নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে প্রতি চারজনে একজন উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে আশঙ্কাজনক হারে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। বায়ু দূষণ, ইট ভাটার ধোঁয়া, খাদ্যে ভেজালসহ নানা কারণে এসব রোগের বিস্তার ঘটছে।
রোববার (১৮ জুন) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যায় তার ৭০ ভাগই অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপই ২০ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এছাড়া ডায়াবেটিসে ভুগছে ১০ শতাংশ মানুষ। বায়ু দূষণ, ইট ভাটার ধোঁয়া, খাদ্যে ভেজালসহ নানা কারণে এসব রোগের বিস্তার ঘটছে। পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন জীবনাচরণও বড় কারণ। একইসঙ্গে অন্যতম কারণ ওবিসিটি বা স্থূলতা।
জাহিদ মালেক বলেন, জীবনযাত্রার এখন গতি বেড়েছে। খেলাধুলা, পরিবারে সময় দেওয়ার হার কমে যাচ্ছে। যার ফলে শারীরিক ও মানসিক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এ জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আমাদের জোর দিতে হবে। প্রান্তিক পর্যায় থেকেই এটি শুরু করতে হবে। এখন পর্যন্ত ৩০০টি উপজেলায় এনসিডি কর্নার হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় হবে।
জাহিদ মালেক আরো বলেন, সংক্রমক রোগ যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্ষম হয়েছি। কলেরা, ডায়রিয়া এগুলো আগে অনেক বেশি ছিল, তবে তা এখন খুবই কম। আর এর সব থেকে বড় প্রমাণ হলো কোভিড নিয়ন্ত্রণ।
জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের স্থূলতাও (ওবিসিটি) বাড়ছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশে ওবিসিটির মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শিশুদের এটি বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এসময় দেশের শতকরা ৪১ ভাগ পুরুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৫ ভাগ মহিলা তামাক খান বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশে বর্ষা মৌসুমে সাপের ছোবলের ঘটনা বেশি ঘটে। এ সময় সাপে কাটার শিকার বেশি হয় গ্রামের মানুষ। অথচ উপজেলা পর্যায়ে দেশের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাপের বিষের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) নেই। এমন বাস্তবতায় সব হাসপাতালে যথেষ্ট প্রতিষেধক সরবরাহ ও রোগীর সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের জন্যও বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সাপে কামড়ে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ দেশে সাপের কামড়ে মারা যান। সাপের কামড়ের প্রতিষেধক তৈরি করা হবে। আমরা নিজেরাই এ বিষয়ে কাজ করছি এবং এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান আছে। সাপের কামড়ে মৃত্যু নন কমিউনিকেবল ডিজিজ (ছোঁয়াচে নয় এমন রোগ)। এমনিতেই এমন নন কমিউনিকেবল ডিজিজে অনেক মৃত্যু হচ্ছে। সাপের কামড়ে যেন প্রাণহানি না হয়, সেজন্য উপজেলা পর্যায়সহ সবখানে অ্যান্টিভেনম ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু অ্যান্টিভেনম নিশ্চিত করলেই হবে না, পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল থাকতে হবে। মাঝে মধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা মহাপরিচালক ড. টিটু মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তারা উপস্থিত ছিলেন।