Dhaka মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্ঘটনা এড়াতে চাঁদে নিরাপদ জায়গা খুঁজছে ভারতের চন্দ্রযান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ভারত। চাঁদের স্পর্শকাতর দক্ষিণ মেরুর একেবারে কাছাকাছি অবস্থান করছে চন্দ্রযান-৩। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদে স্পর্শ করবে ল্যান্ডার বিক্রম। তবে শেষ সময়ে কী ঘটে তা অনুমান করা মুশকিল। কারণ, সামান্য দুর্ঘটনাতেই সব শেষ হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু বিক্রম কোথায় অবতরণ করবে? চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দুর্গম খানাখন্দে ভরা মাটিতে বিক্রমের প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত মসৃণ জমি। আপাতত বিক্রমের নিরাপদ স্থানে অবতরণের সন্ধানে রয়েছে ইসরো।

সোমবার (২১ আগস্ট) ইসরো কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছে। চাঁদের বুকে পা রাখার আগে ঘুরে ঘুরে নিরাপদ অবতরণের স্থান খুঁজছে বিক্রম। তার ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিগুলোই প্রকাশ করেছে ইসরো।

রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা-২৫ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদে বিধ্বস্ত হওয়ার একদিন পর ছবিগুলো প্রকাশ হয়েছে। প্রায় ৫০ বছর পর প্রথমবার চন্দ্র অভিযানে নামে মস্কো। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই চাঁদের বুকে বিধ্বস্ত হয়।

সামাজিক মাধ্যম এক্সের (টুইটার) এক পোস্টে ইসরো লিখেছে, এগুলো চাঁদের অনেক দূরের দিকের ছবি। বিক্রমের মধ্যকার ল্যান্ডার হ্যাজার্ড ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়েড্যান্স ক্যামেরা (এলএইচডিএসি) দিয়ে এই ছবিগুলো তোলা হয়েছে। এই বিশেষ ক্যামেরা চাঁদের মাটিতে অবতরণের জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজতে সাহায্য করে।

চাঁদের জমিতে পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অনেক ছোট বড় গর্ত। উঁচু ঢিবিও প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। ইসরোর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো পাথর বা গর্ত এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা স্থান আগে চিহ্নিত করা। তারপর সেখানে বিক্রমকে নামানো হবে।

বুধবার সন্ধ্যায় রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে পাখির পালকের মতো চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। চন্দ্রাভিযানের এই পর্যায়টিই সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। চার বছর আগে এই পর্যায়ে এসেই ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। তবে এবার তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি ইসরোর। বড় কোনো বিপত্তি না হলে চাঁদের মাটিতে শিগগির নামতে চলেছে বিক্রম। সেদিকে তাকিয়ে আছে পুরো ভারত।

ইসরোর এক কর্মকর্তা জানান, চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, সব সেন্সরসহ তার দুটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলেও ২৩ আগস্ট সেটি চাঁদের মাটিতে নামতে পারবে। তবে এর প্রোপালশন সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করতে হবে। নাহলে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে।

ইসরো রবিবার জানিয়েছে, ল্যান্ডার মডিউলটি সফলভাবে চাঁদের কাছাকাছি কক্ষপথে নামানো হয়েছে। সফল হলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অবতরণ করবে ভারত। তবে অভিযান সফল হলে বিশ্বে ভারত হবে নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পারা চতুর্থ দেশ।

অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। বুধবার বিকেলে উৎক্ষেপণের ৪১ দিন পর ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা। এই অভিযান সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণে নাম উঠে আসবে ভারতের।

২০১৯ সালেও চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ভারতের চন্দ্রযান ২। কিন্তু ব্যর্থ হয়। চাঁদে নামার একেবারে কাছাকাছি এসে বিধ্বস্ত হয় ল্যান্ডারটি।

এখান থেকে এবার চাঁদে নামবে বিক্রম। এটা কঠিন পরীক্ষা। কারণ গতবার চন্দ্রযান-২ এখানেই ভেঙে পড়েছিল। রাশিয়ার লুনা ২৫-ও একই রকমভাবে ভেঙে পড়েছে। তবে এবার ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরা গতবারের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাদের আশা, বিক্রম সফলভাবে চাঁদের পিঠে অবতরণ করবে।

আর এই চাঁদে নামা লাইভ দেখানো হবে ইসরোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইউটিউবে।

চন্দ্রযান-৩-এর সঙ্গে প্রতিয়োগিতায় নেমেছিল রাশিয়ার লুনা ২৫। কে আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি প্রথম স্পর্শ করতে পারবে, সেই প্রতিযোগিতা। চাঁদের শেষ কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য মাত্র একটা ধাপ বাকি ছিল লুনা ২৫-এর।

কিন্তু সেটা তারা আর পেরোতে পারল না। নিজের কক্ষপথ ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে যায় লুনা ২৫। তারপরই রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়।

পরে রাশিয়া জানায়, লুনা ২৫ চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়েছে। রাশিয়া শেষবার চাঁদে নেমেছিল ১৯৭৬ সালে। সেই সোভিয়েত আমলে লুনা ২৪ কোনও ভুল করেনি। কিন্তু এতবছর পর রাশিয়া যখন লুনা ২৫ চাঁদে পাঠালো, তখন তা সাফল্য পেল না। ১৭ হাজার রুবল খরচ করে রাশিয়া লুনা ২৫কে চাঁদে পাঠিয়েছিল। ১৩ বছর ধরে চেষ্টার ফলশ্রুতি ছিল এই অভিযান। কিন্তু তা সফল না হওয়ায় তা রাশিয়ার কাছে বড় ধাক্কা তো বটেই। লুনা ২৫ পারেনি, চন্দ্রযান-৩ পারলে তা হবে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। সূত্র: বিবিসি।

আবহাওয়া

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত, ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই

দুর্ঘটনা এড়াতে চাঁদে নিরাপদ জায়গা খুঁজছে ভারতের চন্দ্রযান

প্রকাশের সময় : ০৪:৩০:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ভারত। চাঁদের স্পর্শকাতর দক্ষিণ মেরুর একেবারে কাছাকাছি অবস্থান করছে চন্দ্রযান-৩। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদে স্পর্শ করবে ল্যান্ডার বিক্রম। তবে শেষ সময়ে কী ঘটে তা অনুমান করা মুশকিল। কারণ, সামান্য দুর্ঘটনাতেই সব শেষ হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু বিক্রম কোথায় অবতরণ করবে? চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দুর্গম খানাখন্দে ভরা মাটিতে বিক্রমের প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত মসৃণ জমি। আপাতত বিক্রমের নিরাপদ স্থানে অবতরণের সন্ধানে রয়েছে ইসরো।

সোমবার (২১ আগস্ট) ইসরো কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছে। চাঁদের বুকে পা রাখার আগে ঘুরে ঘুরে নিরাপদ অবতরণের স্থান খুঁজছে বিক্রম। তার ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিগুলোই প্রকাশ করেছে ইসরো।

রাশিয়ার মহাকাশযান লুনা-২৫ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদে বিধ্বস্ত হওয়ার একদিন পর ছবিগুলো প্রকাশ হয়েছে। প্রায় ৫০ বছর পর প্রথমবার চন্দ্র অভিযানে নামে মস্কো। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই চাঁদের বুকে বিধ্বস্ত হয়।

সামাজিক মাধ্যম এক্সের (টুইটার) এক পোস্টে ইসরো লিখেছে, এগুলো চাঁদের অনেক দূরের দিকের ছবি। বিক্রমের মধ্যকার ল্যান্ডার হ্যাজার্ড ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়েড্যান্স ক্যামেরা (এলএইচডিএসি) দিয়ে এই ছবিগুলো তোলা হয়েছে। এই বিশেষ ক্যামেরা চাঁদের মাটিতে অবতরণের জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজতে সাহায্য করে।

চাঁদের জমিতে পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অনেক ছোট বড় গর্ত। উঁচু ঢিবিও প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। ইসরোর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো পাথর বা গর্ত এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা স্থান আগে চিহ্নিত করা। তারপর সেখানে বিক্রমকে নামানো হবে।

বুধবার সন্ধ্যায় রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে পাখির পালকের মতো চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। চন্দ্রাভিযানের এই পর্যায়টিই সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। চার বছর আগে এই পর্যায়ে এসেই ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। তবে এবার তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি ইসরোর। বড় কোনো বিপত্তি না হলে চাঁদের মাটিতে শিগগির নামতে চলেছে বিক্রম। সেদিকে তাকিয়ে আছে পুরো ভারত।

ইসরোর এক কর্মকর্তা জানান, চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, সব সেন্সরসহ তার দুটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলেও ২৩ আগস্ট সেটি চাঁদের মাটিতে নামতে পারবে। তবে এর প্রোপালশন সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করতে হবে। নাহলে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে।

ইসরো রবিবার জানিয়েছে, ল্যান্ডার মডিউলটি সফলভাবে চাঁদের কাছাকাছি কক্ষপথে নামানো হয়েছে। সফল হলে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অবতরণ করবে ভারত। তবে অভিযান সফল হলে বিশ্বে ভারত হবে নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পারা চতুর্থ দেশ।

অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। বুধবার বিকেলে উৎক্ষেপণের ৪১ দিন পর ল্যান্ডার বিক্রমের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা। এই অভিযান সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণে নাম উঠে আসবে ভারতের।

২০১৯ সালেও চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ভারতের চন্দ্রযান ২। কিন্তু ব্যর্থ হয়। চাঁদে নামার একেবারে কাছাকাছি এসে বিধ্বস্ত হয় ল্যান্ডারটি।

এখান থেকে এবার চাঁদে নামবে বিক্রম। এটা কঠিন পরীক্ষা। কারণ গতবার চন্দ্রযান-২ এখানেই ভেঙে পড়েছিল। রাশিয়ার লুনা ২৫-ও একই রকমভাবে ভেঙে পড়েছে। তবে এবার ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরা গতবারের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাদের আশা, বিক্রম সফলভাবে চাঁদের পিঠে অবতরণ করবে।

আর এই চাঁদে নামা লাইভ দেখানো হবে ইসরোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইউটিউবে।

চন্দ্রযান-৩-এর সঙ্গে প্রতিয়োগিতায় নেমেছিল রাশিয়ার লুনা ২৫। কে আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি প্রথম স্পর্শ করতে পারবে, সেই প্রতিযোগিতা। চাঁদের শেষ কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য মাত্র একটা ধাপ বাকি ছিল লুনা ২৫-এর।

কিন্তু সেটা তারা আর পেরোতে পারল না। নিজের কক্ষপথ ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে যায় লুনা ২৫। তারপরই রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়।

পরে রাশিয়া জানায়, লুনা ২৫ চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়েছে। রাশিয়া শেষবার চাঁদে নেমেছিল ১৯৭৬ সালে। সেই সোভিয়েত আমলে লুনা ২৪ কোনও ভুল করেনি। কিন্তু এতবছর পর রাশিয়া যখন লুনা ২৫ চাঁদে পাঠালো, তখন তা সাফল্য পেল না। ১৭ হাজার রুবল খরচ করে রাশিয়া লুনা ২৫কে চাঁদে পাঠিয়েছিল। ১৩ বছর ধরে চেষ্টার ফলশ্রুতি ছিল এই অভিযান। কিন্তু তা সফল না হওয়ায় তা রাশিয়ার কাছে বড় ধাক্কা তো বটেই। লুনা ২৫ পারেনি, চন্দ্রযান-৩ পারলে তা হবে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। সূত্র: বিবিসি।