Dhaka বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে প্রতি বছর স্তন ক্যানসারে মারা যাচ্ছে ৮ হাজার নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, আর মারা যায় প্রায় ৮ হাজার নারী।

রোববার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্যানসার নিয়ে কাজ করা ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এ মোর্চা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। মারাও যায় প্রায় আট হাজার নারী। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, নারীদের সংকোচবোধের কারণে দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে সার্বিকভাবে ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও অপ্রতুল। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কোনো জাতীয় কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেই।

তিনি বলেন, লক্ষণ না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের সহজ ও ব্যথা-কষ্টবিহীন পদ্ধতি প্রয়োগ করে গোপন থাকা ক্যানসার নির্ণয় করাকে ক্যানসার স্ক্রিনিং বলা হয়। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে ও সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে শতকরা ৯০ শতাংশ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। দুঃখের বিষয়, আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে থাকায় তিন-চতুর্থাংশ রোগী ধরা পড়ে রোগের শেষ পর্যায়ে।

ডা. হাবিবুল্লাহ বলেন, বিএসএমএমইউ এর গাইনি বিভাগের চালু করা জরায়ুমুখের ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্তন ক্যানসারে যে স্ক্রিনিং দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সরকারের সহযোগিতায় চালু আছে, তা অসংগঠিত ও অসম্পূর্ণ। অবিলম্বে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসার এ তিনটির জন্য সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সমন্বিত জাতীয় স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ক্যান্সার। এ খাতে আমাদের অগ্রগতি হয়নি। ফলে, ক্যানসার চিকিৎসায় অনেক মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। সারাবিশ্ব ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেক দূর এগিয়েছে। ফলে এখন আর ক্যানসার হলেই মৃত্যু এমন নয়।

তিনি আরও বলেন, সঠিক সময়ে স্ক্রিনিং করা গেলে ৯০ শতাংশ ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শুধুমাত্র ভ্যাকসিন করেও অনেকগুলো ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকা যায়। এ সময় তিনি নিজে একজন ক্যান্সার সারভাইভার বলেও জানান প্রখ্যাত এই চিকিৎসক।

জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, মানুষকে সচেতন করাটা জরুরি। রোগ যেন না হয় এই চেষ্টা করতে হবে। এটি একদম স্কুল পর্যায়ে শুরু হতে হবে। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি এসেছে। একইসঙ্গে ক্যান্সারের বিষয়ও পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করতে হবে।

২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর দেশে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের আহ্বানে বেসরকারিভাবে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মাসব্যাপী কর্মসূচিও ঘোষণা করে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম।

এ সময় ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন আগামী ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কর্মসূচিগুলো হলো: ১০ অক্টোবর সারা দেশে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উদযাপন এবং স্তন ক্যানসার সচেতনতায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সহজ ভাষায় লেখা লিফলেট বিতরণ। ঢাকায় কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হবে মহাখালীর আইইডিসিআর এর মিলনায়তনে। কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান শেষে এখান থেকে ফোরামের একটি টিম বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি জেলা অভিমুখে রওয়ানা হবে চার দিনের গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রায়। জেলা ও উপজেলায় পথসভা, শোভাযাত্রা, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মানুষের হাতে সরাসরি সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুলিয়ারচর, কটিয়াদি উপজেলা সদর ও জেলা সদরে কাজ করবে। পরদিন দুপুর ১২টায় গুরুদয়াল কলেজে অনুষ্ঠান শেষে নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছাবে। এভাবে নেত্রকোণা, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় এ শোভাযাত্রা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে।

এছাড়া ফোরামের অন্যতম সদস্য সংগঠন কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট শুক্রবার ছাড়া পুরো অক্টোবর মাস প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফ্রি স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করবে। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী চিকিৎসক প্রথমে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দেবেন। কোনো ইনভেস্টিগেশন লাগলে তা ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে করা যাবে ধানমন্ডির মেডিনোভা এবং সোবহানবাগের বায়োমেড ল্যাব থেকে। দরিদ্র রোগীদের জন্য সিওসি ট্রাস্টের রোগীকল্যাণ তহবিলের সহযোগিতায় বিনামূল্যে করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

এ সেবার জন্য নিবন্ধন করা যাবে ০১৭৮৯৪৪৪৭৬৭, ০২-২২৩৩১০৬৫৫ নম্বরে ফোন করে কিংবা ০১৯৭৭-৫৯১৯০৭ নম্বরে এসএমএস করে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠিয়ে। পাশাপাশি অনলাইনেও নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে। সোবহানবাগে সালিমা ইনস্টিটিউটেও অক্টোবরের ৩ তারিখ থেকে সরাসরি স্ক্রিনিং করা যাবে।

ফোরামের বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এ মাসে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ফোরাম ও কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার সচেতনতা এবং স্ক্রিনিং আয়োজনে সহযোগিতা করবে।

নারী উদ্যোগ কেন্দ্র ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে নারীদের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ৭ ও ১০ অক্টোবর যথাক্রমে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে এর উদ্বোধন হবে। নারীপক্ষ, ওয়াইডাব্লিউসিএ, হারমনি ট্রাস্ট, অপরাজিতাসহ বিভিন্ন সংগঠনেরও সচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বারডেমের সাবেক পরিচালক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক সায়েফউদ্দিন আহমেদ সপু, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আক্তার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার মশিউদ্দিন শাকের, বিশিষ্ট সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. মো. হাসানুজ্জামান প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

দেশে প্রতি বছর স্তন ক্যানসারে মারা যাচ্ছে ৮ হাজার নারী

প্রকাশের সময় : ১১:০০:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, আর মারা যায় প্রায় ৮ হাজার নারী।

রোববার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্যানসার নিয়ে কাজ করা ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এ মোর্চা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। মারাও যায় প্রায় আট হাজার নারী। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, নারীদের সংকোচবোধের কারণে দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে সার্বিকভাবে ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও অপ্রতুল। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কোনো জাতীয় কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেই।

তিনি বলেন, লক্ষণ না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের সহজ ও ব্যথা-কষ্টবিহীন পদ্ধতি প্রয়োগ করে গোপন থাকা ক্যানসার নির্ণয় করাকে ক্যানসার স্ক্রিনিং বলা হয়। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে ও সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে শতকরা ৯০ শতাংশ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। দুঃখের বিষয়, আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে থাকায় তিন-চতুর্থাংশ রোগী ধরা পড়ে রোগের শেষ পর্যায়ে।

ডা. হাবিবুল্লাহ বলেন, বিএসএমএমইউ এর গাইনি বিভাগের চালু করা জরায়ুমুখের ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্তন ক্যানসারে যে স্ক্রিনিং দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সরকারের সহযোগিতায় চালু আছে, তা অসংগঠিত ও অসম্পূর্ণ। অবিলম্বে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসার এ তিনটির জন্য সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সমন্বিত জাতীয় স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ক্যান্সার। এ খাতে আমাদের অগ্রগতি হয়নি। ফলে, ক্যানসার চিকিৎসায় অনেক মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। সারাবিশ্ব ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেক দূর এগিয়েছে। ফলে এখন আর ক্যানসার হলেই মৃত্যু এমন নয়।

তিনি আরও বলেন, সঠিক সময়ে স্ক্রিনিং করা গেলে ৯০ শতাংশ ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শুধুমাত্র ভ্যাকসিন করেও অনেকগুলো ক্যান্সার থেকে বেঁচে থাকা যায়। এ সময় তিনি নিজে একজন ক্যান্সার সারভাইভার বলেও জানান প্রখ্যাত এই চিকিৎসক।

জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, মানুষকে সচেতন করাটা জরুরি। রোগ যেন না হয় এই চেষ্টা করতে হবে। এটি একদম স্কুল পর্যায়ে শুরু হতে হবে। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলের পাঠ্যবইয়ে প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি এসেছে। একইসঙ্গে ক্যান্সারের বিষয়ও পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করতে হবে।

২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর দেশে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের আহ্বানে বেসরকারিভাবে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মাসব্যাপী কর্মসূচিও ঘোষণা করে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম।

এ সময় ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন আগামী ১০ অক্টোবর স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

কর্মসূচিগুলো হলো: ১০ অক্টোবর সারা দেশে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উদযাপন এবং স্তন ক্যানসার সচেতনতায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সহজ ভাষায় লেখা লিফলেট বিতরণ। ঢাকায় কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হবে মহাখালীর আইইডিসিআর এর মিলনায়তনে। কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান শেষে এখান থেকে ফোরামের একটি টিম বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি জেলা অভিমুখে রওয়ানা হবে চার দিনের গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রায়। জেলা ও উপজেলায় পথসভা, শোভাযাত্রা, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মানুষের হাতে সরাসরি সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুলিয়ারচর, কটিয়াদি উপজেলা সদর ও জেলা সদরে কাজ করবে। পরদিন দুপুর ১২টায় গুরুদয়াল কলেজে অনুষ্ঠান শেষে নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছাবে। এভাবে নেত্রকোণা, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় এ শোভাযাত্রা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করবে।

এছাড়া ফোরামের অন্যতম সদস্য সংগঠন কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট শুক্রবার ছাড়া পুরো অক্টোবর মাস প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফ্রি স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করবে। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী চিকিৎসক প্রথমে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দেবেন। কোনো ইনভেস্টিগেশন লাগলে তা ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে করা যাবে ধানমন্ডির মেডিনোভা এবং সোবহানবাগের বায়োমেড ল্যাব থেকে। দরিদ্র রোগীদের জন্য সিওসি ট্রাস্টের রোগীকল্যাণ তহবিলের সহযোগিতায় বিনামূল্যে করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

এ সেবার জন্য নিবন্ধন করা যাবে ০১৭৮৯৪৪৪৭৬৭, ০২-২২৩৩১০৬৫৫ নম্বরে ফোন করে কিংবা ০১৯৭৭-৫৯১৯০৭ নম্বরে এসএমএস করে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠিয়ে। পাশাপাশি অনলাইনেও নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে। সোবহানবাগে সালিমা ইনস্টিটিউটেও অক্টোবরের ৩ তারিখ থেকে সরাসরি স্ক্রিনিং করা যাবে।

ফোরামের বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতা ও স্ক্রিনিং কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এ মাসে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ফোরাম ও কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার সচেতনতা এবং স্ক্রিনিং আয়োজনে সহযোগিতা করবে।

নারী উদ্যোগ কেন্দ্র ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে নারীদের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ৭ ও ১০ অক্টোবর যথাক্রমে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে এর উদ্বোধন হবে। নারীপক্ষ, ওয়াইডাব্লিউসিএ, হারমনি ট্রাস্ট, অপরাজিতাসহ বিভিন্ন সংগঠনেরও সচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বারডেমের সাবেক পরিচালক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক সায়েফউদ্দিন আহমেদ সপু, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আক্তার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার মশিউদ্দিন শাকের, বিশিষ্ট সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. মো. হাসানুজ্জামান প্রমুখ।