Dhaka শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাল রুপি-টাকা তৈরি করে রমরমা মাদক ব্যবসায় গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার কাজীপুর এলাকার কুদরত উল্লাহ মির্জার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন রবিন। ২০০৭ সাল থেকে তৈরি করতো জাল রুপি। মাঝে কিছুদিন বন্ধের পর ২০২০ সালে আবার শুরু করে। এসব রুপি দিয়ে ভারত থেকে মাদক, শাড়িসহ বিভিন্ন সামগ্রী কিনতো সাজ্জাদ হোসেন চক্র। জাল টাকা তৈরি করেও মাদক চোরাচালান করতো তারা।

সাজ্জাদসহ এ জালটাকা তৈরি ও বাজারজাত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার বাকি দুইজন হলেন মাহি ও সাদমান হোসেন হৃদয়।

শুক্রবার (০৪ আগস্ট) লালবাগ থানার আরেনডি রোডস্থ শ্মশানঘাট কালিমন্দির এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে এক লাখ জালরুপি, ১০ লাখ ২০ হাজার জালটাকা এবং এগুলো তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। চক্রটি এখন পর্যন্ত পাঁচ কোটির বেশি ভারতীয় জালরুপি বাজারজাত করেছে।

শনিবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন।

তিনি বলেন, শুক্রবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় লালবাগ শ্মশানঘাট কালীমন্দিরের সামনে থেকে মো. মাহিকে বাংলাদেশি ১ হাজার টাকার ৫০টি জাল নোটের ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাহির মামা সাজ্জাদ হোসেন রবিন ও সাদমান হোসেন হৃদয়কে কেরানীগঞ্জের কানারগাঁওয়ের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে বাংলাদেশি ১ হাজার টাকার ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার ৯৭০টি জাল নোট এবং ভারতীয় ৫০০ রুপি মূল্যমানের ১ লাখ রুপির ২০০টি জাল রুপিসহ জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরির ল্যাপটপ, প্রিন্টার, একটি স্ক্রিন প্রিন্ট ফ্রেম, জালনোট তৈরির জন্য ২০০ পিচ সাদা কাগজ, বিভিন্ন রংয়ের চারটি কার্টিজ, কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন রবিন পেশায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার। ২০০৭ সালে জাল টাকা তৈরিতে ব্যর্থ রবিন করোনাকালে ব্যবসায় ধ্বস নামায় জাল টাকার কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পলাতক আসামি হুমায়ুন কবির সিকদার (৪২) ও মো. শফিউল্লাহ্ সিকদার রবিনকে সার্বিক সহযোগিতা করে। হুমায়ুন ও শফিউল্লাহ ২০০৭ সাল থেকেই জাল টাকা তৈরির কারবারে জড়িত। জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরিতে রবিনকে সহযোগিতা করে সাদমান হোসেন হৃদয়।

ডিসি জাফর হোসেন বলেন, রবিন জাল টাকার চেয়ে রুপিই বেশি তৈরি করতেন। এখন পর্যন্ত রবিন জাল টাকা ছাড়াও প্রায় পাঁচ কোটি রুপি তৈরি করে চক্রকে সরবরাহ করেছে। সীমান্তে চোরাচালানে রুপি ও টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবার চালান আনার ক্ষেত্রে রুপির অর্ডার দিতেন হুমায়ুন ও শফিউল্লাহ। সর্বশেষ টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান আনার জন্য জাল টাকা তৈরির অর্ডার দেয় তারা। সেটিই তৈরি করেছিলেন রবিন। তবে সরবরাহের আগেই ধরা পড়ে যান তিনি।

উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন বলেন, এক লাখ রুপি ২৭ হাজারে এবং এক লাখ টাকা মাত্র ১০ হাজারে চক্রকে সরবরাহ করতেন রবিন। তৈরি করা জাল টাকায় নিজের কারখানার শ্রমিকদের বেতনও দিতেন রবিন। রবিন এর আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। হুমায়ুনও ২০২০ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। রবিন হৃদয় হচ্ছেন সহোদর, মাহি সম্পর্কে ভাগ্নে। জাল টাকার মূল কারবারি হুমায়ুন ও শফিউল্লাহসহ চক্রের পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

জাল মুদ্রার তৈরি সম্পর্কে ডিসি জাফর বলেন, চক্রটি দুইভাবে কাজ করে। মাল্টিপ্ল্যান মার্কেট থেকে তারা প্রিন্টার, কালি ও থ্রেড পেপারস সংগ্রহ করে। এরপর তারা সফটওয়ারে ফেলে কালার প্রিন্ট করে। আসল এক হাজার টাকার নোটে ৫ মিলি নিরাপত্তা সুতা থাকে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হলোগ্রাম থাকে। তাছাড়া আসল টাকা হাতে নিলেই বোঝা যায়। আমাদের আসলে সচেতন হওয়া উচিত। জাল টাকার কারবারে বন্ধে আসল টাকা চেনাও ভোক্তা বা এর ব্যবহারকারীর সতর্কতাও জরুরি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

জাল রুপি-টাকা তৈরি করে রমরমা মাদক ব্যবসায় গ্রেফতার ৩

প্রকাশের সময় : ০৮:০৬:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার কাজীপুর এলাকার কুদরত উল্লাহ মির্জার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন রবিন। ২০০৭ সাল থেকে তৈরি করতো জাল রুপি। মাঝে কিছুদিন বন্ধের পর ২০২০ সালে আবার শুরু করে। এসব রুপি দিয়ে ভারত থেকে মাদক, শাড়িসহ বিভিন্ন সামগ্রী কিনতো সাজ্জাদ হোসেন চক্র। জাল টাকা তৈরি করেও মাদক চোরাচালান করতো তারা।

সাজ্জাদসহ এ জালটাকা তৈরি ও বাজারজাত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার বাকি দুইজন হলেন মাহি ও সাদমান হোসেন হৃদয়।

শুক্রবার (০৪ আগস্ট) লালবাগ থানার আরেনডি রোডস্থ শ্মশানঘাট কালিমন্দির এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে এক লাখ জালরুপি, ১০ লাখ ২০ হাজার জালটাকা এবং এগুলো তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। চক্রটি এখন পর্যন্ত পাঁচ কোটির বেশি ভারতীয় জালরুপি বাজারজাত করেছে।

শনিবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জাফর হোসেন।

তিনি বলেন, শুক্রবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় লালবাগ শ্মশানঘাট কালীমন্দিরের সামনে থেকে মো. মাহিকে বাংলাদেশি ১ হাজার টাকার ৫০টি জাল নোটের ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাহির মামা সাজ্জাদ হোসেন রবিন ও সাদমান হোসেন হৃদয়কে কেরানীগঞ্জের কানারগাঁওয়ের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে বাংলাদেশি ১ হাজার টাকার ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার ৯৭০টি জাল নোট এবং ভারতীয় ৫০০ রুপি মূল্যমানের ১ লাখ রুপির ২০০টি জাল রুপিসহ জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরির ল্যাপটপ, প্রিন্টার, একটি স্ক্রিন প্রিন্ট ফ্রেম, জালনোট তৈরির জন্য ২০০ পিচ সাদা কাগজ, বিভিন্ন রংয়ের চারটি কার্টিজ, কোটাসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন রবিন পেশায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার। ২০০৭ সালে জাল টাকা তৈরিতে ব্যর্থ রবিন করোনাকালে ব্যবসায় ধ্বস নামায় জাল টাকার কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পলাতক আসামি হুমায়ুন কবির সিকদার (৪২) ও মো. শফিউল্লাহ্ সিকদার রবিনকে সার্বিক সহযোগিতা করে। হুমায়ুন ও শফিউল্লাহ ২০০৭ সাল থেকেই জাল টাকা তৈরির কারবারে জড়িত। জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরিতে রবিনকে সহযোগিতা করে সাদমান হোসেন হৃদয়।

ডিসি জাফর হোসেন বলেন, রবিন জাল টাকার চেয়ে রুপিই বেশি তৈরি করতেন। এখন পর্যন্ত রবিন জাল টাকা ছাড়াও প্রায় পাঁচ কোটি রুপি তৈরি করে চক্রকে সরবরাহ করেছে। সীমান্তে চোরাচালানে রুপি ও টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবার চালান আনার ক্ষেত্রে রুপির অর্ডার দিতেন হুমায়ুন ও শফিউল্লাহ। সর্বশেষ টেকনাফ থেকে ইয়াবার চালান আনার জন্য জাল টাকা তৈরির অর্ডার দেয় তারা। সেটিই তৈরি করেছিলেন রবিন। তবে সরবরাহের আগেই ধরা পড়ে যান তিনি।

উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন বলেন, এক লাখ রুপি ২৭ হাজারে এবং এক লাখ টাকা মাত্র ১০ হাজারে চক্রকে সরবরাহ করতেন রবিন। তৈরি করা জাল টাকায় নিজের কারখানার শ্রমিকদের বেতনও দিতেন রবিন। রবিন এর আগে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। হুমায়ুনও ২০২০ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। রবিন হৃদয় হচ্ছেন সহোদর, মাহি সম্পর্কে ভাগ্নে। জাল টাকার মূল কারবারি হুমায়ুন ও শফিউল্লাহসহ চক্রের পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

জাল মুদ্রার তৈরি সম্পর্কে ডিসি জাফর বলেন, চক্রটি দুইভাবে কাজ করে। মাল্টিপ্ল্যান মার্কেট থেকে তারা প্রিন্টার, কালি ও থ্রেড পেপারস সংগ্রহ করে। এরপর তারা সফটওয়ারে ফেলে কালার প্রিন্ট করে। আসল এক হাজার টাকার নোটে ৫ মিলি নিরাপত্তা সুতা থাকে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হলোগ্রাম থাকে। তাছাড়া আসল টাকা হাতে নিলেই বোঝা যায়। আমাদের আসলে সচেতন হওয়া উচিত। জাল টাকার কারবারে বন্ধে আসল টাকা চেনাও ভোক্তা বা এর ব্যবহারকারীর সতর্কতাও জরুরি।