Dhaka বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের শঙ্কা দূর করতে সরকার ও কমিশনকেই দায়িত্ব নিতে হবে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি :

সংস্কার দিয়ে লুটপাটতন্ত্র ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়ে সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমানে দেশ একটি ক্রান্তীকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলমান সময়ে দেশবাসী সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং মর্যাদাপূণ নির্বাচন চায়। নির্বাচন নিয়ে জনগণের মাঝে শঙ্কা আছে। সেই শঙ্কা দূর করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে নাগরিক প্লাটফর্মের উদ্যোগে বরিশালের একটি মিলনায়তনে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু তার উপদেষ্টামন্ডলী ও আমলাদের মধ্যে নিরুৎসাহ দেখা গেছে। বাকি সংস্কার সম্পন্ন করতে হলে নাগরিক সমাজকেই চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সংলাপে দেবপ্রিয় বলেন, ইতোপূর্বে ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে অতীতে দেশে একটি গোষ্ঠীতন্ত্র (অলিগার্ক) তৈরি হয়েছিল। এটা এমন একটি অর্থনীতি সৃষ্টি করেছিল যাকে আমরা অভিহিত করি ‘চামচা পুঁজিবাদ’ হিসেবে। যেখানে রাষ্ট্রতন্ত্র ব্যবহার করে ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংস্কারের মাধ্যমে এই চোরতন্ত্র ভাঙতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে। কারণ, কাউকে পেছনে ফেলে রাখলে সেও সমাজকে পেছনে টেনে ধরবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের কোনো অনিশ্চয়তা দেখছি না, নির্বাচন ক্রমান্বয়ে অনিবার্য ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। আমরা নির্বাচনকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে চাই। এর লক্ষ্যে সংস্কারের ধারা অব্যাহত থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং নেতাদের মানুষের কথা শুনতে হবে। সেজন্য আমাদের কথাগুলো আমাদের বলতে হবে, আমরা নারীর বিষয়ে কি চাই, শিশুদের বিষয়ে কি চাই, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, সুশাসনের বিষয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে আমাদের ভানা তুলে ধরতে এই সংলাপের আয়োজন। যাতে আঞ্চলিক সমস্যাগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার স্থান পায়।

আগামী নির্বাচনে কী প্রত্যাশায় ভোট দেবেন? ও নবনির্বাচিত সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা? শিরোনামে মুক্ত আলোচনায় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

সংলাপে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস বলেন, এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়াতে গ্যাস সরবরাহ জরুরি। ভোলার সঙ্গে পাইপলাইন স্থাপন করা গেলে এখানকার অর্থনীতি গতি পাবে। বাসদ নেত্রী মনীষা চক্রবর্তী বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও পর্যটনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব।

মতবিনিময় সভায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাসদ, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা পরামর্শ সভায় নিরাপত্তা ও দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। এ বিষয়ে সরকারের ব্যাপক প্রচেষ্টার দাবি জানান তারা। বক্তারা ঢাকামুখী কর্মসংস্থানে বদলে স্থানীয় পর্যায়ের কর্মসংস্থানের গুরুত্বও তুলে ধরেন।

এ ছাড়া নির্বাচনে জামানত পঞ্চাশ হাজার টাকা কমিয়ে রাখা, প্রতিবন্ধীদের তাদের সাধ্য অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মান্তা সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, অর্থনীতির মূলধারায় আনতে বিশেষ প্রকল্প, ডিজিটাল লেনদেন, নদী ভাঙন করলে তো এলাকার জন্য বিশেষ প্রকল্প ও উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত সাত নেতার ‘রিভিউ আবেদন’

নির্বাচনের শঙ্কা দূর করতে সরকার ও কমিশনকেই দায়িত্ব নিতে হবে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি :

সংস্কার দিয়ে লুটপাটতন্ত্র ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়ে সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমানে দেশ একটি ক্রান্তীকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলমান সময়ে দেশবাসী সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং মর্যাদাপূণ নির্বাচন চায়। নির্বাচন নিয়ে জনগণের মাঝে শঙ্কা আছে। সেই শঙ্কা দূর করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে নাগরিক প্লাটফর্মের উদ্যোগে বরিশালের একটি মিলনায়তনে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু তার উপদেষ্টামন্ডলী ও আমলাদের মধ্যে নিরুৎসাহ দেখা গেছে। বাকি সংস্কার সম্পন্ন করতে হলে নাগরিক সমাজকেই চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সংলাপে দেবপ্রিয় বলেন, ইতোপূর্বে ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে অতীতে দেশে একটি গোষ্ঠীতন্ত্র (অলিগার্ক) তৈরি হয়েছিল। এটা এমন একটি অর্থনীতি সৃষ্টি করেছিল যাকে আমরা অভিহিত করি ‘চামচা পুঁজিবাদ’ হিসেবে। যেখানে রাষ্ট্রতন্ত্র ব্যবহার করে ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংস্কারের মাধ্যমে এই চোরতন্ত্র ভাঙতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে। কারণ, কাউকে পেছনে ফেলে রাখলে সেও সমাজকে পেছনে টেনে ধরবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের কোনো অনিশ্চয়তা দেখছি না, নির্বাচন ক্রমান্বয়ে অনিবার্য ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। আমরা নির্বাচনকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে চাই। এর লক্ষ্যে সংস্কারের ধারা অব্যাহত থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং নেতাদের মানুষের কথা শুনতে হবে। সেজন্য আমাদের কথাগুলো আমাদের বলতে হবে, আমরা নারীর বিষয়ে কি চাই, শিশুদের বিষয়ে কি চাই, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, সুশাসনের বিষয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে আমাদের ভানা তুলে ধরতে এই সংলাপের আয়োজন। যাতে আঞ্চলিক সমস্যাগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার স্থান পায়।

আগামী নির্বাচনে কী প্রত্যাশায় ভোট দেবেন? ও নবনির্বাচিত সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা? শিরোনামে মুক্ত আলোচনায় রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

সংলাপে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস বলেন, এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়াতে গ্যাস সরবরাহ জরুরি। ভোলার সঙ্গে পাইপলাইন স্থাপন করা গেলে এখানকার অর্থনীতি গতি পাবে। বাসদ নেত্রী মনীষা চক্রবর্তী বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও পর্যটনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব।

মতবিনিময় সভায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাসদ, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা পরামর্শ সভায় নিরাপত্তা ও দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। এ বিষয়ে সরকারের ব্যাপক প্রচেষ্টার দাবি জানান তারা। বক্তারা ঢাকামুখী কর্মসংস্থানে বদলে স্থানীয় পর্যায়ের কর্মসংস্থানের গুরুত্বও তুলে ধরেন।

এ ছাড়া নির্বাচনে জামানত পঞ্চাশ হাজার টাকা কমিয়ে রাখা, প্রতিবন্ধীদের তাদের সাধ্য অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মান্তা সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, অর্থনীতির মূলধারায় আনতে বিশেষ প্রকল্প, ডিজিটাল লেনদেন, নদী ভাঙন করলে তো এলাকার জন্য বিশেষ প্রকল্প ও উদ্যোগ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।