নিজস্ব প্রতিবেদক :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, সাভার, বাড্ডা ও রংপুরের আবু সাঈদের মতো আলোচিত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ ও প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আল নোমান।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, রংপুরের আলোচিত আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়া হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলাসহ উত্তরা, যাত্রাবাড়ীর নির্মম হত্যাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে বিচারের জন্য নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে যে, কত দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা যায় তার ওপর।
তাজুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া গণহত্যার বিচার এমনভাবে করা হবে, যেন বিশ্বব্যাপী কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচার আগে করা হবে।
তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকায় ঘটে যাওয়া নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে। বিশেষভাবে রংপুরের সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচারও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিচারটি এমনভাবে সম্পন্ন করা হবে যাতে দেশে ও বিদেশে এর বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকে।
তিনি বলেন, গণবিপ্লবের সময় অনেকেই শহীদ হয়েছেন এবং অনেকের অঙ্গহানি ঘটেছে। তাই জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তি জরুরি। তদন্ত সংস্থাকে অপরাধের সব তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, জনগণ চায় যে বিচার দ্রুত শেষ হোক এবং ত্রুটিহীন হোক, যাতে কোনো সমালোচনা বা প্রশ্ন উঠতে না পারে। তিনি উল্লেখ করেন, বিচার চললেও গোটা দুনিয়ায় কেউ যেন না বলতে পারে যে বিচারটি আগের মতো অবৈধ প্রক্রিয়ায় হয়েছে। এজন্য তিনি সরকারের কাছে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হলে কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালটা পুনর্গঠন হোক। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হলে কাজগুলো খুব দ্রুততর গতিতে এগোবে। আমাদের প্রস্তুতিগুলো এগোবে। সে চেষ্টা অব্যাহত আছে, মন্তব্য করেছেন চিফ প্রসিকিউটর।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে নিরপেক্ষ বিচারক লাগবে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিচারক লাগবে। হাইকোর্ট ডিভিশনে বিচারক আছেন, যারা বিগত সরকারের আমলে নিয়োজিত হয়েছেন। স্বাভাবকিভাবে তাদের যদি ট্রাইব্যুনালে আনা হয়, তাহলে নানা দিক থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমরা চাই, এমন সব বিচারক নিয়ে আসা হোক, যাদের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই। সেকারণে সরকার নানান দিক বিবেচনা করছে। এ জন্য সময় লাগছে।
কোন বিচারগুলো আগে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা চাচ্ছি যেগুলো সবচাইতে বেশি সেনসেটিভ, সেগুলো আগে করতে। ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় বড় হত্যাকাণ্ড যেগুলো হয়েছে, যেমন উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মিরপুর ও আশুলিয়াতে হয়েছে, যেগুলো নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং জাজ্বল্যমান সেগুলো আলাদা আলাদা করে তদন্ত করে দ্রুত এগুলো বিচারের জন্য আগে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। ঢাকার বাইরে রংপুরের আবু সাঈদ। সেটাও প্রায়োরিটি বেসিসে চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত সংস্থার কাছে বা প্রসিকিউশনের কাছে যেগুলো আসছে, সেগুলো সরাসরি মামলা না। সেগুলো অভিযোগ আকারে আসছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে আমরা যখন ট্রাইব্যুনালের কাছে পিটিশন আকারে উপস্থাপন করব, তখন আন্তর্জজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের অধীনে মামলা হবে। সে মামলা হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযোগে কারো নাম আসলে তিনি আসামি হয়ে যাচ্ছেন না। ম্যাজিস্ট্রট কোর্ট বা থানার ব্যাপার আলাদা। আমরা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করব। এখানে ভুল-ভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।