আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি রাজধানী বেইজিং-এ অবতরণ করে।
রয়টার্সের ভিডিও ফুটেজ অনুসারে, পুতিন এবং তার সফরসঙ্গীরা মঙ্গলবার সকালে বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছেন। তাকে অভ্যর্থনা জানান চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তিনি ‘সীমাহীন’ অংশিদারিত্ব আরও শক্তিশালী করতে আলোচনা করবেন এবং বল্টে অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ফোরামে অংশ নিবেন। এই মাসের শুরুতে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র কিরগিজস্তান সফর করেছিলেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, মিসর, সার্বিয়া ও চিলিসহ অনেক দেশের নেতা জড়ো হয়েছেন বেইজিংয়ে।
এএফপি বলছে, মঙ্গলবার শুরু হতে যাওয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ফোরামে অংশ নিতে চীন ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এশীয় পরাশক্তি এই দেশটির আশা, এই সম্মেলন বেইজিংয়ের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
এদিকে সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন তালিকার শীর্ষে রয়েছেন এবং ইউক্রেনে আক্রমণের জেরে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্নতার মধ্যে পড়ার পর বড় কোনও বৈশ্বিক শক্তিধর দেশে এটিই পুতিনের প্রথম সফর।
বার্তাসংস্থা বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন তার কমিউনিস্ট প্রতিবেশীর সাথে ইতোমধ্যেই শক্তিশালী সম্পর্ক আরও জোরদার করার মিশনে রয়েছেন। যদিও চীনের কাছে দিনে দিনে মস্কো ক্রমবর্ধমানভাবে ছোট অংশীদারে পরিণত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য রাশিয়ান এই প্রেসিডেন্টের চীন সফরের সময় কয়েকটি বড় চমক আশা করছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, বুধবার এই দুই নেতা বিআরআই ফোরামের ‘সাইডলাইনে’ দেখা করবেন।
মূলত এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন বৈশ্বিক গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য পাচ্ছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ। তবে পরিস্থিতি যেটিই হোক চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে চাইছে রাশিয়া।
মূলত ইউক্রেনের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে রাশিয়াকে বহুবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর রাশিয়ার মতো চীনও হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রাথমিক কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী’। তাই এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছে।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন পুতিন। এর আগে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া এবং লাওসের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই সফরের মধ্য দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুই নেতার বৈঠকে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। এর বাইরে ক্রেমলিন বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি।
রুশ নেতার চীন সফরকালে কিছু বড় চমক আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা পুতিন-শির আসন্ন বৈঠকটিকে মস্কোর প্রতি বেইজিংয়ের সমর্থনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
এই সম্মেলন এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের পাশাপাশি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্য রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর পরিস্থিতি পাল্টে যা যুদ্ধে রূপ নেয়। এ যুদ্ধে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয় পশ্চিমারা। তারা রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পুতিন এই প্রথম কোনো বৈশ্বিক শক্তিধর দেশ সফরে গেলেন।
২০১৩ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগ নেন শি জিনপিং। এতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি এশিয়া থেকে ইউরোপজুড়ে বিস্তৃত। শতাধিক দেশ রেলপথ, বন্দর, মহাসড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এটিকে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধী প্রকল্প হিসেবে দেখে অনেকে।