Dhaka বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাকসুতে জয়-পরাজয় কিছু নেই, এখানে জুলাই প্রজন্ম, ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিজয়ী : ভিপি সাদিক কায়েম

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) জয় বা পরাজয় কিছু নেই। এখানে জুলাই প্রজন্ম, ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। একই সঙ্গে বিজয়ী হয়েছে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এবং শহীদদের স্বপ্ন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাদিক কায়েম এসব কথা বলেন।

শুরুতেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্র ও মুক্তির সংগ্রামে প্রাণ দেওয়া শহীদদের। তিনি বলেন, আমরা স্মরণ করছি জুলাই বিপ্লবের সব শহীদকে, যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আজ বাংলাদেশ পেয়েছি এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে দাঁড়িয়ে নির্বাচন করছি। একইসঙ্গে আমরা স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ, আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের শহীদদের। বিশেষভাবে স্মরণ করছি শহীদ আবরারকে, যিনি ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন তাঁদের সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

সাদিক কায়েম বলেন, আমি ডাকসুর ভিপি পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। আমি চাই শিক্ষার্থীরা আমাকে ভাই, বন্ধু কিংবা ছাত্র হিসেবে দেখুক। আমার ব্যক্তিত্ব, চরিত্র বা আচরণে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাইরে, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক যেকোনো সমস্যায় আমি পাশে থাকব, ইনশাআল্লাহ।

ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার জানিয়ে সাদিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাদিক কায়েম, এসএম ফরহাদ, মহিউদ্দিন খানসহ আমাদের প্যানেলের ওপর যে আমানত রেখেছে, আমরা সেই আমানতের যথাযথ হক আদায় করব, ইনশাআল্লাহ। স্বপ্নের যে ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।

তিনি বলেন, আমি চাই না শিক্ষার্থীরা আমাকে শুধু ডাকসুর ভিপি হিসেবে দেখুক। আমি চাই তারা আমাকে ভাই, বন্ধু, সহপাঠী হিসেবেই জানুক। আমার আচরণ বা ভাষা যেন কোনোভাবেই অহঙ্কারের প্রকাশ না করে, সেটি আমি গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে সাদিক বলেন, আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয় হোক একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউট। এখানে প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষার্থী একটি উন্নত অ্যাকাডেমিক পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। গবেষণার সুযোগ থাকবে, আবাসনের নিশ্চয়তা থাকবে, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা থাকবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস। ধর্ম, মত, পথ নির্বিশেষে সবাই মিলে আমরা একটি মাল্টিকালচারাল পরিবেশ গড়ে তুলব।

ভিপি নির্বাচিত সাদিক কায়েম নারী শিক্ষার্থীদের অবদানকেও বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন সফল করার ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। জুলাই বিপ্লবেও আমাদের বোনেরা সাহস জুগিয়েছেন। তাঁদের সেই আত্মত্যাগ ও অংশগ্রহণ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি ক্যাম্পাস চাই, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য একটি উন্নত পরিবেশ পাবে। গবেষণার সুযোগ থাকবে, আবাসন নিশ্চিত হবে, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা থাকবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হবে নিরাপদ, সমানাধিকারের ক্যাম্পাস।

নারী শিক্ষার্থীদের অবদানকে বিশেষভাবে স্বীকার করে সাদিক বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সফল আয়োজন এবং জুলাইবিপ্লবে আমাদের বোনদের সাহসী অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই অর্জন তাদেরও সমানভাবে প্রাপ্য।

তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তাদের কেউই প্রতিপক্ষ নন। তারা সবাই এখন আমাদের পরামর্শদাতা। আমরা মত-পথ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ অংশে দায়িত্ব পালনের সময় এক গণমাধ্যমকর্মীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সাদিক কায়েম বলেন, আমি তার পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে যেসব সাংবাদিক এই নির্বাচন কাভার করেছেন, তাদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, এই দায়িত্ব এক কঠিন পরীক্ষা। আমরা চাই, এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং একটি আধুনিক, মানবিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আমরা সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনের শেষে তিনি দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এই বিজয় কোনো আনন্দ নয়, বরং একটি পরীক্ষা। আমরা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাই। শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, নিরাপদ ও আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

১০ বছরের মধ্যে ক্ষমতায় না গেলে রাজনীতি ছেড়ে দেব : নাহিদ ইসলাম

ডাকসুতে জয়-পরাজয় কিছু নেই, এখানে জুলাই প্রজন্ম, ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিজয়ী : ভিপি সাদিক কায়েম

প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) জয় বা পরাজয় কিছু নেই। এখানে জুলাই প্রজন্ম, ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। একই সঙ্গে বিজয়ী হয়েছে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা এবং শহীদদের স্বপ্ন।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাদিক কায়েম এসব কথা বলেন।

শুরুতেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্র ও মুক্তির সংগ্রামে প্রাণ দেওয়া শহীদদের। তিনি বলেন, আমরা স্মরণ করছি জুলাই বিপ্লবের সব শহীদকে, যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আজ বাংলাদেশ পেয়েছি এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে দাঁড়িয়ে নির্বাচন করছি। একইসঙ্গে আমরা স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শহীদ, আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের শহীদদের। বিশেষভাবে স্মরণ করছি শহীদ আবরারকে, যিনি ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন তাঁদের সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

সাদিক কায়েম বলেন, আমি ডাকসুর ভিপি পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। আমি চাই শিক্ষার্থীরা আমাকে ভাই, বন্ধু কিংবা ছাত্র হিসেবে দেখুক। আমার ব্যক্তিত্ব, চরিত্র বা আচরণে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাইরে, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক যেকোনো সমস্যায় আমি পাশে থাকব, ইনশাআল্লাহ।

ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার জানিয়ে সাদিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাদিক কায়েম, এসএম ফরহাদ, মহিউদ্দিন খানসহ আমাদের প্যানেলের ওপর যে আমানত রেখেছে, আমরা সেই আমানতের যথাযথ হক আদায় করব, ইনশাআল্লাহ। স্বপ্নের যে ক্যাম্পাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।

তিনি বলেন, আমি চাই না শিক্ষার্থীরা আমাকে শুধু ডাকসুর ভিপি হিসেবে দেখুক। আমি চাই তারা আমাকে ভাই, বন্ধু, সহপাঠী হিসেবেই জানুক। আমার আচরণ বা ভাষা যেন কোনোভাবেই অহঙ্কারের প্রকাশ না করে, সেটি আমি গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে সাদিক বলেন, আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয় হোক একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউট। এখানে প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষার্থী একটি উন্নত অ্যাকাডেমিক পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। গবেষণার সুযোগ থাকবে, আবাসনের নিশ্চয়তা থাকবে, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা থাকবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস। ধর্ম, মত, পথ নির্বিশেষে সবাই মিলে আমরা একটি মাল্টিকালচারাল পরিবেশ গড়ে তুলব।

ভিপি নির্বাচিত সাদিক কায়েম নারী শিক্ষার্থীদের অবদানকেও বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন সফল করার ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। জুলাই বিপ্লবেও আমাদের বোনেরা সাহস জুগিয়েছেন। তাঁদের সেই আত্মত্যাগ ও অংশগ্রহণ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি ক্যাম্পাস চাই, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য একটি উন্নত পরিবেশ পাবে। গবেষণার সুযোগ থাকবে, আবাসন নিশ্চিত হবে, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা থাকবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হবে নিরাপদ, সমানাধিকারের ক্যাম্পাস।

নারী শিক্ষার্থীদের অবদানকে বিশেষভাবে স্বীকার করে সাদিক বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সফল আয়োজন এবং জুলাইবিপ্লবে আমাদের বোনদের সাহসী অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই অর্জন তাদেরও সমানভাবে প্রাপ্য।

তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তাদের কেউই প্রতিপক্ষ নন। তারা সবাই এখন আমাদের পরামর্শদাতা। আমরা মত-পথ নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ অংশে দায়িত্ব পালনের সময় এক গণমাধ্যমকর্মীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সাদিক কায়েম বলেন, আমি তার পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে যেসব সাংবাদিক এই নির্বাচন কাভার করেছেন, তাদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, এই দায়িত্ব এক কঠিন পরীক্ষা। আমরা চাই, এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং একটি আধুনিক, মানবিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আমরা সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনের শেষে তিনি দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এই বিজয় কোনো আনন্দ নয়, বরং একটি পরীক্ষা। আমরা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চাই। শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, নিরাপদ ও আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।