও মেনে নিয়েছে। তারা (জনগণ) বলেছে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার করে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরও অনেকেই বলেছে, এমনকি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এই কথা বলেছে। আজকেও সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, কবিতা পরিষদ দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। কিন্তু সরকার এই ব্যাপারে নিরুত্তর,নিশ্চুপ। কিন্তু কেন? তাদের উদ্দেশ্যটা কী? এখন তো মানুষ ধীরে ধীরে নানা ধরনের সন্দেহ করছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সবচেয়ে বড় সন্দেহ হচ্ছে যে, সাবেক রাষ্ট্রপতি যিনি খুনের মামলার আসামি, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। আপনার গোয়েন্দা সংস্থা, তারা ক্লিয়ারেন্স না দিলে কী করে উনি যেতে পারেন? তিনি এমন রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য যার বিচার হওয়া উচিত, তিনি কী করে বিদেশে চলে গেলেন? আমাদের হাওর-বাঁওড়, আমাদের খাল বিল, এগুলো রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ আন্দোলন করছে। অথচ তিনি তার এলাকা কিশোরগঞ্জে বিশাল হাওরের মধ্যে বিশাল রাস্তা বানিয়েছেন তার বাড়ি যাওয়ার জন্য। উনি তো ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি ছিলেন, উনি তো শেখ হাসিনার কথায় চলতেন অর্থাৎ শেখ হাসিনার যে মাইন্ডসেট যে মানসিকতা, উনারও সেই মানসিকতা- দুইজনের মধ্যে তো পার্থক্য হবে না। তাহলে সেই ব্যক্তি কীভাবে চলে গেলেন? তার তো লাল পাসপোর্ট আছে, এটা কি সরকার জানত না? তার লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়নি কেন? এটা তো সরকার জানত। এটা কি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানত না? তাহলে তিনি কী করে যেতে পারলেন?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বলতেন তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তিনি লোকদেখানো নামাজের কথা বলতেন। উনি শিশুদের রক্ত ঝরিয়েও ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, বৌদ্ধ ফোরামের নেতা সুশীল বড়ুয়া, প্রার্থ প্রতিম বড়ুয়া অপু প্রমুখ।