আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি তুরস্কের ভোটাররা আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন।
স্থানীয় সময় রোববার (১৪ মে) সকাল ৮টায় সকাল দেশজুড়ে একসঙ্গে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
এবারের নির্বাচনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানসহ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মোট তিন জন। বাকি দুইজন হলেন- কামাল কিলিচদারোগলু ও সিনান ওগান।
দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জন্য এই নির্বাচনকে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের জন্য দেশজুড়ে এক লাখ ৯১ হাজার ৮৮৫ ব্যালট বক্স দেশটির বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোট দিতে এরই মধ্যে ৬ কোটি ৪১ লাখ তুর্কি নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ লাখের বেশি প্রবাসী তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। দেশটির মোট ভোটারের মধ্যে ৪৯ লাখ ভোটার প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন তারা। নির্বাচনে মোট ২৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। পার্লামেন্টের ৬০০ আসনের বিপরীতে লড়াই করছেন ১৫১ স্বাধীন প্রার্থী।
নির্বাচনে পাঁচটি বহুদলীয় ব্লক রয়েছে: পিপলস অ্যালায়েন্স, নেশন অ্যালায়েন্স, অ্যান্সট্রাল অ্যালায়েন্স, লেবার অ্যান্ড ফ্রিডম অ্যালায়েন্স এবং ইউনিয়ন অফ সোশ্যালিস্ট ফোর্সেস অ্যালায়েন্স।
তুরস্কের প্রবল ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জন্য রোববারের নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় লড়াই। কারণ এবার তাকে মোকাবিলা করতে একজোট হয়েছে বিরোধী সবগুলো দল।
আল জাজিরা বলছে, এবারের যুগান্তকারী প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এটি দুই দশক ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দেশটিতে এতদিন অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এরদোয়ান। তবে দেশটিতে আজকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনেই এবার এরদোয়ানের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে। কেননা এবারের নির্বাচনে এরদোয়ান বিরোধীদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ছয়টি দল একতাবদ্ধ হয়েছে। দলগুলো এরদোয়ানের বিরুদ্ধে একক প্রার্থী হিসেবে বিরোধী নেতা কেমাল কিলিচদারুগলুকে দাঁড় করিয়েছেন।
গত শুক্রবার আঙ্কারায় বিশাল সংখ্যক সমর্থকের সামনে হাজির হন কেমাল কিলিচদারুগলু। তিনি সেখানে শান্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন। অন্যদিকে এরদোয়ান বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে তিনি তুরস্কের মাথা উঁচু করে রেখেছেন।
ইস্তাম্বুলের ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী পেরিত বলেন, এরদোয়ান যদি আবার জয়লাভ করেন, আমাদের সবার জীবন দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে উঠবে। পেরিতকে দেশটির স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোয়াজিচি ইউনিভার্সিটিতে একজন সরকারপন্থী ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে প্রায় দু’মাস জেলে থাকতে হয়েছে।
তুরস্কের সরকারি দেওয়া হিসেব মতে, দেশটিতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৪৪ শতাংশ। দেশটির নাজুক এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য এরদোয়ানের গৃহীত নীতিমালাকে ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়।
দেশের অর্থনীতির নাজেহাল অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধগতি, জোড়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু-এবার এরদোয়ানকে নাজুক করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এরদোয়ানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল। তিনি ছয়টি বিরোধী দল নিয়ে গঠিত জোট ‘টেবিল এবং সিক্সের’ প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়া আরও কিছু সরকারবিরোধী গ্রুপও কেমালের প্রতি সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে।
জনমত জরিপেও দেখা যাচ্ছে, এরদোয়ানের চেয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী জোটের প্রার্থী এগিয়ে আছেন। তাই এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা এরদোয়ান তার গদি আদৌ টেকাতে পারছেন কিনা। সূত্র : বিসিসি, আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি।