ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু বলেন, গত ১৫ বছর দেশে একটি স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। ছাত্রলীগের তাণ্ডবের কারণে হাজারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের নারানদিয়া জয়নদ্দীন মাতুব্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার দেশের সব সেক্টরে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়েছে, যা বৈষম্য এবং দুর্নীতির সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার সরকার দেশে চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষা, প্রশাসন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে আওয়ামী লীগের সদস্যদের নিয়োগ দিতে ডিএনএ ও রক্ত পরীক্ষার মতো পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই দলীয়করণের কারণে ছাত্ররা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে, যা তাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ ছিল।
শামা ওবায়েদ বলেন, শিক্ষকরা যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি না ঢোকায় এবং শিক্ষার পবিত্রতা বজায় রাখে। শিক্ষকদের কাজ শুধু শিক্ষাদান, রাজনীতি নয়।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দুরাবস্থার জন্য হাসিনা সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘যে বই আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ে, তা বিদেশে তৈরি হয়। আমরা কেন আমাদের বই নিজে তৈরি করতে পারি না?’ তিনি হাসিনা সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, শিক্ষা খাতে দুর্নীতি হয়েছে এবং বাজেটের ঘাটতি ছিল, যার ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শামা ওবায়েদ শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা এখানে আছেন তারা রাজনীতিকে বাইরে রেখে, দল-মতকে বাইরে রেখে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করে শুধু শিক্ষার জন্যে কাজ করার চেষ্টা করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনও রাজনীতি ঢোকাবেন না।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এখন নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। আর নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের ভাই-বোনদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। যদি শিক্ষিত করতে হয়, তাহলে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে ছেলে-মেয়েদেরকে ভালো শিক্ষা দিতে হবে।
শামা ওবায়েদ আরও বলেন, আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমি এই স্কুলের শিক্ষকদের অনুরোধ করবো আপনারা ৩১ দফা পড়বেন। ছেলে-মেয়েদেরকে আমাদের ইয়াং জেনারেশনকে বলবেন। শিক্ষকরা রাজনাতিতে জড়িয়ে পড়লে যেমন শিক্ষার ক্ষতি হবে, তেমনি সমাজেরও ক্ষতি হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার এটা ভাবতে কষ্ট হয় আমার ছেলে-মেয়েরা যে বই পড়ে সেই বই তৈরি হয় অন্য দেশে। কেন বাংলাদেশে আমাদের কি লোকজন নেই? আমরা কি স্বাবলম্বী না? আমরা অবশ্যই আমাদের পাঠ্যবই তৈরি করতে পারি। যেহেতু নতজানু ফ্যাসিবাদী একটি সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারা এ দেশের ছেলে-মেয়েদেরকে কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না, দেয় নাই, তাই এ ব্যবস্থা করে রেখেছিল। শিক্ষাখাতে তারা বরাদ্দ দিয়েছিল অপ্রতুল।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছর দেশে একটি স্বৈরাচারি সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধংস করে দিয়ে গেছে। লাস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। আর হাসিনার নির্দেশে সেই আন্দোলনে নামা বহু ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
শামা ওবায়েদ বলেন, সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার ও রাজনীতিবিদসহ সবাইকে হাসিনার রোষানলে পড়তে হয়েছে। কেউ মুখ খুলতে পারে নাই। কথা বললে খুন, গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে।
শামা ওবায়েদ বলেন, আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। নির্বাচন ছাড়া, একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত দল ছাড়া বাংলাদেশে একটি গুনগত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতার ছেলে নুরুল ইসলাম এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুর রহমান, সালথা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার খায়রুল বাসার, সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আসাদ মাতুব্বর প্রমুখ।