Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ. কোরিয়া সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ুলের সঙ্গে বৈঠক করতে রোববার (৭ মে) দেশটির রাজধানী সিউলে গেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার হুমকি এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় দক্ষিণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার অন্যতম লক্ষ্য— জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এ সফর।

গত ১২ বছরের মধ্যে এবারই প্রথমবার জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ কোরিয়া গেছেন। এর আগে মার্চে টোকিও যান দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট। সামুদ্রিক অঞ্চল ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কিছু বিরোধ ও বিবাদ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো দূরে ঠেলে এখন এক হতে চায় দেশ দু’টি।

দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কিশিদা বলেন, আমি আশা করি আমাদের আস্থার সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট ইয়োনের সঙ্গে খোলামেলা মতবিনিময় এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, গত মার্চ থেকে অর্থ ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগের বিভিন্ন স্তর তৈরি হয়েছে এবং আমি এই চলমান প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করার পরিকল্পনা করছি।

দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইয়োন এবং কিশিদা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি, দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

তবে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে নিজ দেশেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তার বিরোধীরা বলছেন, জাপানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে গিয়ে নেওয়ার চেয়ে বেশি দিয়ে ফেলেছেন তিনি।

এরমধ্যে একটি বিষয় নিয়ে কোরিয়ানরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন— দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রস্তাব দিয়েছেন ১৯১০-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের ঔপনিবেশিক শাসনামলে যুদ্ধের সময় যেসব শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো। কিন্তু জাপানি কোম্পানিগুলোকে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। যদিও আদালত নির্দেশ দিয়েছিল জাপানের কোম্পানিগুলোকেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মূলত ২০১৮ সালের একটি ঘটনার কারণে দুদেশের সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়তে দেখা যায়। সে সময় দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত দুটি জাপানি কোম্পানিকে তাদের প্রাক্তন বৃদ্ধ কোরিয়ান কর্মচারীদের জোরপূর্বক শ্রমের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ নিয়ে দুই দেশ একে অন্যের ওপর অর্থনৈতিক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা আরোপ করতে শুরু করে।

সম্পর্ক উন্নত করতে ইয়োন প্রস্তাব করেছেন যে, জাপানি কোম্পানি নয় বরং দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ীরা যুদ্ধকালীন শ্রমের শিকার লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু তার এই পদক্ষেপের ফলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে এবং সেই সঙ্গে সমালোচনা হয়েছে যে, ইয়োন জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের প্রচেষ্টায় যা পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন।

তবে কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, জাপান তাদের ঐতিহাসিক ভুলের ক্ষমা চেয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাদের আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।

সিউল-ভিত্তিক কোরিয়া ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শিন-ওয়া লি বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির মুখে নিরাপত্তা সহযোগিতাকে কেন্দ্র করেই সম্ভবত দুদেশের নতুন সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু আবর্তিত হবে।

এদিকে মার্কিন বিশ্লেষকরাও দুদেশের এই সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। অপরদিকে চলতি মাসের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইয়োন এবং কিশিদার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

দ. কোরিয়া সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৪:৩১:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ুলের সঙ্গে বৈঠক করতে রোববার (৭ মে) দেশটির রাজধানী সিউলে গেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার হুমকি এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় দক্ষিণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার অন্যতম লক্ষ্য— জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এ সফর।

গত ১২ বছরের মধ্যে এবারই প্রথমবার জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ কোরিয়া গেছেন। এর আগে মার্চে টোকিও যান দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট। সামুদ্রিক অঞ্চল ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কিছু বিরোধ ও বিবাদ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো দূরে ঠেলে এখন এক হতে চায় দেশ দু’টি।

দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কিশিদা বলেন, আমি আশা করি আমাদের আস্থার সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট ইয়োনের সঙ্গে খোলামেলা মতবিনিময় এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, গত মার্চ থেকে অর্থ ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগের বিভিন্ন স্তর তৈরি হয়েছে এবং আমি এই চলমান প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করার পরিকল্পনা করছি।

দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইয়োন এবং কিশিদা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি, দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক সম্পর্ক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

তবে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে নিজ দেশেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তার বিরোধীরা বলছেন, জাপানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে গিয়ে নেওয়ার চেয়ে বেশি দিয়ে ফেলেছেন তিনি।

এরমধ্যে একটি বিষয় নিয়ে কোরিয়ানরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন— দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রস্তাব দিয়েছেন ১৯১০-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের ঔপনিবেশিক শাসনামলে যুদ্ধের সময় যেসব শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো। কিন্তু জাপানি কোম্পানিগুলোকে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। যদিও আদালত নির্দেশ দিয়েছিল জাপানের কোম্পানিগুলোকেও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মূলত ২০১৮ সালের একটি ঘটনার কারণে দুদেশের সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়তে দেখা যায়। সে সময় দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত দুটি জাপানি কোম্পানিকে তাদের প্রাক্তন বৃদ্ধ কোরিয়ান কর্মচারীদের জোরপূর্বক শ্রমের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ নিয়ে দুই দেশ একে অন্যের ওপর অর্থনৈতিক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা আরোপ করতে শুরু করে।

সম্পর্ক উন্নত করতে ইয়োন প্রস্তাব করেছেন যে, জাপানি কোম্পানি নয় বরং দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ীরা যুদ্ধকালীন শ্রমের শিকার লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু তার এই পদক্ষেপের ফলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে এবং সেই সঙ্গে সমালোচনা হয়েছে যে, ইয়োন জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের প্রচেষ্টায় যা পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন।

তবে কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, জাপান তাদের ঐতিহাসিক ভুলের ক্ষমা চেয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাদের আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।

সিউল-ভিত্তিক কোরিয়া ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শিন-ওয়া লি বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির মুখে নিরাপত্তা সহযোগিতাকে কেন্দ্র করেই সম্ভবত দুদেশের নতুন সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু আবর্তিত হবে।

এদিকে মার্কিন বিশ্লেষকরাও দুদেশের এই সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। অপরদিকে চলতি মাসের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইয়োন এবং কিশিদার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।