নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের তরুণদের চাকুরির পেছনে না ছুটে, চাকুরি দেয়ার মানসিকতা তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৯ মে) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পণ্য মেলায় উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ ভৌগোলিক সীমারেখায় অত্যন্ত ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের পরিবেশ এবং সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। শিল্প আমাদের গড়ে তুলতে হবে। শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সকলকে করতে হবে। সামান্য একটু কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ এবং নিজের সর্বনাশ করবেন না। আমরা চাই শিল্প গড়ে উঠুক। পাশাপাশি এদিকেও (পরিবেশ) দৃষ্টি দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু পণ্য উৎপাদন করলেই হবে না। পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য বাজারজাত করণের দিকেও নজর দিতে হবে। অল্প খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার।’ দেশের শিল্পখাতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯-২৩ এ বাংলাদেশ বদলে গেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। তারই পাশাপাশি শিল্পায়ন করতে হবে। মানুষের উদ্যম কাজে লাগাতে পারলেই সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে। এসএমই উদ্যোক্তারা একক বা যৌথভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। নারী-পুরুষকে সমানভাবে উদ্যোক্তা করতে পারলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেও চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়িয়ে চাকরি দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। নারীদের আরও উদ্যোক্তা হতে হবে। তাদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, কোভিড, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন না হলে দেশ আরও এগিয়ে যেত। এর ওপর গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ। পণ্য পরিবহন, সঞ্চালন, আমদানি ব্যয় অনেক বেড়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকার। আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমি কৃষির ওপর গুরুত্ব দিই, আদালা বাজেট রাখি। সে সময় প্রথম দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। ২০০৯ আবার ক্ষমতায় এসে দেখি দেশ খাদ্য সংকটে। এখানে নীতির ব্যাপারে একটা প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, যেদিন আমি সংসদে বলেছিলাম দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তখন বিরোধী দলের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না। তখন আমি উঠে বললাম, কারও কাছে ভিক্ষা করে দেশের মানুষ চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। আমরা সম্মান নিয়ে চলতে চাই। কারণ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই সোনার মাটি আর মানুষ দিয়েই তো আমি সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি মানুষের উদ্যোম এবং কর্ম ক্ষমতাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে এই সোনার মানুষগুলোই তো উপযুক্ত হবে এবং সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।
নারী-পুরুষ সমান তালে এগোলে দেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এখানে দেখছি উদ্যোক্তাদের ৬০ ভাগ নারী। এটা দেখে আমি খুব খুশি। কারণ একটা দেশের বড় অংশকে পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না। তাদের সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। উভয়ে সমান তালে এগোলে দেশ এগোবে। পুরুষরাও চাইলে স্ত্রী, মায়ের নামে উদ্যোগ নিয়ে এসএমই ঋণের সুযোগটা নিতে পারেন। কারণ তারা নিজের নামে তো ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন না। নারীদের নামে করলে পাবেন। আমি বলব, পুরুষরা চাইলে সে সুযোগটা নিতে পারেন। কারণ আমরা চাই, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বাড়ুক।
শ্রমিকদের প্রতি সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি যদি বেশি কাজ চান তাহলে তাদের কর্মপরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। শুধু হুকুম দিলে হয় না, যা হুকুম দিলে অর্জন করতে পারবেন, আপনি ভালবাসা দিলে তারচেয়ে বেশি অর্জন করতে পারবেন। আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে আরও বেশি কাজ আদায় করে নিতে পারবেন। কর্মপরিবেশের সঙ্গে শ্রমিকদের জীবনমান নিশ্চিত করতে হবে।
দেশের সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশ ভৌগোলিক সীমারেখায় অত্যন্ত ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। সেক্ষেত্রে সবকিছু স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। শিল্প আমাদের গড়ে তুলতে হবে, তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সকলকে করতে হবে। সামান্য একটু কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ এবং নিজের সর্বনাশ করবেন না। আমরা চাই শিল্প গড়ে উঠুক, পাশাপাশি পরিবেশের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম, এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানসহ অনেকে।
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী একাদশ জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) পণ্যমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ৭ দিনব্যাপী এ মেলা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০২৩ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন: বর্ষসেরা নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা স্বপ্না রানী সেন, বর্ষসেরা পুরুষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মো. শাফাত কাদির, বর্ষসেরা পুরুষ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মো. ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া, বর্ষসেরা ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি, বর্ষসেরা পুরুষ মাঝারি উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেন মাসুদ, বর্ষসেরা মাঝারি নারী উদ্যোক্তা সীমা সাহা ও বর্ষসেরা স্টার্টআপ মদিনা আলী।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















